মণীশ কীর্তনিয়া: একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি। মেঘালয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝড়ের মোকাবিলা করতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে এবার আশ্রয় নিতে হল রক কনসার্টের। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি মেঘালয়ের ৬০ আসনে ভোট। শুক্রবার ছিল প্রচারের শেষ দিন। মেঘালয়ে বিজেপির ডুবন্ত নৌকা বাঁচাতে শিলংয়ে শেষবেলায় রোড-শো করতে হল প্রধানমন্ত্রীকে। তার আগে রাস্তা আটকে মঞ্চ তৈরি করে শুক্রবার সকাল থেকে চলল রক কনসার্ট। সঙ্গে গারো-খাসি ও জয়ন্তীয়া থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল পেশাদার ডান্সারদের। স্বতঃস্ফূর্ততা বোঝাতে এসব করা হলেও মেঘালয়ে গত পাঁচ বছরে বিজেপির নিজের বলতে প্রায় কিছুই নেই। মাত্র ৩ জন বিধায়ক।
আরও পড়ুন-দিদির দূত আর নবান্নে জমা পড়া অভিযোগ নিরসনে ২৭ ফেব্রুয়ারি সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী
জোটসঙ্গী শাসক দল এনপিপির সঙ্গে মিলে গত পাঁচ বছরে মেঘালয়ের সাড়ে সর্বনাশ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। ভরপুর দুর্নীতির অভিযোগ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের এই পর্বে আপাতত তাদের জোট নেই। যে যার মতো আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছর এই সরকারের রিমোট কন্ট্রোল ছিল বিজেপির অদৃশ্য হাতেই। কনরাড সাংমা ‘পাপেট সিএম’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে এনে কনসার্ট ও রোড-শো করে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি। তার কারণ এবার মেঘালয়ে সরকার তৈরির জায়গায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত কয়েক মাসে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মেঘালয়ে চষে বেড়িয়েছেন। মুকুল সাংমা, চার্লস পিনগ্রোপ, জেমস লিংডোদের সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনকে মজবুত করেছেন, একই সঙ্গে যেভাবে মেঘালয়বাসীর মন জয় করেছেন তা তুলনাহীন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিটি কর্মসূচিতে যেভাবে রেকর্ড বাঁধভাঙা ভিড় হয়েছে তাতে স্বাভাবিক ভাবেই ভয় ধরিয়েছে শাসক এনপিপি ও বিজেপি শিবিরে। তার ফলস্বরূপ এই মেগা প্রচার কনসার্ট করতে হল বিজেপিকে। মাঠে নামতে হল মোদিকে। এত করেও কোনও লাভ হবে কী! এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিজেপির অন্দরেই।
আরও পড়ুন-মাধ্যমিক : সাবোতাজের চেষ্টা করেও মুখ পুড়ল বিজেপির
উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও যে মেঘালয়ে হয়নি তা মেঘালয়বাসী মাত্রেই হাড়ে-মজ্জায় জানেন। গত কয়েক মাসে মেঘালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে চষে বেড়িয়ে যা উপলব্ধি হয়েছে আর যা দেখেছি তাতে চারদিকে শুধুই দারিদ্র্য আর অনুন্নয়নের ছাপ। মেঘালয়ের অনেকগুলি বিধানসভায় সংখ্যালঘুদের বসবাস। এইসব জায়গায় উন্নয়ন কী জিনিস কেউ জানে না। গারো-খাসি-জয়ন্তীয়া এই তিনটি পাহাড়ি এলাকা হল মেঘালয়ের তিনটি পাঁজর। প্রতিটি জায়গাই চূড়ান্ত অবহেলিত। শুধু শিলং মানেই মেঘালয় নয়। আসল মেঘালয়কে বুঝতে হলে গ্রামের সাংঘাতিক ভাঙাচোরা বড়-বড় গর্ত-সংবলিত তথাকথিত রাস্তা দিয়ে যেতে হবে মেঘালয়ের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে। যেখানে গত পাঁচ বছরে পা পড়েনি কোনও এনপিপি-বিজেপি নেতা-মন্ত্রীর।
আরও পড়ুন-রেপো রেট : আবার বাড়ছে মধ্যবিত্তের অশনি সঙ্কেত
পরিবর্তন ছাড়া গতি নেই। সাধে কী আর তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এনপিপি-বিজেপি গত পাঁচ বছরে এই রাজ্যকে পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের জন্য বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মডেলে ‘উই কার্ড’ চালুর কথা বলেছেন। সরকারে এলে বাংলার সব স্কিম মেঘালয়ে চালুর কথা বলেছেন। আর বলেছেন, দিল্লি-গুজরাট-অসম থেকে নয়, মেঘালয় চালাবে ভূমিপুত্ররাই। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আগামী ২ মার্চ ফলাফল বেরোনোর পর নতুন সূর্য উঠবে মেঘের রাজ্যে। তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরে নতুন করে পথ চলা শুরু করবে মেঘালয়।