চলছে বিয়ের মরশুম। বিয়ের পরেই নবদম্পতিরা কয়েকদিনের জন্য যাবেন হানিমুনে। এখন অনেকে বহু আগে থেকেই সেরে রাখেন প্ল্যানিং। দিঘা, পুরী, দার্জিলিং তো পরিচিত ডেস্টিনেশন। মনের মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে অনেকেই যেতে চাইবেন অফ বিট কোনও জায়গায়। যেখানে নেই অকারণ ভিড়, কোলাহল। যেখানে নির্জন নিরিবিলির মধ্যে কাটানো যায় অন্তরঙ্গ কিছু সময়। বিনিময় করা যায় মনের ভাব। তেমন একটি জায়গা উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি গ্রাম ইচ্ছেগাঁও। অবস্থান হিমালয়ের কোলে ৫,৮০০ ফুট উচ্চতায়। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ৯০ কিলোমিটার এবং কালিম্পং থেকে মোটামুটি ১৫ কিলোমিটার দূরে। শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার। ইছে থেকে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে ইচ্ছে। লেপচা ভাষায় ‘ইচ্ছেগাঁও’ (Icche Gaon) শব্দের অর্থ পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থিত গ্রাম। ইচ্ছেগাঁও-এ (Icche Gaon) আছে আকর্ষণীয় কটেজ। কটেজের লোকেরা সদা প্রস্তুত অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য৷ আছে হাতেগোনা কয়েকটি কাঠের বাড়ি। সেইসঙ্গে কয়েকটি হোম-স্টে। মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে এখান থেকে দেখা মিলবে কাঞ্চনজঙ্ঘার। বলা যায়, কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই এখানকার মূল আকর্ষণ। নবদম্পতি ছাড়াও যাঁরা নিরিবিলি পাহাড়ঘেরা দূষণহীন প্রকৃতির মাঝে কয়েকটা দিন কাটাতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা ইচ্ছেগাঁও। রঙিন অর্কিড আর পাহাড়ি ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে চারদিক। এখান থেকে সিকিমের পাহাড় ও দার্জিলিং শহর দেখতে পাওয়া যায়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, যেন খুব যত্ন নিয়ে ক্যানভাসে একটি ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। সাজানো-গোছানো এই পাহাড়ি গ্রাম ইচ্ছেগাঁওয়ে ঘোরা যায় পায়ে হেঁটে। আপনমনে। স্পর্শ করবে না বিন্দুমাত্র ক্লান্তি। নেই কোলাহল। এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শুধু অপার শান্তি। সূর্যের আলো পাহাড়ের গায়ে বিচ্ছুরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইচ্ছেগাঁওয়ের আনাচ-কানাচে। অদ্ভুত সুন্দর লাগে দেখতে। ডালে ডালে উড়ে বেড়ায় নানা রকমের পাখি। সারাদিন চলতে থাকে কিচিরমিচির। এই গ্রামের পূর্ব দিকে রয়েছে সিলারিগাঁও। ট্রেক করার ইচ্ছা থাকলে এখান থেকেই বেরিয়ে পড়তে পারেন। উঁচু উঁচু পাইনের বন, পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যেতে নেই মানা।
আশপাশে কী কী দেখার মতো জায়গা আছে? ঘুরতে ফিরতে চোখে পড়বে ৩০০ বছরের পুরনো লেচপা ঘরবাড়ি। দেখে নেওয়া যায় সাংচেন দোর্জে মনাস্ট্রি। সেইসঙ্গে দুধসাদা ঝরনা, পাইনের জঙ্গল আর পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট জনপদ তো আছেই। প্রকৃতি এখানে রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছে। জলসা বাংলো পড়বে কাছেই। রয়েছে সিঙ্কোনা ও নানা গাছের সমাহার। সিলারিগাঁও থেকে ৬ কিমি দূরে পেডং। ওক, পাইন, বার্চ আর দেবদারুর ছায়ার শান্ত-নিরিবিলি জনপদ। ৫,৪০০ ফুট উচ্চতায় ক্রস হিল থেকে চারপাশে কী অপূর্ব শোভা! দেখে নেওয়া যায় ১৮৩৭ সালে ভুটানিদের তৈরি পেডং মনাস্ট্রি। ২ কিলোমিটার ট্রেকপথে ঘুরে আসা যায় ব্রিটিশদের হাতে বিধ্বস্ত ১৬৮০ সালে ভুটানিদের তৈরি ডামসিং দুর্গ, সেন্ট জর্জেস স্কুল। পেডং থেকে রেনকের পথে ১৩ কিমি দূরে বাংলা-সিকিম সীমান্তে ১,৭০০ ফুট উচ্চতায় ঋষিখোলা। আপন গতিতে বইছে খরস্রোতা ঋষি নদী। ‘খোলা’ একটি নেপালি শব্দ। যার অর্থ খাল। এই নদী শরীরের ক্লান্তি দূর করে, বাড়িয়ে দেয় মনের উন্মাদনা। নদীর উপরে রয়েছে শক্তপোক্ত বাঁশের সাঁকো। পাশেই নেমেছে ট্রেকপথ।
আরও পড়ুন: দেশের জ্বলন্ত সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে ঢাল জি-২০?
দিনের আলোয় ইচ্ছেগাঁও (Icche Gaon) একরকম। রাতে অন্যরকম। আকাশ পরিষ্কার থাকলে রাতের আকাশে জোনাকির মতো জ্বলজ্বল করে তারাদল। অসাধারণ তার সৌন্দর্য। না দেখলে বিশ্বাস করানো মুশকিল। বছরের যেকোনও দিন ইচ্ছেগাঁও বেড়ানো যায়। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে পাহাড় রূপ পরিবর্তন করে। ভরা বসন্তেও এখানে পাবেন শীতের আমেজ। লাগবে গরম পোশাক। কিছু পর্যটক আশপাশে না বেড়িয়ে নির্জন পরিবেশে নিজেদের মধ্যে সময় কাটান। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে এককাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি নিয়ে উপভোগ করেন প্রকৃতির সৌন্দর্য। সবুজে ঘেরা ইচ্ছেগাঁও ছবির মতো সুন্দর। নবদম্পতিরা ট্রাই করতে পারেন। আবির তো অনেক হল, দোলের মরশুমে পাহাড়ি প্রকৃতির রঙে রঙিন হয়ে উঠুন।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া বা শিয়ালদা স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার জন্য রয়েছে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস-সহ একাধিক ট্রেন। এনজেপি থেকে ৯০ কিলোমিটার এবং বাগডোগরা থেকে ৯১ কিলোমিটার দূরে ইচ্ছেগাঁও। এনজেপি বা বাগডোগরা থেকে সরাসরি গাড়িতে বা শেয়ার গাড়িতে কালিম্পং পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে ইচ্ছেগাঁও। কালিম্পং থেকে দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। ইচ্ছেগাঁও বা কালিম্পং থেকে পেডংমুখী গাড়ি ধরুন। পেডং থেকে ঋষিখোলার দূরত্ব ১৫ কিমি।
কোথায় থাকবেন?
প্রতিটা পাহাড়ি জনপদেই থাকার জন্য সবচেয়ে ভাল হোম-স্টে। রাজ্য পর্যটনের অনুমোদিত হোম-স্টে-র জন্য লগঅন করুন wbtourismgov.in। অজস্র হোম-স্টে-র পাশাপাশি পাবেন কিছু ইকো রিট্রিট ও রিসর্ট।