সুচেতনা বিশ্বাস: এই যে অধীররঞ্জন চৌধুরী। আপনাকে বলছি। হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি। একটা উপনির্বাচনে জেতার পর যেভাবে কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে আবির খেলে সেলিব্রেট করছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল বোধ হয় রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে ফেলেছেন। হতে পারে! শূন্য থেকে মহাশূন্যে যাওয়ার পথে হঠাৎ একটা খড়কুটো সামনে কুড়িয়ে পেলে বাঁচার আশা প্রবলভাবে জাগে। তখন প্রতিক্রিয়াটাও অস্বাভাবিক ধরনের হয়। এক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। আপনাদের ওইসব ঘোমটার তলায় খেমটা নাচ দেখতে দেখতে হঠাৎ ক্যালেন্ডারের দিকে নজর গেল। মাসটা মার্চ। এই মাসের ১৭ তারিখটা বোধহয় ভুলে যাননি। জানি ভুলে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। খুব স্বাভাবিক। তার কারণ, যাদের সঙ্গে এখন বসন্তের হোলি খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের পূর্বসূরিরাই এই দিনটিকে ইতিহাসের পাতায় নিয়ে গিয়েছেন রক্তের হোলি খেলে।
আরও পড়ুন-দুই কন্যার কথা
প্রিয় অধীর, এখন পূর্ব বর্ধমান, আগে শুধুই বর্ধমান। ১৯৭০ সাল। ১৭ মার্চ। তার আগের দিন যুক্তফ্রন্ট সরকার পড়ে গিয়েছে। বর্ধমানের বুকে লাল পতাকার মিছিল। সেই মিছিল থেকে সোজা সাঁইবাড়ি। অস্ত্রহাতে আক্রমণ। তিন ভাইকে খুন। মেজ ভাই প্রণব সাঁই জলখাবার খাচ্ছিলেন। পিছন থেকে আক্রমণ করে খুন। ছোট ভাই মলয় বাঁচতে পাশের বাড়ি পালালে তাকে সেখান থেকে ধরে এনে কচুকাটা করা হয়। ছেলেদের খুনের সময় মা বাধা দিতে গেলে তাঁকে মাথায় কাটারির কোপ মারা হয়। এখানেই শেষ নয়, পুত্রদের খুন করে তাদের রক্তে মাখা ভাত মা মৃগনয়নাদেবীকে খেতে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকি রেহাই পাননি সেদিন বাড়িতে আসা গৃহ শিক্ষকও। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়ি। পরের বছর বড় ভাইকে খুন করা হয়। কীভাবে মনে আছে অধীর? অ্যাসিড দিয়ে চোখ ঝলসানোর পর চোখগুলো উপড়ে নেওয়া হয়। ভাবা যায় সকাল সাড়ে সাতটায় এই নারকীয় আক্রমণ! সেদিন বাড়ির মেয়ের এক মাসের ছেলের অনুষ্ঠান ছিল। তাকেও আগুনে ছুঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। প্রতিবেশীরা বাঁচান।
আরও পড়ুন-প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ‘জলুবাবু’, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
অধীর চৌধুরী, হ্যাঁ আপনাকেই বলছি। বামেদের সঙ্গে প্রেমের খেলা খেলতে খেলতে ১৭ মার্চ কিন্তু এসে গেল। এই ১৭ মার্চে সাঁইবাড়ি দিবস পালন করবেন তো? বলবেন তো বামেদের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের কথা? তৃণমূল কংগ্রেস কিন্তু নিয়ম করে এই দিনটি পালন করে। এবারেও করবে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ট্যুইট করে সেই বার্তা দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অধীর আপনি কী করবেন? যাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়েছেন, যাদের সন্ত্রাস, অত্যাচারে আপনার বহু সাথীর মৃত্যু হয়েছে, ঘরছাড়া হয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে এখন গলা জড়িয়ে প্রেম-প্রেম খেলা খেলছেন। দোসর আবার গেরুয়া। শূন্য থেকে একে আসার জন্য নিচে নামছেন। নামুন। সে আপনার সিদ্ধান্ত। কিন্তু যদি বুকের পাটা থাকে তাহলে ১৭ তারিখ সকাল সাড়ে সাতটায় ধর্মতলার মোড়ে সঙ্গী সাথীদের নিয়ে সাঁইবাড়িতে বামেদের রক্তহোলি খেলার প্রতিবাদ সভা করবেন, ধিক্কার জানাবেন, চিনে নিতে বলবেন খুনিদের, ঘাতকদের, অত্যাচারীদের।
আরও পড়ুন-প্রয়াত সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
অধীর অপেক্ষায় থাকলাম। আপনার বুকের পাটা আছে কিনা দেখার জন্য। সুবিধাবাদী জোট করে এমনিতেই আপনি সমালোচনার শীর্ষে। ১৭ মার্চ যদি প্রকাশ্য সভায় বামেদের ঘৃণার বার্তা ছুঁড়ে না দিতে পারেন তাহলে চিরদিন আপনার নামের পাশে রাজনৈতিক ধান্দাবাজ প্রতিশব্দটা থেকে যাবে।