নয়াদিল্লি : আন্তর্জাতিক নারীদিবসে ফের সংসদে মহিলা সংরক্ষণ (Women’s Reservation Bill- TMC) বিল পাশের দাবি তুলল তৃণমূল। আগামী অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের দাবিকে আরও একবার সংসদের উভয়কক্ষে জোরদার করতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার বিভিন্ন নির্বাচনে ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মহিলা প্রতিনিধিদের মনোনয়ন দিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ দিয়েছে তাঁর দল। অন্যদিকে কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা বিজেপি মুখে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশের বিরোধী। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে মহিলা সংরক্ষণ বিল আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও, এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি মোদি সরকার। বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের আগে তাই ফের মহিলা সংরক্ষণ বিল আনার দাবি জোরালো করতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস।
দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O’brien) বলেন, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। ২০১৯ সালে একই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশ কোনও না কোনওভাবে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। সেক্ষেত্রে অনেকটই পিছিয়ে রয়েছে ভারত।
আরও পড়ুন: সেনাকর্মীদের চিনা মোবাইল ও অ্যাপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
তৃণমূলের বক্তব্য, মহিলাদের জন্য রাজনৈতিক সংরক্ষণ তাদের অগ্রগতির সহায়ক। যদিও বিগত কয়েক দশক ধরে তা থমকে রয়েছে। বর্তমান লোকসভায় মহিলা সাংসদদের হার মাত্র ১৫ শতাংশ এবং রাজ্যসভায় মহিলা সাংসদদের হার মাত্র ১৪ শতাংশ। অথচ শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসেরই ৩৬ শতাংশ মহিলা প্রতিনিধি রয়েছেন সংসদে। শুধু তাই নয়, বাংলায় পঞ্চায়েত পর্যায় থেকে মহিলাদের অগ্রণী ভূমিকায় নিয়ে আসতে সদাসচেষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৯৬ সালে প্রথম মহিলা সংরক্ষণ বিলের (Women’s Reservation Bill- TMC) খসড়া তৈরি হয় এইচ ডি দেবগৌড়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে। সেই বিলটি নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে ফের বিলটি পেশ করা হয়। লোকসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বিলটিও নষ্ট হয়। তারপর থেকে ১৯৯৯, ২০০২ এবং ২০০৩ সালে বিলটি বিভিন্ন সময়ে পেশ করা হলেও এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি। ২০০৮ সালে মনমোহন সিং সরকারের আমলে বিলটির খসড়া পেশ করা হয়। তখনও বিরোধিতা মুখে পড়ে বিলটি পাঠানো হয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। ২০০৯-এর ডিসেম্বরে রিপোর্ট পেশ করে কমিটি। ২০১০-এর মার্চে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ হয়। রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে ১৮৬টি ভোট পড়ে বিলের পক্ষে। ফলে সেটি পাশ হয়ে যায়। পরে বিলটি চলে যায় লোকসভায়। তবে আগামী বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্যায়েও বিলটি আনা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান বিরোধী দলের নেতারা। দীর্ঘদিন ধরেই মহিলা সংরক্ষণ বিল আনার দাবি তুলেছে তৃণমূল। অন্যান্য দলের তরফেও এই দাবিকে সমর্থন জানানো হয়েছে। অথচ মোদি সরকারের তরফে এনিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। এর আগে সর্বদল বৈঠকে তৃণমূলের পাশাপাশি মহিলা সংরক্ষণ বিলের দাবি জানিয়েছে বিজেডি এবং অন্যান্য দলগুলি। এদিকে আগামী ১০ মার্চ মহিলা সংরক্ষণ বিলের দাবিতে যন্তরমন্তরে ধরনা দেবে বলে জানিয়েছে তেলেঙ্গানার বিআরএস।