প্রতিবেদন : বাংলার পরিষদীয় রাজনীতিতে শুক্রবার কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রইল। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুক্রবার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই সেচ ও জলসম্পদমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে (Minister Partha Bhowmik) একমাসের মধ্যে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন। এই ঘটনায় তোলপাড় হয়ে যায় বিধানসভা। আসলে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে গোটা দেশেই এজেন্সির বুলডোজার দিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বিরোধীদের দুরমুশ করতে চাইছে বিজেপি। শুক্রবার বাংলার আইনসভায় হল তারই প্রতিধ্বনি। হুমকির ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস পরিষদীয় দল। মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক অধ্যক্ষের কাছে নিরাপত্তা ও হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস বারবার বলেছে রাজনৈতিক স্বার্থে ইডি-সিবিআইকে ব্যবহার করছে বিজেপি। এদিন বিধানসভায় হুমকি দিয়ে দলবদলু আবারও তা সত্যি বলে প্রমাণ করলেন। তা না হলে কোন অধিকারে কোন যুক্তিতে তিনি রাজ্যের মন্ত্রীকে জেলে ঢোকানোর হুমকি দেন! মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এই ঘটনায় অধ্যক্ষের কাছে নিরাপত্তা ও তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেন। তিনি বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ আনতে চলেছেন। মাত্র দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ৯টি বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীকে ‘এজেন্সি পলিটিক্স’-এর বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু শুভেন্দু আবারও বিধানসভায় প্রমাণ করে দিলেন ইডি-সিবিআই বিজেপির শাখা সংগঠন। চাকরবাকরের মতো তাদের ব্যবহার করে বিজেপি। এর আগে বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও কৃষ্ণ কল্যাণীকেও হুমকি দিয়েছিল শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে শুক্রবারই বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের বাড়িতেও হানা দিয়েছে ইডি। এর আগে রাবড়িদেবী- লালুপ্রসাদ যাদব-কেসিআর কন্যা কবিতার বিরুদ্ধেও ইডি-সিবিআই দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে। অর্থাৎ বিজেপি যে আসলে এজেন্সি নির্ভর রাজনীতি করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে, দেশ জুড়ে বিজেপি নেতাদের একের পর এক ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এই ঘটনায় অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় পার্থ ভৌমিককে বলেন, বিরোধী দলনেতার কথা আমি শুনেছি। আমার সামনেই এটা ঘটেছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এরপরই পার্থকে তিনি বলেন, আপনার নিরাপত্তার বিষয়টি আমি দেখব। আর আপনি চাইলে প্রিভিলেজ আনতে পারেন। তারপর যা নিয়ম আছে সেই অনুযায়ী যা হওয়ার হবে। তার আগে বিরোধী দলনেতাকে তিনি বলেন, কে কাকে জেলে ঢোকাবে? এভাবে হয় নাকি! এসব কথা সদনে বলবেন না শুভেন্দুবাবু।
আরও পড়ুন: সভ্যতাগুলো কেমন বৈচিত্রবিহীন হয়ে যাচ্ছে
এদিন বিধানসভায় পঞ্চায়েতের একটি বিলের ওপর আলোচনা চলছিল। সেই সময়ই বিরোধী দলনেতা তার বক্তব্যের মধ্যে বিশ্বজিৎ দাস ও কৃষ্ণ কল্যাণীকে দেখিয়ে বলে, এরা কোন দলে আছে বলতে পারবে না। তৎক্ষণাৎ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (Minister Partha Bhowmik) শুভেন্দুকে বলেন, শিশিরবাবু কোন দলে আছেন সেটা আগে বলুন! এতেই রেগে আগুন বিরোধী দলনেতা পার্থকে বলে এক মাসের মধ্যে জেলে ঢুকিয়ে দেব! আমার বাবা তুলে কথা! পরে সাংবাদিক বৈঠকে ডেপুটি চিফ হুইপ তাপস রায় ও বিধায়ক সুবোধ অধিকারীকে পাশে বসিয়ে পার্থ ভৌমিক বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সব বিধায়ককে জেলে ঢুকিয়ে দিন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু সাদা শাড়ি ও হাওয়াই চটি পরা এক ভদ্রমহিলা বাইরে থাকলেই যথেষ্ট। তিনি বাকিটা বুঝে নেবেন। তাঁর সংযোজন, উনি যদি আমাদের দুই বিধায়কের দিকে আঙুল তুলতে পারেন আমরাও জিজ্ঞেস করতে পারি শিশির অধিকারী কোন দলে আছেন! এটা তো আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি। তাপস রায় বলেন, আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে এ-জিনিস কোনওদিন দেখিনি। এরকম কোনও বিরোধী দলনেতাকে দেখিনি যিনি এভাবে সদনে দাঁড়িয়ে কোনও সদস্যকে বলেছেন জেলে ঢুকিয়ে দেব। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তাঁর সংযোজন, পার্থ চাইলে পয়েন্ট অফ অর্ডার তুলতে পারে বা স্পিকারকে লিখিত ভাবে জানাতে পারে। আসলে শুভেন্দু কেন চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আচমকা সদনে বলে ফেলেছে? এটা চরম হতাশা-হিংসা এবং পরিষদীয় রাজনীতি না জানার ফল। সাংবাদিক বৈঠকের পর অধ্যক্ষের ঘরে বৈঠক করেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, ব্রাত্য বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, চিফ হুইপ নির্মল ঘোষ, ডেপুটি চিফ হুইপ তাপস রায়। তবে এই ঘটনা বঙ্গরাজনীতির আঙিনায় ও রাজ্য বিধানসভার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে রেকর্ড হয়ে রইল।