পুজোর মুখে বইপাড়া ঘুরে লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী
পুজোর মুখে জমজমাট কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া। স্টলগুলোতে সেজে উঠেছে বিভিন্ন পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যা। রঙ-বেরঙের আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ। হাতছানি দিয়ে ডাকছে বইপ্রেমীদের। প্রত্যেকটি স্টলেই লেগে রয়েছে পাঠকের ভিড়। নেড়েচেড়ে, পাতা উল্টিয়ে দেখে তাঁরা কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পত্রিকা। বাণিজ্যিক পত্রিকার পাশাপাশি আছে লিটল ম্যাগাজিনও। কিছু পত্রিকা সাধারণ, কিছু বিষয়ভিত্তিক। সম্পাদকেরা বড়দের পাশাপাশি ভেবেছেন ছোটদের কথাও। ফলে মা-বাবার হাত ধরে বইপাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন খুদেরাও। নতুন জুতো-জামার পাশাপাশি উপহার হিসেবে তারা পাচ্ছে শারদ পত্রিকা, বার্ষিকী।
আরও পড়ুন-৫০ থেকে ৮০ হাজার ভোটে জিততে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, ভবানীপুরের গণনা কেন্দ্রে এসে দাবি ফিরহাদের
অথচ এমন দৃশ্যের কথা আশা করা যায়নি কয়েক মাস আগেও। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সমস্ত কিছু তালগোল পাকিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ করেই থমকে গিয়েছিল জনজীবন আগের বছরের মতো। মাথায় হাত পড়েছিল সম্পাদক, প্রকাশকদের। তবে রাজ্য সরকারের তৎপরতায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। টিকাকরণ এর অন্যতম প্রধান কারণ। তাই সম্পাদকেরা উৎসাহ পেয়েছেন পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যা প্রকাশে। প্রশ্ন জেগেছিল অনেকের মনে, ছাপা তো হচ্ছে। বিক্রি হবে তো? ইতিমধ্যেই দূর হয়েছে তাঁদের সেই সন্দেহ। কারণ শারদীয়া সংখ্যা নিয়ে পাঠকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে যথেষ্ট চাহিদা। কলেজ স্ট্রিটের পাতিরাম বুক স্টলের তাপস ভট্টাচার্য জানালেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বিভিন্ন রকমের পত্রিকা বিক্রি করি। বাণিজ্যিক, অ-বাণিজ্যিক। এইবছর শারদীয়া সংখ্যার বিক্রি এখনও পর্যন্ত ভালই। অন্তত গতবারের তুলনায়। অবশ্য তার আগে আরও বেশি বিক্রি হত। কয়েক মাস আগে ভাবিনি এইবছর শারদীয়া সংখ্যা নিয়ে এতটা চাদিহা তৈরি হবে। মুখে হাসি ফুটেছে প্রকাশক, সম্পাদক এবং আমাদের মতো বিক্রেতাদের। পুজোর আগে আরও কিছুদিন মার্কেট খোলা থাকবে। আশা করি বিক্রি আরো বাড়বে। একটা কথা বলতে পারি, মানুষ আগেই মতো পুজোসংখ্যা কিনছে, পড়ছে।
আরও পড়ুন-আজ জিতলেই প্লে-অফ পাকা বিরাট-বাহিনীর
মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে কলেজ স্কোয়্যারে। বইপাড়ায় ঘুরতে ঘুরতে অনেকেই উঁকি মারছেন সেইদিকে। কলেজ স্কোয়্যারের পিছনেই রয়েছে ধ্যানবিন্দু। সেখানে বিক্রি হয় রাজ্যের এবং রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন এবং বাণিজ্যিক পত্র-পত্রিকা। ধ্যানবিন্দুর সুব্রত সরকার জানালেন, বইপ্রেমীদের আটকাতে পারেনি কোভিড। সবরকমের সাবধানতা অবলম্বন করে তাঁরা আসছেন কলেজ স্ট্রিটে। কিনছেন নতুন শারদীয়া সংখ্যা। আমরা মূলত লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি করি। তার পাশাপাশি বিক্রি করি বাণিজ্যিক পত্রিকাও। এখন একটা নতুন ট্রেন্ড দেখছি। বাণিজ্যিক পত্রিকার জায়গা কিছুটা হলেও দখল করে নিয়েছে লিটল ম্যাগাজিন। একটা শ্রেণির পাঠক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ছোট পত্রিকা।
এ তো গেল শারদ পত্র-পত্রিকার কথা। এর পাশাপাশি বইপাড়া ঘিরে শুরু হয়েছে ছোট ছোট বইমেলা, বইবাজার। উদ্যোগ নিয়েছে মূলত প্রকাশক বা প্রকাশকদের সংগঠন।
আরও পড়ুন-হেরে চাপ আরও বেড়ে গেল রোহিতদের
কলেজ স্ট্রিট থেকে কয়েক পা গেলেই হৃষীকেশ পার্ক। গত শীতে এই পার্কে আয়োজিত হয়েছিল একটি বইমেলা। প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ নিয়েছিলেন এই উদ্যোগ। অংশ নিয়েছিল দেব সাহিত্য কুটীর, দীপ প্রকাশন-সহ বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রকাশন সংস্থা। সেই বইমেলায় ঘটেছিল পাঠক সমাগম। বিক্রি হয়েছিল দারুণ। হাসি ফুটেছিল প্রকাশকদের মুখে। বইমেলার আহ্বায়ক রূপা মজুমদার জানালেন, আমাদের বইমেলা প্রথম বছরে যথেষ্ট সফল হয়েছে। প্রতিদিন এসেছেন বহু পাঠক। বিভিন্ন স্টল ঘুরে কিনেছেন বিভিন্ন লেখকের বই। প্রতিদিন আয়োজিত হয়েছে আলোচনাসভা। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখকেরা।
করোনা পরিস্থিতির জন্য আয়োজিত হয়নি পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের কলকাতা বইমেলা। তবে তাঁদের উদ্যোগে তালতলা ময়দান এবং বিধান শিশু উদ্যানে ছোট আকারে বইমেলা আয়োজিত হয়েছিল। সাফল্য লাভ করেছিল সেই দুটি বইমেলাও।
আরও পড়ুন-তৃতীয় দিন উজ্জ্বল ঝুলন ও দীপ্তি
এই মুহূর্তে কলেজ স্ট্রিট বিদ্যাসাগর টাওয়ারের একতলায় চলছে দে’জ পাবলিশিংয়ের বইমেলা। এই আয়োজন সম্পর্কে সুধাংশুশেখর দে জানালেন, সাহিত্য অকাদেমি, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি-সহ বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রকাশন সংস্থা এই বইমেলায় অংশগ্রহণ করেছে। পাশাপাশি আছে কিছু নতুন প্রকাশকও। বহু মানুষ আসছেন। বই দেখছেন, কিনছেন। আসছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও। কেউ সংগ্রহে রাখার জন্য, কেউ পুজো উপহার হিসেবে বেছে নিচ্ছে বই।
পাড়ায় পাড়ায় বইবাজার-এর আয়োজন করছে মিত্র ও ঘোষ। নতুন বইয়ের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে পুরোনো বই। দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। বই কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন পাঠকেরা।
একটা বিষয় পরিষ্কার, করোনা পরিস্থিতিতে সাময়িক ধাক্কা খেলেও, পুজোর মুখে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কলেজ স্ট্রিট।