প্রতিবেদন : কথায় কথায় সবকিছুর মধ্যেই দুর্নীতির গন্ধ খুঁজে পায় যে বিজেপি, সেই বিজেপিই এখন নিজেদের পার্টি তহবিলে (BJP’s Unknown Fund) এক বিশাল অঙ্কের উৎসের প্রশ্নে পুরোপুরি নিরুত্তর। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই টাকার অঙ্কটা ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। গভীর রহস্যের মেঘ ঘনাচ্ছে এই অঙ্ককে ঘিরেই। টাকাটা কোথা থেকে এল, নির্বাচন কমিশনের এই প্রশ্নের মুখে দিশাহারা গেরুয়া শিবির। উৎস গোপনের হাস্যকর প্রচেষ্টা। তবুও পালাবার পথ না পেয়ে এখন গল্পের গরুকে গাছে তুলতে মরিয়া তারা। হাস্যকর সাফাই, গালভরা শব্দবন্ধ—‘আননোন সোর্স’। অর্থাৎ বিজেপি স্বীকার করে নিচ্ছে সম্পূর্ণ অজানা উৎস থেকে এসেছে এই টাকা। রহস্যটা সেখানেই। প্রশ্ন উঠেছে, এও কি সম্ভব?
কমিশনে জমা পড়া রিপোর্ট বলছে, বিজেপির উপার্জন ১ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। বিজেপির অডিট রিপোর্ট বলছে, গত আর্থিক বছরে তাদের উপার্জন ১ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৫৫ কোটি টাকার অনুদান কোথা থেকে এসেছে, কে দিয়েছে, তা স্পষ্ট করেছে বিজেপি। বাকিটা পুরোটাই ‘অজানা’। প্রশ্ন উঠেছে ১ হাজার ১৬১ কোটির মতো বিশাল অঙ্কের টাকার উৎস কি বিজেপির মতো দলের সত্যিই অজানা? বিশেষ করে বিজেপির বার্ষিক উপার্জনের এই বিশাল অঙ্ক দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত অনুদানের নিরিখে যেখানে সর্বাধিক।
আরও পড়ুন: অন্য রাজ্য পিছনে, ঋণ কমছে বাংলার
এই গল্প কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? নাকি আসল উৎসটাকে সুকৌশলে আড়াল করতে চাইছে তারা? বিদেশি ব্যাঙ্কে জমা রাখা টাকা কিংবা দেশের মধ্যেই লুকিয়ে রাখা কালো টাকার ভাণ্ডারের সঙ্গে ‘আননোন সোর্স’ তকমার কোনও সম্পর্ক নেই তো? সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সবচেয়ে বড় কথা, যারা মুখে আদর্শ-নীতির বড়বড় বুলি আওড়ায়, তারা ‘অজানা উৎস’ (BJP’s Unknown Fund) থেকে এত টাকা নিয়ে দলের তহবিল সমৃদ্ধ করল কোন যুক্তিতে?
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম, ইলেক্টোরাল বন্ড এবং ২০ হাজার টাকার কম অনুদানকারীদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা জরুরি নয়। কিন্তু সেই সীমা পার হলেই দাতা বা শুভানুধ্যায়ীর পরিচয় এবং সেইসঙ্গে টাকার অঙ্ক জানানো বাধ্যতামূলক। তা হলে অজানা মাধ্যম কারা? এমনও নয় যে ওই বিশাল অঙ্ক এসেছে কুপন বিক্রি করে। বেগতিক দেখে নানা গল্প সাজাচ্ছে গেরুয়া শিবির। বলছে, স্বেচ্ছা অনুদান মারফত তারা পেয়েছে ১২৭ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ৩৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা এসেছে ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে। কিন্তু বন্ড বিক্রি করতে পারে তো শুধুমাত্র স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াই। তা হলে তাদের কাছেই রয়েছে ‘অজানা সূত্র’র গোপন হদিশ। নির্বাচন কমিশনই পারে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে এসবিআই-এর সাহায্যে এই রহস্য-উন্মোচন করতে। বিজেপির আসল রূপ আমজনতার সামনে বেআব্রু করে দিতে এখন এটাই চাইছে বিরোধীরা।