চেন্নাই, ২২ মার্চ : রবীন্দ্র জাদেজা যখন ফিরে যাচ্ছেন, রাহুল দ্রাবিড়কে দেখা গেল খাতায় মন দিয়ে নোট-টোট নিচ্ছেন!
কোচ কী লিখলেন কে জানে। কিন্তু ধরে নেওয়া যায় তাঁর খাতায় দিনভর মহাতারকাদের হারাকিরির গল্পগাথাই লিপিবদ্ধ হয়েছে। রোহিত, রাহুল, বিরাট, হার্দিক, সবাই চিপকের স্লো উইকেটে জমে গিয়ে উইকেট দিয়ে গেলেন। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আর ছ’মাস বাকি। দ্রাবিড়ের (India vs Australia) এই নোট অতঃপর কিছু ম্যাজিক করে কি না সেটাই দেখার।
একটা সময় ২ উইকেটে ১৪৬ ছিল ভারতের (India vs Australia)। বিরাট আর রাহুল ম্যাচ ও সিরিজ নিয়ে আসছেন ধরে নেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এরপর যেটা হল সেটাই হারাকিরি। সহজ ম্যাচ কঠিন করে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ ও সিরিজ উপহার দিয়ে এলেন রোহিতরা। অস্ট্রেলিয়া চিপকে জিতল ২১ রানে। টেস্ট সিরিজ ১-২-এ হারার পর স্মিথরা একদিনের সিরিজ জিতলেন ২-১-এ।
সামান্য আগের ঘটনা। কুড়ি ওভারের ম্যাচে সেরা ব্যাটার এই সিরিজে কোনও রান না করে তিনবারই আউট হয়ে গেলেন প্রথম বলে। অগারের নিচু হয়ে আসা বলে সূর্য বোল্ড হয়ে যাওয়ার ঠিক আগের বলে আউট হয়েছেন বিরাট কোহলি (৫৪)। ফুরফুরে মেজাজে চলতে থাকা ম্যাচটা এরপর থেকে চাপের দিকে গড়াতে শুরু করল।
আরও পড়ুন: বিশ্বমঞ্চে সাফল্য বাংলার পর্যটনের
মিচেল স্টার্ককে একবার মাথার উপর দিয়ে ওড়ানোর পর রাহুলের (৩২) আর দরকারই ছিল না ফের অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার। কিন্তু জাম্পাকে সেটাই করলেন। তাতে বাউন্ডারির ধারে ধরা পড়লেন অ্যাবটের হাতে। নাগপুর ও দিল্লিতে রান না পেয়ে বাদ পড়েছিলেন রাহুল। একদিনের সিরিজে রানে ফিরেছেন। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগে যেটা জরুরি ছিল। কিন্তু উইকেটটা ছুঁড়ে দিয়ে গেলেন!
২৭০ টার্গেট নিয়ে ভালই শুরু করেছিলেন রোহিত (৩০) ও শুভমন (৩৭)। কিন্তু অ্যাবট আর জাম্পা যখন পরপর দু’জনকে ফিরিয়ে দিলেন, বোর্ডে রান ৭৭। এরপর বিরাট-রাহুল জুটিতে ৬৯ রান উঠেছে। কিন্তু রাহুল জাম্পাকে উইকেট দিয়ে যাওয়ার পর অক্ষর (২) রান আউট হয়ে যান কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। বিরাট ৬৫তম পঞ্চাশ পেয়ে গেলেন একটু বাদেই। কিন্তু নিজের কাঁধে দলকে টেনে নিয়ে যেতে পারলেন না।
এরপর হার্দিক (৪০) একটা চেষ্টা করলেন বটে, কিন্তু ম্যাচ জেতানোর জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। সবথেকে বড় কথা হল একটা ভাল পার্টনারশিপ পর্যন্ত তৈরি হল না ভারতের ইনিংসে। হলে ২৪৮ রানে থেমে যেতে হত না। টেস্ট সিরিজে স্পিনাররা জ্বালিয়েছেন রোহিতদের। এখানে সেটাই করে গেলেন ৪৫ রানে ৪ উইকেট নেওয়া অ্যাডাম জাম্পা।
মার্শ আর হেড এদিন যেভাবে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল আর একটা বিশাখাপত্তনমের ঘটনা ঘটছে চিপকে। কিন্তু হার্দিক এসে ছবিটা বদলে দেন। তিনি পরপর ফেরালেন হেড (৩৩), স্মিথ (০) ও মার্শকে (৪৭)। ফলে ৬৮/০ থেকে পাঁচ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৮৫/৩। এরপর একটা ছোটখাটো পার্টনারশিপ হয়ে গেল ওয়ার্নার (২৩) ও লাবুশানের (২৮) মধ্যে। ওয়ার্নার শুরুতে নয়, নেমেছিলেন চার নম্বরে। কিন্তু ৩১ বলের বেশি ইনিংসকে টেনে নিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর আর লাবুশানের উইকেট তুলে নেন কুলদীপ। দুটো উইকেটই ব্যাটাররা দিয়ে গেলেন তুলে মারতে গিয়ে। লাবুশানে ফিরে যাওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়া ১৩৮/৫।
চেন্নাইয়ে প্রচণ্ড গরম। স্মিথ সম্ভবত আগে ব্যাট করে নিতে চাইলেন তরতাজা অবস্থায় বড় স্কোর করে নিতে চেয়ে। শামি-সিরাজদের জন্য উইকেট থেকে সেই সাহায্য দেখা গেল না যেটা সকালের ম্যাচে থাকে। থার্ড সিমার হার্দিককে তাই তাড়াতাড়ি নিয়ে আসতে হল। তিনি এসেই অস্ট্রেলিয়াকে চাপ ফিরিয়ে দেন। মার্শ প্লেড অন হয়ে গেলেন। না হলে বড় রানের দিকে যাচ্ছিলেন।
ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে সমুদ্র। হাওয়া সবসময় চলে চিপকের উপর দিয়ে। কিন্তু চড়া রোদ্দুরে তার প্রভাব সিমারদের উপর পড়েনি। তবে এত গরমেও চল্লিশ হাজার লোক মাঠে বসে খেলা দেখলেন। আইপিএলে এমএসডি দর্শনের আগে ক্রিকেট অভ্যাসে ফিরল চেন্নাই।
অস্ট্রেলিয়া যে ১৩৮/৫-এর পরও ২৬৯ রান তুলতে পেরেছে সেটা লোয়ার অর্ডারের জন্য। অ্যালেক্স ক্যারি ৩৮, মার্কাস স্টয়নিস ২৫ ও সিন অ্যাবট ২৬ রান করে দলকে এই রানে পৌঁছে দিলেন। এরপর অগার, স্টার্ক ও জাম্পাও বল হাতে কিছু অবদান রেখে গিয়েছেন। ম্যাচের শেষে সেটাই খুব দামি হয়ে গেল।