প্রতিবেদন : রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে ইচ্ছেমতো জল ছেড়েছে ডিভিসি। আর তার মাশুল গুনতে হচ্ছে শস্যভাণ্ডার পূর্ব বর্ধমান জেলাকে। ডিভিসির জলে ভেসেছে জেলার ৩৬ হাজার ৫২৩ হেক্টর জমির চাষ। জেলার আটটি ব্লকের ২৪০টি মৌজার ফসল বরবাদ। জেলা কৃষি দফতর থেকে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে। দফতর সূত্রের খবর, কাটোয়া ১ নং, মঙ্গলকোট, রায়না ২ নং, জামালপুর, আউশগ্রামের দুটি ও কেতুগ্রামের দুটি ব্লকের ৩৫,৪৭৭ হেক্টর জমির আমনচাষ ও ৬৮০ হেক্টর জমির সবজিচাষ ক্ষতিগ্রস্ত। মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামের দুটি ও কাটোয়া ১নং ব্লকের চাষে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। কৃষি আধিকারিক আজমির মণ্ডল বলেন,‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে রয়েছে কৃষি দফতর।’ কালনা ২নং ব্লকের পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েত এলাকা ফুলকপি, উচ্ছে, পটল, ঝিঙে, বেগুন-সহ নানান সবজিচাষের জন্য বিখ্যাত। ভাগীরথীর জল ঢুকে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির আনাজপাতির দফারফা। জল নামতে শুরু করলেও সোমবার কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরোপুরি জল নামেনি। অজয়, দামোদর, ভাগীরথী উপচে শুধু ফসলের ক্ষতিই হয়নি, বহু ছোট-বড় জলাশয়ে নদীর জল ঢুকে ভেসে যাওয়ায় মৎস্যজীবীদের মাথায় হাত। শুধু মঙ্গলকোট ব্লকেরই ২ হাজার হেক্টর জলাশয়ের মাছ ভেসে গিয়েছে বলে মালিকদের দাবি। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। কাটোয়া মহকুমার ৫ হাজার ৫৯ হেক্টর জলাশয়ের মাছ ভেসে গিয়েছে। মঙ্গলকোটের মাছচাষী ফড়িং শেখ, কাটোয়ার রাসমোহন ঘোষদের হাহাকার, ‘পুজোর সময় ভাল বিক্রি হত। দরও মিলত ভালই। সবকিছু শেষ হয়ে গেল!’
আরও পড়ুন :নব নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি
এদিকে সোমবার থেকে জলমগ্ন আমতার ঝিকিরা পঞ্চায়েতের পুরো এলাকায় তাতেও কর্তব্যে অবিচল আশাকর্মীরা। মঙ্গলবারও কোমর জল ভেঙে তাঁরা মানুষকে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। দোরে দোরে গিয়ে জ্বর, সর্দিকাশি, পেটখারাপের মতো বিভিন্ন রোগের ওষুধপত্র বিলি করছেন। গ্রামবাসীদের বিভিন্ন রোগ নিয়ে সচেতনও করছেন। শুধু ঝিকিরাই নয়, আমতা ও উদয়নারায়ণপুরে বিস্তীর্ণ জলভাসি এলাকাতেও কাজ করছেন আশাকর্মীরা। তাঁদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এলাকার মানুষ। তাঁরা বলছেন, ‘আশাকর্মীরা কোমর জল ভেঙে যেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে এই পরিষেবা দিচ্ছেন, তাতে তাঁদের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’
আরও পড়ুন :বিজেপির মিথ্যাচারের জবাবে তুলে ধরতে হবে উন্নয়ন: মহুয়া
তবে উদয়নারায়ণপুরের ভবানীপুর, রাজাপুর, কানুপাট, পুরপাট, তাঁতহাটের সামনে থেকে জল কমেছে। আমতার দ্বীপাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান ও ভাটোরা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় জল কিছুটা কমেছে। তবে ঝিকিরা, ঝামটিয়া, বিকেবাটি, অমরাগোড়ি প্রভৃতি এলাকায় জল বেড়েছে। ৪০টি ত্রাণশিবিরে কয়েক হাজার মানুষ রয়েছেন। প্রশাসন পর্যাপ্ত ত্রাণ বিলি করছে। বিধায়ক সুকান্ত পালের নেতৃত্বে ত্রাণসামগ্রী ও রান্না করা খাবার বিলি করছেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। উদয়নারায়ণপুরের রামপুর, ডিহিভূরশুট, ঘোলা এলাকায় ত্রাণ বিলি করেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুলেখা পাঁজা। জেলাশাসক মুক্তা আর্য জানান, ‘পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। কিছু এলাকায় জল কমেছে। প্রশাসন প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে।’