প্রতিবেদন : ২৭ তারিখ দিল্লিতে গদ্দার শুভেন্দুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, ২৯ তারিখ শ্যামবাজারের সভা থেকে গদ্দারের উসকানি— এরপরই ৩০ তারিখ হাওড়ার শিবপুরে অনুমতি ছাড়া প্ররোচনার মিছিল থেকে বিজেপি- বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তুমুল হাঙ্গামা-অশান্তি দেখল বাংলা সহ গোটা দেশ। এই ঘটনায় আবারও সামনে চলে এল বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের সেই পুরনো রাজনীতি। এই ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত। হাওড়ার শিবপুরের ঘটনার জন্য দায়ী অমিত শাহ-শুভেন্দু অধিকারী। সুপরিকল্পিত ভাবে বিজেপি এই হাঙ্গামা-অশান্তি ঘটিয়েছে।
আরও পড়ুন-সুজনের পরিবারের ১৪ চাকরি-তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাকফুটে সিপিএম
শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই অভিযোগ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওদের ক্রনোলজি দেখে যা জেনেছি তাই বলছি। ওরা জ্যোতিষী নয়। তবে ক্রনোলজিটা একবার দেখে নিন। সাফ কথা অভিষেকের। এদিন তৃণমূল ভবনে টিভি মনিটর লাগিয়ে যে ভিডিওটি দেখান তাতে দেখা গেছে গেরুয়া পোশাক পরে বন্দুক-পিস্তল নিয়ে ডিজে বাজিয়ে উদ্দাম নৃত্য করছে একদল লোক। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন প্রশাসনকে। তবে তিনি বলেন, আগে থেকে বলব না, একে-ওকে-তাকে গ্রেফতার করুন। তবে প্রশাসন পুরো বিষয়টি দেখছে। এটুকু বলতে পারি কাউকে ছাড়া হবে না। অভিষেকের সংযোজন, এ জিনিস বাংলায় আগে দেখিনি। ২০১৭ সাল থেকে এসব শুরু হয়েছে। ধর্মের নামে যারা গুন্ডামি-মস্তানি করে, তারা মানুষ নয়। ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করে যারা জল্লাদের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ধিক্কার জানাই। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশ জুড়ে একশোর বেশি ঘটনা রামনবমীকে ঘিরে ঘটেছে। বাংলার মানুষকে হাত জোড় করে অনুরোধ করব, কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না।
আরও পড়ুন-ক্রনোলজি বুঝিয়ে অভিষেক বললেন, দিল্লিতে ‘শাহি’ সাক্ষাতেই তৈরি অশান্তির ব্লুপ্রিন্ট
এদিন হওড়া পুলিশ কমিশনারেটের একটি চিঠি পড়ে শোনান অভিষেক। তাতে দেখা যাচ্ছে, হাওড়ায় রামনবমীর মিছিলের কোনও অনুমতি ছিল না। বিশ্বহিন্দু পরিষদের জনৈক ইন্দ্রদেও দুবে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটে একটি চিঠি দেয়। এরপর দিন দশেক আগে পাল্টা চিঠি দিয়ে পুলিশ সুনির্দিষ্ট ভাবে চারটি গাইডলাইন দিয়ে (১. দুপুর ২.৩০ থেকে ৫টা পর্যন্ত মিছিল, ২. কোনও উসকানি কিংবা প্ররোচনামূলক মন্তব্য করা যাবে না মিছিল থেকে, ৩. কোনওরকম অস্ত্র-বাইক ব্যবহার করা যাবে না মিছিলে, ৪. পুলিশের ঠিক করা রুটেই মিছিল করতে হবে) বলে, এগুলি মেনে চললে তবেই মিছিলের অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া মিছিলে ভলান্টিয়ার রাখতে হবে। তাদের বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে দিতে হবে। কিন্তু এর কোনও জবাব আসেনি। এমনকী পুলিশের দেওয়া চারটি গাইডলাইনের একটিও মানা হয়নি। উপরন্তু মিছিলের রুট বদল করা হয়েছে। আমি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে একথা বললাম। স্পষ্ট কথা অভিষেকের।
আরও পড়ুন-‘মোদি হটাও, দেশ বাঁচাও’ পোস্টার এবার গুজরাতেই
তাঁর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, দেশে বিজেপির অতীত ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাবে নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক উসকানি-দাঙ্গা-হাঙ্গামা এসবই তাদের পুরনো ছক৷ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে হাওড়ায় অশান্তির ঘটনাও পরিকল্পিত ভাবেই করা হয়েছে। তাঁর সংযোজন, ক্রিমিনালের কোনও ধর্ম হয় না। আমি বুক ঠুকে বলছি, ভিডিও তো রয়েছে। যারা আগুন লাগিয়েছে- জয় শ্রীরাম বলে নাচছে এরা কারা? এটা বিজেপির প্ররোচনায় হয়েছে।
শোনা যায়, শুক্রবার বিকেলে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে হাওড়ার ঘটনা নিয়ে ফোন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যপাল নিজেও শিবপুরে যান।
আরও পড়ুন-দুশ্চিন্তায় সাধারণ মানুষ, জীবনদায়ী ওষুধের দাম একলাফে বাড়ছে ১২ শতাংশ
হাওড়ার ঘটনা নিয়ে বিজেপির একটা নেতা ট্যুইট করুক! হাতে বন্দুক নিয়ে আগুন লাগিয়ে যারা নাচছে তাদের গ্রেফতার করা হোক। যদি হিম্মত থাকে এই বিবৃতি দিক বিজেপির নেতারা। তোপ অভিষেকের। বিজেপির কাছ থেকে আমাদের হিন্দুত্বের সার্টিফিকেট নিতে হবে নাকি? আমি স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি। যোগী আদিত্যনাথের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি না। সাফ কথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। তিনি বলেন, এখন রাজ্য পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি নেতারা। যাতে এনআইএ-সিবিআই হলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে।