প্রতিবেদন : চিরকুটে চাকরি। সিপিএম জমানার পরিচিত দৃশ্য। একের পর এক তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ্যে। জবাব দিতে পারছে না বামেরা। নেমে পড়েছে কুৎসায়। যত কুৎসা বাড়ছে, ততই বাম জমানার আরও বড় কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসছে। এবার লেভি। বলা যায় লেভির লোভ। ৩৪ বছরের হিসেব করলে দেখা যাবে লেভির অঙ্কটা অবাক করে দেওয়ার মতো। বামেরাই হিসেব দিয়ে বলছে, লাল জমানায় মূলত লেভি থেকে পার্টির কোষাগারে ঢুকেছে প্রায় ৪৯২ কোটি টাকা। যার পিছনে রয়েছে ৯৫ শতাংশ সরকারি চাকরিজীবীদের অবদান, বাকিটা অন্যান্যদের।
আরও পড়ুন-জীবন-সাধক যোগেশচন্দ্র
একটু হিসেব দেওয়া যাক। সিপিএমের রাজ্য কমিটি। সম্পাদকমণ্ডলী ২৫-৩০ জন। ৩৪ বছরে অর্থাৎ ১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রায় ৮৫০ জন। প্রতি সদস্য একজন করে চাকরি দিলে সংখ্যাটা ৮৫০। রাজ্য কমিটি যদি গড়ে ৫০ জনের হয়, ৩৪ বছরে ১,৭০০ জন। অর্থাৎ কম করেও ১,৭০০ চাকরি। এরপর আসা যাক জেলা কমিটিতে। গড়ে ২৮টি জেলা। প্রত্যেক জেলায় ৫০ জন করে সদস্য সংখ্যা ধরলে সংখ্যাটা হয় ১,৪০০। অর্থাৎ ১,৪০০ চাকরি। একইভাবে ছাত্র ১,৭০০, চাকরিও ১,৭০০। যুব, মহিলা, কৃষক, শ্রমিক ফ্রন্টে একইভাবে ১,৭০০ করে সদস্য সংখ্যা ধরলে এক-একটি ফ্রন্টে ১,৭০০ করে চাকরি। এগুলির আবার শুধু রাজ্য কমিটি ধরা হচ্ছে। জেলা কমিটিগুলির মধ্যে যদি যাওয়া হয় তাহলে সংখ্যাটা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। বাম জমানায় ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মন্ত্রীর সংখ্যা হিসেব করলে ৩০০ পেরিয়ে যাবে। তাঁরা তাঁদের জমানায় অন্তত ১০০ জনকে চাকরি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-এপ্রিল ফুলের উৎপত্তি-ইতিহাস
এরপর শরিক দলের সংগঠন রয়েছে। শরিক দলের মন্ত্রক ছিল। শুধু এখানেই শেষ নয়, সরকারি চাকরি ছাড়াও বেশকিছু বেসরকারি সংস্থাতেও সিপিএম নিজেদের লোক ঢুকিয়েছিল। যাদের মাসিক বেতন থেকে মোটা টাকার লেভি পেত তারা। এছাড়া সাংসদরা, বিশেষত বাংলার বাম সাংসদরা বিরাট অঙ্কের টাকা দিতেন দলকে। বিধায়করাও। ফলে যদি সংখ্যাটা হিসেব করতে হয় তাহলে এইরকম হবে— ৮৫০১৭০০১৪০০১৭০০১৭০০১৩৬০১৫৩০ ১৭০০১০০। অর্থাৎ মোট ১২,০৪০ জনকে চাকরি দিয়েছে। এই চাকরিজীবীরা প্রতিমাসে দলকে ১০০০ টাকা করে লেভি দিয়ে থাকলে প্রতি মাসে তার অঙ্ক দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এক বছরে অঙ্কটা ১৪ কোটি ৪৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ৩৪ বছরে অঙ্কটা গিয়ে ৪৯১ কোটি ২৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ সরকারি চাকরির অর্থ ঘুরপথে ঢুকল দলের তহবিলে। এও ঘুরপথে এক দুর্নীতি। চাকরি হল সিপিএম করার যোগ্যতায়। তাই অর্থের একটি অংশ চলে গেল পার্টির কোষাগারে। জবাব দেবে কে? জবাব দিতে হবে সিপিএমকেই।
আরও পড়ুন-বোকা বানিয়ে মজার দিন, মুসলিম গণহত্যার দাস্তান
এক সময় সিপিএম কৌটো বাজিয়ে অর্থ সংগ্রহ করত। সেই টাকার হিসেব নিয়েও দলের অন্দরেও প্রশ্ন উঠেছিল। আয়কর যথাযথ না দেওয়ার অভিযোগ ছিল। সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয় হল— আলিমুদ্দিনের তরফে যিনি এই হিসেবপত্র দেখতেন তাঁর দেহ পাওয়া গিয়েছিল বাইপাসের ধারে। আরও অনেক মৃত্যুর মতো সেই রহস্যের সমাধান হয়নি আজও। পার্টির সূত্রে খবর, শহরের তিন বিশিষ্ট শিল্পপতির কাছে দলের এই অর্থকরির হিসেবপত্র পাওয়া যেতে পারে। যাঁদের মধ্যে একজন আবার একটি চ্যানেল করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন-কলকাতায় দুয়ারে সরকার
সিপিএম চাকরির দুর্নীতি প্রসঙ্গে গলার শিরা ফুলিয়ে এখন চিৎকার করতে শুরু করেছে। চিরকুটে চাকরি তো আছেই। লেভির অঙ্কটা একলাফে বেড়ে যেত সাংসদ আর বিধায়কদের বেতনের প্রশ্নে। লোকসভার সাংসদরা বেতনের ৭৫ হাজার টাকা এবং রাজ্যসভার সাংসদ বেতনের ৮৬ হাজার টাকা দলকে দিতেন। বিধায়কদের ক্ষেত্রেও অঙ্কটা প্রায় ৪০ হাজার টাকা। মাথায় রাখতে হবে, ৩৪ বছর ধরে গড়ে বামেদের সাংসদ সংখ্যা লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে ৪০ জন ছিল। বিধায়ক সংখ্যা গড়ে ২০০ জন। তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, সাংসদ ও বিধায়কদের কাছ থেকে একটা সময় বিরাট অঙ্ক সিপিএম পেত যা অন্য দলের ছিল না। তৃণমূল বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, লেভির টাকা পেত দল। দল দিত চাকরি। চাকরি পেত বেআইনি পথে। ফলে দলের টাকা বেআইনি পথে আসত তা মানতে কেন কষ্ট হচ্ছে সিপিএমের?