কেন্দ্রের স্বৈরাচারী সরকার আর নেই দরকার

স্যাঙাততন্ত্র গ্রাস করছে আজকের ভারতকে। ধর্মনিরপেক্ষতা উধাও হচ্ছে ক্রমশ। ইজরায়েলে যেভাবে সেখানকার সরকার বিচার বিভাগকে কবজা করতে চাইছে, সেই একই খেলা এখানেও। লিখছেন পূর্ণেন্দু বসু

Must read

ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে উত্তাল সেই দেশ। বিশ্ব জুড়ে এই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নামছেন। কোথাও ট্রাম্প, কোথাও বলসোনারো, কোথাও বা নেতানিয়াহু— এই সব স্বৈরতন্ত্রী একনায়কদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ফেটে পড়ছে। ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ স্বৈরশাসককে পরাজিত করার ক্ষমতা রাখে। মানুষের সহ্যের সীমা আছে। সেই সীমা অতিক্রম করলে মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই। ইজরায়েলের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভ ভারতের চলমান স্বৈরশাসনের প্রতি একটা বিরাট সতর্কবার্তা— একথা এখনও কেন্দ্রীয় শাসকদল হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি। যে চরম ঔদ্ধত্যে এদেশে গণতন্ত্র পদদলিত হচ্ছে, সংবিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে, একটি মাত্র ধর্মকে নিয়ে মাতামাতি চলছে তার সঙ্গে ইজরায়েলি সরকারের কাজকর্মের যথেষ্ট মিল আছে। এই শাসন বেশিদিন চলতে পারে না।
লক্ষ লক্ষ ইজরায়েলি জনগণ পথে নেমেছেন। ছাত্র-যুব, শ্রমিক, কর্মচারী-সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটছে। নেতানিয়াহু চাইছেন দেশের বিচারব্যবস্থাকে করায়ত্ত করতে। একে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে কলকারখানা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজধানী তেল আভিভের বিমানবন্দর বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে সে-দেশের শাসকরা। বিক্ষোভ-রত মানুষ সমস্ত বাধানিষেধ উপেক্ষা করে রাজধানীর পথে পথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তাঁদের হাতে-ধরা পোস্টারে লেখা! ‘কোনও মানুষই আইনের ঊর্ধ্বে নন’। কোনও পোস্টারে লিখা— নেতানিয়াহু, ট্রাম্প এবং পুতিনের গ্রেফতারের দাবি। খবর পাওয়া যাচ্ছে নেতানিয়াহু-র বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মানুষ। নেতানিয়াহু চান সেদেশে বিচারপতি নিয়োগের কমিটির রদবদল করে বিচারব্যবস্থাকে করায়ত্ত করতে। আমাদের দেশের (BJP Government) আইনমন্ত্রীও কলেজিয়াম পদ্ধতিতে বিচারপতি নির্বাচনের বিরোধিতা করছেন। তিনিও চাইছেন কলেজিয়ামে সরকারের প্রতিনিধি থাকুক। তবে এখনও তিনি দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মাথা নোয়াতে পারেননি। তাই ক্রোধের বশবর্তী হয়ে যথেচ্ছ অশালীন কথা বলছেন বিচারকদের।

নেতানিয়াহুর দল একটি চরম দক্ষিণপন্থী দল। যাঁদের প্রধান অস্ত্র হল— ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দমন-পীড়ন। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় শাসক দল ঠিক সেরকমই চরম দক্ষিণপন্থী একক ধর্মভিত্তিক একটি দল। যারা নানাভাবে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর দমন-পীড়ন চালায়। শুধু কি তাই? গত কয়েক বছর ধরে এদেশে ‘মোদিতন্ত্র’ কায়েম হয়েছে। ভারতের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ-যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে এই জমানায় তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয় আধিপত্যের অধীনে নিয়ে আসার প্রবল প্রচেষ্টা চলছে। সংবাদমাধ্যমকে সার্বিক নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশের সংসদকে এক হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে গেছে শাসকদল। বিরোধীদের মতপ্রকাশের আধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। শাসকদলই চিৎকার-চেঁচামেচি করে সংসদকে অচল করে দিচ্ছে! বিরোধী সাংসদ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করার মতো ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক কালে। যে যে রাজ্যে বিরোধী দলগুলির সরকার রয়েছে, সেইসব রাজ্যকে নানভাবে বঞ্চনা করা হচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হল পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের বকেয়া পাওনা আটকে রেখে, নতুন অর্থ বরাদ্দ না করে মানুষকে ভাতে মারার জঘন্য খেলা খেলছে মোদি সরকার।

আরও পড়ুন- সমুদ্রসৈকতে ছড়ায় ছবিতে সহজ পাঠ

একদিকে জাঁকিয়ে বসেছে স্যাঙাততন্ত্র, অন্যদিকে রাষ্ট্রক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সব ধরনের বিরোধিতা দমনের ব্যবস্থা পাকাপাকি রূপ নিচ্ছে। শাসক শিবিরের ব্যক্তি-সর্বস্ব রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রকৃত বিকল্প গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন নৈতিকতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক শক্তির জোট। দেশে দেশে স্বৈরতন্ত্র-বিরোধী গণ-আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে এদেশে সেই ব্যাপক গণবিক্ষোভ গড়ে তুলতে পারলে স্বৈরশাসনের অবসান নিশ্চিত হতে পারে। ‘দেশ বাঁচাও’, ‘সংবিধান বাঁচাও’ তথা ‘মোদি হটাও দেশ বাঁচাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে ব্যাপক মানুষের সমাবেশ-বিক্ষোভের মাধ্যমে ভারতকে স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে উদ্ধার করার কাজে এগিয়ে আনতে হবে মানুষকে। ‘ভয় নয়, জয়’-এর স্বপ্ন দেখাতে হবে মানুষকে।

আজকের সময়ে উল্লেখযোগ্য হল, এক রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মোদিতন্ত্রের বিরুদ্ধে দু’দিনের অবস্থানের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর লড়াইয়ের ঘোষণা। সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে, দেশ-ভাবনার নৈতিকতাকে ভিত্তি করে দেশব্যাপী সার্বিক জোট গড়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বৃহত্তর মানুষের ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মোদি হটানোর আন্দোলনে সাফল্য অর্জন করা। মোদি-বিরোধিতায় (BJP Government) অন্যদের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গী করে নতুন মাত্রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক-শাসকের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সফল সংগ্রামে এগিয়ে চলুন। প্রবল গণবিক্ষোভের তুফান-ঝড়ে গড়ে উঠুক মোদি-মুক্ত ভারত। গণতান্ত্রিক ভারত। দলের চেয়ে মানুষ বড়— এই নীতিবাক্য সকলের পাথেয় হোক।

Latest article