কোনমতে ভবানীপুর উপনির্বাচনে কোনওরকমে জামানত বাঁচিয়েছেন। গো-হারার পর গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যদিও নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “জয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন, তবে ম্যান অফ দা ম্যাচ আমি”! যা শুনে তাঁর অনুগামীরাও হেসে ফেলে ছিলেন। পেশায় আইনজীবী টিবরেওয়াল। মাত্র ছ’মাসের ব্যবধানে ৫৮,০০০-এ হারার হ্যাট্রিকের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। কিন্তু ভাঙবেন তবু মচকাবেন না ইমেজ নিয়ে ভবানীপুর উপনির্বাচনে নিজেকে “ম্যান অফ দা ম্যাচ” ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলকে বার্তা দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, প্রিয়াঙ্কা হয়তো ফের ভোটে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। মানে, ৩০ অক্টোবর যে চারটি কেন্দ্রে ফের উপনির্বাচন, সেই আসনগুলির মধ্য থেকে যেন কোনও একটিতে বিজেপি তাঁকে টিকিট দেয়।
আশায় ছিলেন প্রিয়াঙ্কাদেবী। কিন্তু সে গুড়ে বালি! আজ, বৃহস্পতিবার চার কেন্দ্রের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। সেখানে নাম নেই এন্টালি ও ভবানীপুরের হেরো প্রার্থী প্রিয়াঙ্কার। আসলে ৫৮ হাজার বিভীষিকা! এই সংখ্যা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না প্রিয়াঙ্কার। ছ’মাসের মধ্যে ৫৮,০০০-এ হারার হ্যাট্রিকের কৃতিত্ব থেকে টিবরেওয়ালকে বঞ্চিত করল দল। ফের যদি ৫৮ হাজার হয়, তাহলে তো হারের হ্যাট্রিক! এই ঝুঁকি আর নিতে চায়নি বঙ্গ বিজেপি। তাই দিল্লিতে প্রিয়াঙ্কার নামও তারা পাঠায়নি।
আরও পড়ুন-মা দুর্গাই ঠিক করুন বিজেপির পুজোয় আসবেন কি-না! বিস্ফোরক জয়
চার কেন্দ্রে উপনির্বাচনের যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি, তা এরকম- দিনহাটায় অশোক মন্ডল, শান্তিপুরে নিরঞ্জন বিশ্বাস, খড়দহে জয় সাহা এবং গোসাবায় পলাশ রাহা।
এবার আরও একটু ভেঙে বলা যাক প্রিয়াঙ্কার ৫৮ হাজারে হারের জুজু!
৫৮ হাজার। এই একটি সংখ্যা। তা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের! ৫৮ হাজার যেন বিভীষিকা প্রিয়াঙ্কার কাছে! কিন্তু কেন?
মমতা নামক বাঘের মুখে পড়ে নিশ্চিত হার। সেটা ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিজেপি ও তাদের প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালও জানতেন। কিন্তু প্রচারের আলোয় নিজেকে আলোকিত করার অপচেষ্টায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা। যা কার্যত গ্যাস খাওয়ার সামিল ছিল।
যাইহোক, অনেক দৌড়ঝাঁপ করার পর গত রবিবার ভবানীপুর উপনির্বাচনে ফল প্রকাশের পর দেখা যায় বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই ফলপ্রকাশের পরই প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের ৫৮ হাজারি ”গাঁট” নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। যা সোশ্যাল মিডিয়াতেও ট্রোল।
আরও পড়ুন-“বিজেপি মোকাবিলায় ব্যর্থ কংগ্রেস, নতুন ভারত গড়তে নেতৃত্ব দিক বাংলা”: মমতা
প্রসঙ্গত, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এন্টালি কেন্দ্র থেকে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু ওই কেন্দ্রেও বিজেপি প্রার্থী হিসেবে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল তৃণমূল প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহার কাছে ৫৮,২৫৭ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ, মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক প্রিয়াঙ্কার হারের ব্যবধান সেই ৫৮ হাজার!
তবে গো-হারা হেরেও কোনও অনুশোচনা বিজেপি প্রার্থীর। ভাঙবো তবু মচকবো না ফর্মুলাতে প্রিয়াঙ্কার দাবি, ”দল হারলেও ভবানীপুরের নির্বাচনে আমি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও আমি ২৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছি। আমি আমার কাজ তাই চালিয়ে যাব।”
আবার প্রিয়াঙ্কা এই বিপর্যয়ের পর তাঁর দল বিজেপির দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর কথায়, ”আমি স্বীকার করতে বাধ্য নিচ্ছি, ভবানীপুরে আমাদের দলের সংগঠনের দুর্বলতা ছিল। ভোটে জেতার জন্য যে সাংগঠনিক শক্তির প্রয়োজন হয়, তা আমাদের ছিল না। একজন নেতা কখনও নির্বাচন জেতেন না, একজন নেতা কখনও নির্বাচন হারেন না। জেতে বা হারে সংগঠন।” অর্থাৎ, ভবানীপুরে বিজেপি তাঁকে বাঘের মুখে ছেড়ে কার্যত মজা দেখছিল, এদিন অভিমানী প্রিয়াঙ্কার মন্তব্যেই সে কথা স্পষ্ট।”
কিন্তু রাজনৈতিক মহলে চর্চা সেই ৫৮ হাজার! এই সংখ্যাই যেন বিভীষিকা প্রিয়াঙ্কার কাছে। এই সংখ্যা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না প্রিয়াঙ্কার!!! তাই ছ’মাসের মধ্যে ৫৮,০০০-এ হারার হ্যাট্রিকের কৃতিত্ব থেকে টিবরেওয়ালকে বঞ্চিত করল দল।