অলোক সরকার: ৬ ওভারে ৯৬। হিসেবটা তখন এইরকম। ঘড়ি বলছে ১০টা ৪০। কঠিন অঙ্কের সামনে ইডেনের সবক’টা আসন তখনও ভর্তি।
কারণ আছে। সেটা রিঙ্কু সিং। এইমাত্র নামলেন। রাসেলের প্রস্থানে রিঙ্কুর প্রবেশ। আর একটা আতিনাটকীয় ঘটনা কি ঘটবে আজ? অপেক্ষা। রিঙ্কু মানে পাঁচ ছক্কা। উল্টোদিকে নীতীশ হাফ সেঞ্চুরি পার। দিনভর চেঁচিয়ে ইডেন রণক্লান্ত। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে মাঝেমধ্যে আওয়াজ উঠছে রিঙ্কু-রিঙ্কু!
আরও পড়ুন-নৈতিক আচার্য হলেন মুখ্যমন্ত্রীই, হয় সই করুন নইলে বিল ফের পাশ করাব, সাফ কথা ব্রাত্যর
স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটের আগে জেনসেনকে পরপর দু’বলে দুটো ছক্কা মেরে রিঙ্কু জমিয়ে দিয়েছিলেন। তবে নীতীশ ফিরে গেলেন। ৪১ বলে ৭৫। জায়ান্ট স্ক্রিনে হিসেব বলছে ২১ বলে ৬৪….২০ বলে ৬৩… ১৭ বলে ৫৬….। শেষমেশ দু’ওভারে ৪৮। রিঙ্কুর একটা ক্যাচ পড়ল স্কোয়ার লেগে। পৌঁছলেন পঞ্চাশে। এবার সেই মোতেরার ছবি। ৬ বলে ৩২।
না, শেষপর্যন্ত হয়নি। শার্দূল ফিরে গেলেন ১২ রানে। কেকেআর তখনই জয়ের হিসাবের বাইরে। হায়দরাবাদ জিতল ২৩ রানে। বলা হয়নি রিঙ্কু নট আউট থেকে গেলেন ৫৮ রানে। আরও একটা অসাধারণ লড়াই। কিন্তু পাশে কাউকে পাননি রিঙ্কু। নাইটদের দৌড় থেমে গেল ২০৫ রানে। হিসেব এখন দুটো জয়, দুটো হার।
আরও পড়ুন-রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকা ফেরত দিন, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব: শাহকে বিঁধে অভিষেক
মার্কো জেনসেন আর ভুবনেশ্বর কুমার মিলে কেকেআরকে যে ধাক্কা দিলেন, সেটা মারাত্মক। ২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশাহারা অবস্থা। নাইটদের টপ অর্ডার ব্যাটিং প্রথম ম্যাচ থেকে ভুগিয়ে যাচ্ছে। পুরনো রোগ। যা চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের জমানাতেও শোধরায়নি। তবে নীতীশ আর জগদিশন মিলে এরপর লড়াই দিলেন। ঝিমিয়ে পড়া ইডেন জেগে উঠে আবার ‘কেকেআর- কেকেআর’ শুরু করে দিল।
প্রথম ওভারে গুরবাজকে (০) হারিয়েছে কেকেআর। চতুর্থ ওভারে পরপর দু’বলে সুপার সাব ভেঙ্কটেশ (১০) ও সুনীল নারিন (০) আউট হয়েছেন। এঁরা কেউ ভাল বলে আউট হননি। আউট হয়েছেন উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছেন বলে। গুরবাজ আর ভেঙ্কটেশ আউট হওয়ার পর নারিনকে উপরে পাঠিয়ে ফাটকা খেলেছিল কেকেআর। যেটা আগেই ব্যর্থ প্রকল্প বলে প্রমাণিত। ভরা ইডেনের সামনে আরও একবার এটাই ঘটল ।
আরও পড়ুন-বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনায় কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
কেকেআর ব্যাটিং যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দায় এড়াতে পারে না বোলিংও। ব্রুক ভাল ব্যাট করলেন ঠিক আছে, কিন্তু হায়দরাবাদকে ২২৮ রান করতে দেওয়ার পর ম্যাচ আগেই চলে গিয়েছিল। তাও ভাল শুরু করতে পারলে সুযোগ ছিল। জগদীশন ৩৬ রান করেছেন। নীতীশ যখন একদিকে লড়ে যাচ্ছেন, তখন তিনিই পাশে থাকলেন। কিন্তু রাসেল? আবার উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে গেলেন। মোহালিতে প্রথম ম্যাচে ৩৫ করেছিলেন। তারপর তাঁর রান ০, ১ ও ৩। একটা সময় রাসেল থাকলে ভরসা থাকত। এখন তাঁর ব্যাট আর ঝলসে ওঠে না!
বাংলা বছরের শেষদিনে ইডেন আবার ছিল কেকেআরের। সন্ধ্যায় মাঠমুখী জনতার ভিড়ে বেগুনি-হলুদ জার্সি। এই ছবিটাই প্রথম ম্যাচে অদৃশ্য ছিল। সেদিন জনতার মধ্যে ভাগাভাগি ছিল কে বিরাট পক্ষ হবে, আর কে নাইট পক্ষ। এই সানরাইজার্সের দলে এমন কেউ নেই যিনি কিং কোহলির মতো জনতাকে সম্মোহিত করতে পারেন। তা সে আধুনিক ক্রিকেটের তারকা হ্যারি ব্রুক যতই মাঠ মাতানো সেঞ্চুরি করে যান।
আরও পড়ুন-এবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে তলব সিবিআইয়ের
ইংল্যান্ড ওপেনার খুব বেশিদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেননি। কিন্তু এসে থেকে শোর মাচিয়ে দিয়েছেন। মায়াঙ্ক আগরওয়াল (৯) আর রাহুল ত্রিপাঠী (৯) পরপর যখন আউট হলেন, সানরাইজার্সের রান ৫৭/২। সেখান থেকে দলকে ১২৯ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন ব্রুক আর মার্করাম (৫০)। তখনই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে ইডেনের অতিথিরা বড় রানই করছে। শেষপর্যন্ত হায়দরাবাদের রান দাঁড়াল ২২৮/৪। ব্রুক ৫৫ বলে ১০০ নট আউট থেকে গেলেন। নীতীশ টসে জিতে আগে হায়দরাবাদকে ব্যাট করতে দেন। এখানে পরে ব্যাট করার সুবিধা আছে। সবথেকে বড় সুবিধা হল উইকেট আরও শুকিয়ে যাবে। আরও স্লো হবে। কিন্তু ব্রুক যেভাবে এই উইকেটের উপর রাজত্ব করলেন তাতে প্রশ্ন উঠতে পারে নীতীশ কি উইকেট বুঝতে ভুল করলেন? তাঁর বোলাররা এই উইকেট থেকে কোনও সুবিধা আদায় করতে পারেননি।
আরও পড়ুন-অধ্যক্ষের নিশানায় বিচারপতি!
নারিন এদিন ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়েছেন। কিন্তু বাকি দুই রহস্য স্পিনার বরুণ ও সুয়শ দিলেন ৪১ ও ৪৪ রান। কেকেআরের জন্য অবশ্য ভাল-মন্দ দুটো জিনিসই ঘটল। আন্দ্রে রাসেল এদিনই প্রথম বল করলেন। ২.১ ওভার হাত ঘুরিয়ে তিনটি উইকেট নিলেন। কিন্তু তিনি অসমাপ্ত ওভার রেখে মাঠ ছাড়লেন পায়ে টান ধরায়। আগেও একবার বেরিয়ে ফেরত এসেছিলেন ড্রে রস। পরেরবার বেরিয়ে গিয়ে আর বল করতে আসেননি। পরে ব্যাট হাতেও ব্যর্থ। হারের এটাও কারণ।