নয়াদিল্লি : জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্যা এবং তাঁর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ও হিন্দু চরমপন্থীদের ভূমিকা ভারতের ইতিহাস চর্চার নিরিখে অগুরুত্বপূর্ণ ও ‘ছোট বিষয়’ বলে মনে করে মোদি সরকার। একইভাবে ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গাও বিজেপি সরকারের চোখে অপ্রাসঙ্গিক। আর এই বেনজির যুক্তি তুলে ধরেই এবার পাঠ্যসূচি ছাঁটাইয়ের নির্লজ্জ সাফাই দিতে নামল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকা এনসিইআরটি। একইসঙ্গে স্বীকার করা হল, বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে নিশ্চুপে এই বিষয়গুলি পড়ুয়াদের পাঠ্যসূচি থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে।
আরও পড়ুন-ফোর-পাস রাজার হাতে দেশ! মোদিকে তীব্র আক্রমণ কেজরির
প্রসঙ্গত, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এনসিইআরটির অনুমোদিত পাঠ্যসূচি থেকে বাদ যাওয়ার পর রাজনৈতিক ও শিক্ষামহলে প্রশ্ন ওঠে। শিক্ষাক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী ভাবনা অনুসরণ করে ছাত্রছাত্রীদের বিকৃত ও অসম্পূর্ণ ইতিহাস শিখতে বাধ্য করা হচ্ছে অভিযোগ তোলেন শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট ঐতিহাসিকরা। বাদ পড়া বিষয়গুলির মধ্যে যেমন রয়েছে ৩০০ বছরের মুঘল ইতিহাসের পর্ব, তেমনই আছে গান্ধীহত্যা, গুজরাত দাঙ্গা এমনকী স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের নামও। এই বিষয়গুলি স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলা ছাড়াও বহু ক্ষেত্রে বিনা বিজ্ঞপ্তিতে পাঠ্য পুস্তকে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেন এফআইআর নয়, জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট
যেমন, দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকের একটি অংশ, যেখানে বলা হয়েছে, “গান্ধীজি তাদের বিশেষভাবে অপছন্দ করতেন যারা হিন্দুত্বের মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন বা যারা চেয়েছিলেন ভারত হিন্দুদেরই দেশ হয়ে উঠুক।” এই অংশটি বাদ গিয়েছে। একইভাবে “পাকিস্তান ছিল মুসলমানদের জন্য,” মুছে ফেলা হয়েছে। এসম্পর্কে এনসিইআরটির আজব সাফাই, “ছোট” পরিবর্তনগুলি ঘোষণা করার প্রয়োজন নেই। কারণ সেগুলি প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে। এনসিইআরটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা এক বিবৃতিতে কাউন্সিল বলেছে, বাদ দেওয়া অংশগুলি গত বছরই ঘোষিত সরকারি তালিকায় স্থান পায়নি। শিক্ষক এবং ছাত্রদের স্তরে বিভ্রান্তি এড়াতে ” মুছে ফেলা ছোট ছোট বিষয়গুলি” সম্পর্কে কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। সংস্থার বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সময়ই প্রত্যেক বইয়ের যৌক্তিকতার বিশদ বিবরণ ওয়েবসাইটে পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে পিডিএফ আকারে আপলোড করা হয়। পাঠ্যপুস্তকের পুনর্মুদ্রণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া যা প্রতি বছর কার্যকর হয়।”
আরও পড়ুন-সারুল পুজোয় প্রকৃতির আরাধনা জঙ্গলমহলে
২০২২ সালের জুনে এনসিইআরটি সম্প্রতি বাজারে আসা পুনর্মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন এবং মুছে ফেলা অংশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী সহ অনেক মুছে ফেলা অংশের বিষয় নিয়ে তখন অবহিত করা হয়নি। যেমন দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানে “ গান্ধীর হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অটল সাধনা হিন্দু চরমপন্থীদের এতটাই উত্তেজিত করেছিল যে তারা গান্ধীজিকে হত্যা করার জন্য বেশ কয়েকটি চেষ্টা করেছিল… গান্ধীজির মৃত্যু দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলেছিল… যে সংগঠনগুলি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তৎকালীন সরকার… আরএসএসের মতো সংগঠনগুলিকে কিছু সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল…এই লাইনগুলি সংশ্লিষ্ট বই থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।এনসিইআরটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “শিক্ষক এবং ছাত্রদের স্তরে বিভ্রান্তি এড়াতে সামান্য মুছে ফেলা অংশ বা নতুন সংযোজন সম্পর্কে ঘোষণা করা হয় না।” যৌক্তিক অনুশীলনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ছোটখাটো অংশ মুছে ফেলা হয়েছে, সাফাই এনসিইআরটির।