প্রতিবেদন : ঠিক একই কৌশল সর্বত্র। ভোট এলেই হিন্দুত্বের হাওয়া উসকে সাম্প্রদায়িক তাস খেলার মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়ে যায় ভারতীয় জনতা পার্টির। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে বিধানসভা ভোটের মুখে হিন্দু সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের পথে হাঁটল রাজ্যের বিজেপি সরকার। ঠিক যে ছকে গুজরাত বিধানসভা ভোটের আগে দাঙ্গাবাজ-খুনি ও বিলকিস বানোর ধর্ষকদের যাবজ্জীবন কারাবাস থেকে মুক্তি দিয়েছিল বিজেপি সরকার। এবার সেই ছক কার্যকরের চেষ্টা কর্নাটকেও।
আরও পড়ুন-আশ্রয় শিবিরে চরম দুরবস্থা, বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচনা গুয়াহাটি হাইকোর্টের
এমনিতেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া জোরদার দক্ষিণের এই রাজ্যে। ফলে যেকোনওভাবে ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া গেরুয়া শিবিরের ভরসা এবার অপরাধীরাই। মেরুকরণ, বিদ্বেষ ও ঘৃণার রাজনীতিকে নির্বাচনে হাতিয়ার করতে ঘৃণাভাষণ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ৩৮৫টি মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিল কর্নাটকের এস আর বোম্মাই সরকার। এই সমস্ত মামলায় অভিযুক্তদের সিংহভাগই বিভিন্ন কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সক্রিয় নেতা ও কর্মী। দক্ষিণের এই রাজ্যে পরাজয় ঠেকাতে শেষ চেষ্টা হিসেবেই হিন্দুত্ববাদীদের মাঠে নামাতে চাইছে বিজেপি।
আরও পড়ুন-ভূমিধস নিয়ে হেলদোল নেই, চারধাম যাত্রা নিয়েই ব্যস্ত বিজেপি সরকার
তথ্য জানার অধিকার আইনে করা এক প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিজেপি সরকার সাতটি অধ্যাদেশ জারি করে ৩৮৫টি ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যার মধ্যে ১৮২টি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক ভাষণের মামলা আছে। একই সঙ্গে আছে গোহত্যা বন্ধে নজরদারির নামে মারধর, ভয় ও হুমকি দেওয়া এবং সাম্প্রদায়িক হিংসায় যুক্ত থাকার অভিযোগ। শুধু তাই নয়, টিপু সুলতানের জন্মজয়ন্তী পালন ঘিরে অশান্তি, ধর্মান্তকরণের অভিযোগে তুলে হিংসার মতো ঘটনাও আছে। এই মামলাগুলি প্রত্যাহারের ফলে প্রায় এক হাজার জন কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা মুক্তি পেয়েছেন। যার মধ্যে আছেন বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিনহা ও বিধায়ক রেণুকাচার্য। মামলাগুলি প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির দুই মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা এবং বাসবরাজ বোম্মাই।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের আমলে। নিম্ন আদালতের এক বিচারক অবশ্য ভোটমুখী কর্নাটকে বিজেপিকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছেন। কারণ সরকার মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও উত্তর কর্নাটকের সিরসির এক ম্যাজিস্ট্রেট সাম্প্রদায়িক হিংসার একটি মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি হননি। ওই মামলায় অভিযুক্ত ৬৬ জনের বিরুদ্ধে তিনি বিচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আইন অনুযায়ী সরকার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করতেই পারে। কিন্তু সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিচারক। তবে বেশিরভাগ বিচারকই সরকারি সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন।