মণীশ কীর্তনিয়া, মুরারই: বাংলায় একদিনের সফরে এসে জোড়া আক্রমণে বিধ্বস্ত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার কলকাতায় রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রবীন্দ্রানুরাগীর চিত্র তুলে ধরে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)। বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য বাংলায় এসে না জেনে মনীষীদের সম্বন্ধে ভুল কথা বলা উচিত নয়। অন্যদিকে বীরভূমের মুরারইয়ে জনসংযোগ যাত্রায় উপচে পড়া জনসভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাঁর পুত্র জয় শাহকে সরাসরি তোপ দেগে বলেছেন, কেন গ্রেফতার নয়— এই প্রশ্নটা করবে কে? তৃণমূল করছে। তাই আক্রমণ বাড়ছে। দাঁত-নখ বের করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। একদিকে এজেন্সির দাপাদাপি, অন্যদিকে বঞ্চিত করার নোংরা খেলা। সব কিছুর জবাব দেবেন মানুষ।
এদিন অলিপুরের ধনধান্য স্টেডিয়ামে ২৫ বৈশাখের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম না করে বলেন, আমরা যেন কখনও না ভাবি যে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান সে কথাও বলা যায়, বিদ্যাসাগরের মূর্তিও ভেঙে ফেলা যায়। আবার নির্বাচনের কারণে না জেনে লিখে নিয়ে এসে অথবা টেলিপ্রম্পটারে লিখে নিয়ে এসে অনেক বড় বড় কথা বলা যায়। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কে না জেনে শুধু লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে কাগজ দেখে বা টেলিপ্রম্পটার দেখে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভাষণ দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে তিনি বলেছেন, মণিপুর জ্বলছে, সেখানে বিজেপির কোনও কেন্দ্রীয় দল যাচ্ছে না। অথচ বাংলায় রোজ একটা করে দল আসছে। এখনও পর্যন্ত ১৫১টি দল পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলার দাবিতে দিল্লিতে কৃষক ভবনের সামনে লাগাতার ধরনা
মঙ্গলবার বীরভূমের মুরারইয়ের জনসভায় বক্তব্য রাখার সময়েই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) কার্যত বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন। তিনি বলেন, বাবুরা গরুচোর ধরতে বেরিয়েছে। ইডি আদালতে বলছে, গরু চুরি করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মত দিয়েছে বিএসএফ। অভিষেক বলেন, বিএসএফ কার অধীনে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে। এজেন্সির ক্ষমতা আছে অমিত শাহকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে? এরপর চড়া গলায় তিনি বলেন, বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে দিল্লি। আইন আইনের পথে চলবে। আমি কাউকে ডিফেন্ড করছি না। এরপর অভিষেকের প্রশ্ন, সুকন্যা মণ্ডলের দেড়শো গুণ সম্পত্তি বেড়েছে বলে সুকন্যাকে গ্রেফতার করেছে। অমিত শাহের ছেলের তো আশি হাজারগুণ সম্পত্তি বেড়েছে। তবে কেন অমিত শাহর ছেলে গ্রেফতার হবে না? কেন অমিত শাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না? এরপর জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, বিএসএফ কার অধীনে? বিএসএফ স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম অমিত শাহ। তাহলে বিএসএফ মদত দিয়ে গরুপাচার করে যে টাকা রোজগার করে সেটা অমিত শাহর কাছে যায় না তাঁর ছেলের কাছে যায় এই প্রশ্ন কে করবে! এই প্রসঙ্গে মিডিয়াকেও একহাত নিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, সংবাদমাধ্যম কোনওদিন এই প্রশ্নগুলি করবে না।
এরপর তিনি চলে যান বাংলার বঞ্চনার প্রসঙ্গে। বলেন, আমরা চোখে চোখ রেখে লড়াই করছি, একমাত্র আমরাই প্রশ্ন করছি তাই বাংলার টাকা, আপনাদের ১০০ দিনের টাকা কেন্দ্র জোর-জবরদস্তি আটকে রেখেছে। বীরভূম জেলায় ১৪ লক্ষ লোক রয়েছে, যাদের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে ১০০ দিনের কাজের উপর। আর ৮৩ হাজার লোক রয়েছে যারা দু’বছর আগে কাজ করে বসে আছে, এখনও প্রাপ্য টাকা পায়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় এসে অজ্ঞতার ফলে আবারও রাষ্ট্রীয় সংগীত ও রাষ্ট্রীয় গান নিয়ে ভুল করায় অভিষেক তাঁকে কটাক্ষ করে বলেন, কেউ দিল্লি থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে, কবিগুরুকে সম্মান জানাতে তিনি বলছেন রাষ্ট্রীয় গান নাকি কবিগুরু লিখেছিলেন। জাতীয় সংগীত আর রাষ্ট্রীয় গান কিন্তু আলাদা। বিজেপির বহিরাগত নেতারা এটা জানেন না। জাতীয় সংগীত আলাদা রাষ্ট্রীয় গান আলাদা। একটা হচ্ছে জনগণমন..আরেকটা হচ্ছে বন্দে মাতরম…। বন্দে মাতরম লিখেছেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আর জনগণমন লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।