কুণাল ঘোষ: আকাশে কখনও শরতের মেঘ। কখনও বিরক্তির বৃষ্টি। রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডির যুগ পার হয়ে পেনড্রাইভেও কিশোরকুমার ভেসে আসেন, ‘আমার পূজার ফুল..।’
উদ্বোধনের আলো ঝলমল পুজোপ্রাঙ্গণ। তবু, কর্তব্য ভোলে না বাংলা। করোনা হোক বা দুর্ঘটনা; অতিবৃষ্টির অসহায়তা হোক বা বাঘের হানায় মৃত্যু, বিপন্ন এলাকা আর বিপন্ন পরিবারের পাশে রাজ্য সরকার, তৃণমূল কংগ্রেস।
রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের শেষপ্রান্ত। মিনির বাবা-মায়ের শখ ছিল মেয়ের বিয়েতে ঝাড়বাতি লাগানোর। শেষে সেই টাকা রহমতকে দিয়ে দিলেন তাঁরা। সে যেন কাবুলে মেয়ের কাছে ফিরে যেতে পারে। বাবা আর মেয়ের মিলনের সেই মঙ্গলালোকের কাছে ম্লান হয়ে যাবে ঝাড়বাতির আলো।
বাংলা রবি ঠাকুরের রচনাবলিকে পরম ধর্মগ্রন্থের মতো শ্রদ্ধা করে। মানবধর্ম। উৎসব হচ্ছে, হবে। কিন্তু তার সঙ্গে চলবে সমাজসেবা। চলবে বিপন্নের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া। মন ভরে যায়, যখন দেখি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঙ্গেই বিভিন্ন পুজো কমিটির বস্ত্রদানের আয়োজন। যাঁরা আর্থিকভাবে একটু পিছিয়ে, তাঁদের মুখেও আমরা দেখতে চাই হাসি। আলো জ্বলুক শহরের সব পরিবারে, আলো জ্বলুক প্রাকৃতিক ও চক্রান্তের প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াই করা প্রতিটি গ্রামে।
আরও পড়ুন-বাংলার ঢাকিদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান
বস্তুত এবার মায়ের ত্রিনয়ন যেন বাংলার ত্রিনয়ন হয়ে উঠছে।
প্রথম নয়ন : গোটা রাজ্যের প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি মানুষের উন্নয়ন। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য সামাজিক স্কিম নিয়ে মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল, কিংবা সমুদ্র, মানুষের জীবনযুদ্ধের সংগ্রামে যথাসম্ভব সহযোগিতা। হাত বাড়ালেই বন্ধু এই রাজ্য সরকার, এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
(প্রথম পাতার পর)
দ্বিতীয় নয়ন: কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি, অপশাসন, বৈষম্য, প্রতিহিংসার রাজনীতি, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপোসহীন প্রতিবাদ, লড়াই। এই নয়ন দেখছে বাংলাসহ গোটা দেশের আমজনতার, শ্রমজীবী মানুষের, মধ্যবিত্তের, নিম্নবিত্তের সঙ্কট। দেশ বিপন্ন। চাই মুক্তির সংগ্রাম। বাঁচার লড়াই।
তৃতীয় নয়ন: এবার বাংলার বিধানসভার নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে বাংলার এই তৃতীয় নয়নটি কত তীব্র, কত তীক্ষ্ণ। বাংলা মন খুলে সকলকে আপন করে। কিন্তু বাংলা অপমান সহ্য করবে না। বাংলা সম্মান নিয়ে খেলা করতে দেবে না। বাংলা একমুঠো কম খাবে, সেটাও হয়ত বরদাস্ত করবে। কিন্তু কিছু ডেইলি প্যাসেঞ্জার দিল্লির দাদাগিরি দেখিয়ে ঘরের মেয়েকে অসম্মান করবে, ঘরের ছেলেকে হেনস্থা করবে, রাজনীতিতে না পেরে অন্য চক্রান্ত করবে, বাংলার তৃতীয় নয়ন জ্বলে উঠে অগ্নিনিক্ষেপ করেছে, করছে, এবং আরও করবে।
ত্রিনয়নী মায়ের পুজো করছে ত্রিনয়নী বাংলা, দেশ, বিশ্ব।
সংলাপ আবার ইতিহাসে পুনরাবৃত্ত হতে চলেছে, বাংলা আজ যা ভাবে, গোটা দেশ কাল তা ভাবে।
কবির শব্দবিন্যাসে সময়োপযোগী পরিবর্তন স্পষ্ট- বাংলা আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে। বাংলার হাত ধরে ভারত আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
মায়ের আরাধনা, নারীশক্তির আরাধনায় যখন মাতল রে ভুবন, আর্তনাদের মত বিজেপির নেতারা বলছেন, পুজোর জন্য উপনির্বাচনের প্রচারে সমস্যা হবে।
এরা কি উন্মাদ?
নির্বাচন কমিশন একবারে সব উপনির্বাচন করে দিলে ভালো হত। লক্ষ্মীপুজো থেকে কালীপুজোর মধ্যে আবার চারটি কেন্দ্রের উপনির্বাচন নিয়ে কাজ করতে হত না। কিন্তু কী আর করা যাবে? সে তো আমাদের হাতে নয়।
তাই বলে পুজোর জন্য প্রচারে সমস্যা?
জনবিচ্ছিন্ন বিজেপি সারাবছর না পড়ে পরীক্ষার মুখে বই নিয়ে বসতে চায়। এভাবে পাশ করা যায় না।
আসলে গোড়ায় গলদ। বিজেপি নেতারা নিজের পাড়ায় গ্রহণযোগ্য নন। ক্লাবে যুক্ত নন। বছরভর পুজো বা অন্যান্য কর্মযজ্ঞ নেই। তাই হল ভাড়া করে পুজো করতে গিয়ে নিজেদের দলের মধ্যে ঝগড়া চলে।
কত বড় জনসংযোগযোগহীন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হলে কেউ বলে, পুজোতে অসুবিধে।
আসলে ওরা পুজোকেও ভয় পাচ্ছে।
আরও পড়ুন-আবার যমালয়ে জীবন্ত মানুষ
পুজো মানে মানুষ। পুজো মানে সমষ্টির উদ্যোগে উৎসব। এতে যারা মিশে থাকে, মণ্ডপে মণ্ডপে উদ্যোক্তা যাঁরা, কিংবা যাঁরা আমন্ত্রিত অতিথি, তাঁদের কি আলাদা জনসংযোগ লাগে? প্রচার মানে কি শুধু ভোট দিন আমরা হিন্দু বলে মিছিল আর চিৎকার? যাঁরা এলাকার পুজোয় মিশে থাকছেন, তাঁদের কি জনসংযোগ চলছে না? যাঁরা ‘জাগোবাংলা’র স্টল করে বসছেন, মানুষ কি তাঁদের দেখছেন না?
হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী পুজোঅর্থনীতি চালু রেখে মানুষকে সাহায্যের জন্য কমিটিকে অনুদান দেন। হ্যাঁ, বিশ্বের দরবারে বাংলার পুজোকে প্রতিষ্ঠার জন্য কার্নিভাল করেন ( করোনা পরিস্থিতি ব্যতিক্রম)। হ্যাঁ, বাংলায় পুজো উদ্বোধনের আমন্ত্রণের তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীই একনম্বরে থাকেন। হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব এই উৎসব ভালোবাসেন এবং পল্লীতে পল্লীতে ঘোরেন।
তাই ভোটের সময় আমরা হিন্দু আমাদের ভোট দাও বলার দরকার হয় না। যারা বলে তাদের মানুষ বিশ্বাস করে না।
এবার বিজেপি পুজোকেও ভয় পাচ্ছে।
বলছে পুজোর জন্যে নাকি প্রচারে সমস্যা।
আসলে ত্রিনয়নের বাংলাকে ভয় পেতে শুরু করেছে জনবিচ্ছিন্ন জনবিরোধী বিজেপি।
বাংলার মানুষ নারীশক্তির আরাধনা করছেন আধ্যাত্মিক আন্তরিকতা থেকে।
মানুষ নারীশক্তিকে সমর্থন করছেন সুপ্রশাসনের বিশ্বাস থেকে।
ত্রিনয়নী মায়ের পুজোর শুভমুহূর্তে ত্রিনয়নী বাংলা সাক্ষী থাকছে অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করে শুভশক্তির উদয়ের, এবং বাংলার গণ্ডি অতিক্রম করে তার দেশব্যাপী বিস্তারের।