সুখেন্দুশেখর রায়: গত বছর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গ ও আরও চারটি রাজ্যকে জিএসডিপি-র অনুপাতে সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত ঘোষণা করে অবিলম্বে সংশোধনী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এসব প্রচার করার সময়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়নি, ২০১১-১২ সালে অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম অর্থবর্ষে বাংলার ঋণের বোঝা ছিল এসজিডিপি-র ৪৫ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবর্ষে তা কমে দাঁড়ায় ৩৫.৫ শতাংশ। আবার ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত ১২টি রাজ্যের মধ্যে বাংলা নেই। যদিও রাজস্ব ঘাটতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, ১০০ দিনের কাজের টাকা ও গ্রামীণ আবাস যোজনার নায্য পাওনা কেন্দ্রীয় সরকার পুরো আত্মসাৎ করা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঋণের বোঝা বাড়তে দেয়নি। ২০২২-২৩ অর্থিক বছরে সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত ১২টি রাজ্যের মধ্যে বিজেপি-শাসিত রাজ্য গোয়া, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর রয়েছে। বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি হল পাঞ্জাব, রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশ, কেরল, বিহার। তাই কি এবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) বেলুন চুপসে গেল?
আরও একটি বড় কারণ আছে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার ও বিশ্বব্যাঙ্ক পূর্বাভাস দেয় যে জিডিপির অনুপাতে ভারতের ঋণের বোঝা ৮৪ শতাংশ ছুঁতে পারে। ক্যাগ-এর রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে ঋণের বোঝা ছিল ৫২.৫ শতাংশ। এখন তা ৩১.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াল ৮৪ শতাংশে। মোদি সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসে। সেসময় দেশের ঋণের বোঝা ছিল ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। আর মোদি শাসনের ৯ বছর পরে অমৃতকালে তা দাঁড়িয়েছে ১৫৫ লক্ষ কোটি টাকায়। সর্বকালীন রেকর্ড। তার মানে দেশের শিশুরা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে জন্মাচ্ছে। অন্যদিকে ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকায় বুলেট ট্রেন, ৮৫০০ কোটি টাকায় প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির জন্য অত্যাধুনিক বিমান, কোভিড বিপর্যয় সত্ত্বেও অপ্রয়োজনীয় সেন্ট্রাল ভিস্তায় প্রাথমিকভাবে ২০,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। কর্পোরেট কর ১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ। আর ব্যক্তিগত করদাতাদের বার্ষিক আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি হলে সর্বোচ্চ দেয় কর হল ৩০ শতাংশ। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের জেলে থাকার কথা। অথচ, দেউলিয়া আইনের সুযোগ নিয়ে তারা ব্যাঙ্ক ও জনসাধারণের লক্ষ-কোটি টাকা হাতিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, ওই কালা কানুনটি মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মধ্যেই তা সংসদে পাশ করায়। অমৃতকালই বটে। শ্রীলঙ্কার আর্থিক বিপর্যয়ের নজির টেনে গতবছর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাংলা-সহ পাঁচটি রাজ্যকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। এবার কি তারা শ্রীলঙ্কা, লেবানন, ঘানা, পাকিস্তান, ইউক্রেনের উদাহরণ তুলে ভারত সরকারকে নোটিশ পাঠাবে, নাকি ঋণের পাহাড়ে চড়ে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর বৃন্দগানের কোরাস গাইবার অনুমতি দেবে ? আদতে কেন্দ্রের সন্তদের সরকার চার্বাক দর্শনে বিশ্বাস রাখে। যেখানে বলা হয়েছে— ‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ, যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ’। ঋণ করে হলেও ঘি খাও, যতদিন বাঁচো, সুখে বাঁচো।
আরও পড়ুন- ‘মতুয়া ঠাকুরবাড়ি কারও পৈত্রিক সম্পত্তি নয়’ ঠাকুরনগরে শান্তনুকে নিশানা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের