প্রতিবেদন: আর্থিক অসঙ্গতির জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই বাড়ির প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্যের দুর্গাপুজো। কথিত আছে, পরিবারের এক সদস্যের অটল ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ‘মা’ ফিরে আসেন সেখানেই। আজও মহা সমারোহে দুর্গাপুজো হয়ে চলেছে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের রণদাপ্রসাদ সাহার বাড়িতে।
জানা যায়, রণদাপ্রসাদের পূর্বপুরুষরাও বাড়িতে দুর্গাপুজো করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়ে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পারিবারিক দুর্গাপুজো। শৈশবে মাতৃহারা রণদাপ্রসাদ সাহার মাতৃভক্তি ছিল অসাধারণ।
আরও পড়ুন : রাত পোহালেই বিজয়া দশমী, মায়ের নিরঞ্জনে ঘাটে ঘাটে প্রস্তুতি তুঙ্গে
মা না থাকায় অনাদরে বড় হওয়ায় রণদা মাত্র ১৬ বছর বয়সে পালিয়ে আসেন কলকাতায়। অপরিচিত কলকাতায় তাঁর কোনও আশ্রয় ছিল না। জীবনধারণের জন্য কুলিগিরি, রিকশা চালানো, ফেরি করা, খবরের কাগজ বিক্রির মতো কাজও করেছেন তিনি। কলকাতায় তখন কাজের সন্ধানে ছুটে আসা বুভুক্ষু মানুষের ভিড়। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যায় ম্যালেরিয়ায়। এর মাঝেই রণদাপ্রসাদ জড়িয়ে পড়েন স্বদেশি আন্দোলনে। বিপ্লবে দীক্ষা নেন। এমনকী কারাবরণও করেন।
কর্মজীবনের যাত্রাপথে নানা প্রতিকূল পথ পেরিয়ে একসময় রণদাপ্রসাদ নিজের ব্যবসা শুরু করেন এবং প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন। এরপরই বন্ধ হয়ে যাওয়া পারিবারিক দুর্গাপুজো পুনরায় শুরু করেন। শুধু পুজো নয়, তাকে কেন্দ্র করে যাত্রাপালা, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করতে শুরু করেন, যা আজও পূর্ণমাত্রায় বর্তমান। রণদাপ্রসাদ সাহার নাতি রাজীবপ্রসাদ সাহা এখন পুজোর তত্বাবধায়ক কুমুদিনী কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান। এখনকার পুজোর আয়োজনে এসেছে আরও জৌলুস। পারিবারিক ধারা মেনে পঞ্চমীতে সংগীতানুষ্ঠানে মধ্য দিয়ে পুজো শুরু হয়। নাচ, গান, আরতিসহ রোজ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। আজও এখানে পুজো দেখতে আসেন রাজনীতিক, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কূটনীতিক, দেশবরেণ্য ব্যক্তি, শিল্পী, সাহিত্যিকসহ সব শ্রেণীর মানুষ। বিজয়া দশমীতে নৌকার করে লৌহজং নদী ঘুরে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হয়।