নবনীতা মন্ডল, নয়াদিল্লি : শুক্রবার বিজয়া দশমী, বাঙালির দুর্গাপূজোর শেষ দিন। একইসঙ্গে নবরাত্রির ও।আর এই দিনটাকেই সমগ্র উত্তর ভারতে পালন করা হয় দশেরা হিসেবে। অশুভ শক্তির ওপর শুভ শক্তির জয়ের প্রতীক হিসাবে সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে রাবণ জ্বালানোর রীতি চলে আসছে ওই দিন।
দশেরাতে রাবণ হলো অশুভ শক্তির প্রতীক। তাই তাকে জ্বালানো হয় কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন শুধুমাত্র দশেরার এই একটা দিনের জন্য।কারণ এই একটা দিনে রাবণ মূর্তি বিক্রি করে যে আয় হয়,তাতে তারা আগামী চার মাসের জন্য তাদের পরিবারের পেটে ভাত জোগাতে পারে। তাই রাবণ তাদের কাছে ভগবান ।
টেগর গার্ডেন মেট্রো স্টেশনে নেমে, পশ্চিমী দিল্লির সরু গলির ভিতর দিয়ে গিয়ে সুভাষ নগর। তারই লাগোয়া তিতাপুর এলাকা। প্রত্যেক বছর সেখানেই জন্ম হয় রামায়ণের তিন ভিলেন চরিত্রের। রাবণ ,মেঘনাথ আর কুম্ভকর্ণের। দশেরার দিন জ্বালানোর জন্য।
আরও পড়ুন : বিএসএফ-এর আওতা বাড়িয়ে মোদি সরকার রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে, অভিযোগ ফিরহাদ হাকিমের
দশেরার এক মাস আগে থেকেই এখানে রাবণ তৈরীর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। নবরাত্রি দুর্গাপূজার সময় রাবনই তাদের ভগবান, কারন সেই যে তাদের পেটের ভাত যোগায়।
পশ্চিমী দিল্লির সুভাষ নগর লাগোয়া তিতাপুর জায়গাটি বিখ্যাত রাবণ তৈরীর জন্য। শুধু দিল্লি বা তার আশপাশের এলাকাই নয়,এখান থেকে রাবণ যায় উত্তরপ্রদেশ ,উত্তরাখণ্ড ,পাঞ্জাব ,রাজস্থান এমনকি বিদেশেও ।
টেগর গার্ডেন মেট্রো স্টেশনে নেমে পায়ে হাটা দূরত্বে এই তিতাপুরি এলাকা। মাস খানেক ধরে এই এলাকার যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই শুধু রাবণ, মেঘনাদ আর কুম্ভকর্ণের বড় বড় মূর্তিতে ভর্তি। প্রত্যেক বছর এই কারণে এখানে যানজট লেগেই থাকে। যদিও মাঝে দিল্লি সরকারের সঙ্গে এখানকার কারিগরদের এলাকার দখলদারি নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু এখন দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকেই এই সমস্ত কারিগরদের জন্য তিতাপুরি এলাকাটি কেই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই রকমই একজন কারিগর হলেন জয়রাম। থাকেন মোরাদাবাদে, বছরের অন্য সময়টিতে তিনি ছুতোর মিস্ত্রির কাজ করেন। তার মতো অনেকেই এখানে অন্য পেশার সাথে যুক্ত থাকে কিন্তু রাবণ তৈরীর জন্য এই একমাস তারা মনের খিদের তাগিদে দিল্লির এই জায়গায় এসে একত্রিত হন।
প্রত্যেক বছর প্রায় একশর ওপর কারিগর এখানে আসেন। ১০ ফুট থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় তৈরি হয়, রাবণ, মেঘনাদ আর কুম্ভকর্ণর মূর্তি। ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী নির্ভর করে মূর্তির উচ্চতা। বাঁশের কাঠামোর মধ্যে সরু স্টিল এর তার জড়িয়ে তৈরি করা হয় মূর্তির কাঠামো। তার ওপর থাকে খর আর পুরনো কাপড়। আর শেষে মোটা বাদামি কাগজ দিয়ে পুরো কাঠামোটিকে মুড়ে ফেলা হয়। আর তার ওপর রং তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়। রাবণের মূর্তিকে।নিখুঁত শৈল্পিক দক্ষতায়। সাধারণত ১২হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় তিনটি মূর্তির এক একটি সেট। তবে কারিগরদের আক্ষেপ যেভাবে নিত্যনৈমিত্তিক বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে কতদিন এই ভাবে কাজ চালানো সম্ভব তা বলা মুশকিল। কারণ তিতাপুরীর এই জায়গাটিতে বসার জন্য, প্রত্যেকটি কারিগরকে এক স্কয়ার ফিটের জন্য দেড় টাকা হিসাবে ট্যাক্স দিতে হয় দিল্লি সরকারকে।