সর্বনাশের কিনারায় দেশ, দায়ী মোদি সরকার

নয় বছরের হিসাব কষতে বসলে একটা কথাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মোদি সরকার ভারতবর্ষের ইতিহাস ও আগামী— দুই নিয়েই ছিনিমিনি খেলছে। অবিলম্বে এই সরকারকে বিদায় করা দরকার। লিখছেন তানিয়া রায়

Must read

অস্বাভাবিক বেকারত্ব একটি দেশের অর্থনীতি ধসিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্য এবং সামগ্রিকভাবে পুরো দেশ (India- Modi Government) এই মারাত্মক সমস্যায় জর্জরিত। মোদি জমানাতেই বেকারত্ব গত সাড়ে চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছিল। তারপর দিল্লির তরফে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা কখনওই যথেষ্ট ছিল না। এ-জন্যই ভারতে বেকারত্বের হার এখনও উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞ সংস্থা সিএমআইই-এর হিসেবে— মে, ২০২৩-এ বেকারত্বের হার ০.৮ শতাংশ কমে গিয়ে ৭.৭ শতাংশ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, এটা কিন্তু কোনওভাবেই ‘সেলিব্রেট’ করার মতো সিচুয়েশন নয়। কারণ ভারতে বেকারত্বের সাম্প্রতিক অতীত ‘ঐতিহ্য’। বিগত ১২ মাসে বেকারত্বের হার ৬.৪ থেকে ৮.৫ শতাংশের ভিতরে ওঠানামা করেছে। মে মাসে বেকারত্বের হার কম হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল, লেবার পার্টিসিপেশন রেট ১.১ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস পাওয়া। ওই মাসে বেকারদের মধ্যে কাজের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যদি এপ্রিলের মতোই জারি থাকত, তবে বেকারত্বের হার ৭.৭ শতাংশ কিংবা তার বেশিও হতে পারত। এই কারণে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের একাধিক রাজ্য নিয়োগ বা কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করে। এই ধরনের মেলায় নিয়োগ সংস্থা এবং আবেদনকারীকে মুখোমুখি বসিয়ে দিয়ে চাকরি প্রদান চূড়ান্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোটামুটি একই কায়দায় মোদি সরকার গত অক্টোবর থেকে চালু করেছে ‘রোজগার’ মেলা। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সফল প্রার্থীদের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে।

এই ভাবে সরকারি মঞ্চকে মঙ্গলবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (India- Modi Government) রাজনীতির ময়দান করে তুললেন। ৭০ হাজার নিয়োগপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি নাম না করে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের শাসক দল এবং তাদের নেতানেত্রীদের কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখেন। বললেন, বাংলায় বিভিন্ন পদে বেআইনি চাকরির জন্য ‘রেট কার্ড’ আছে। তাঁর দাবি, এই সমস্ত কালাদিনের অবসান ঘটাতেই তাঁর আবির্ভাব।

আরও পড়ুন- নবজোয়ার ৫০, চলছে জনস্রোত: আজ মুখ্যমন্ত্রী-অভিষেক সভা

কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখে ‘ব্যাপম’ কেলেঙ্কারির কথা শোনা গেল না! শোনা গেল না, কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরগুলিতে সাড়ে নয় লক্ষ শূন্যপদ পূরণ না-হওয়ার কারণ কী। কেন কর্মীর অভাবে বিপদের সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে ভারতীয় রেল। রেলে শূন্যপদের সংখ্যা তিন লক্ষাধিক। ইউপিএ সরকারের মুণ্ডপাত-সহ, নরেন্দ্র মোদি ২০১৩ সালে বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী জানাননি, তিনি কোন নীতিতে কোটি কোটি বেকারকে সজ্ঞানে বোকা বানিয়েছিলেন সেদিন। মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী সরকারি একটি অনুষ্ঠানকে যেভাবে রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়েছেন, তা অনুচিত এবং নিন্দনীয়।
মোদি-জমানায় দেশ জুড়ে বেকারত্বের জ্বালা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বেকারদের দলে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ থেকে, বি-টেক, এমএ, পি-এইচডি— সবাই আছেন। সাফাই কর্মী পদেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা আবেদন করেন নিঃসঙ্কোচে। কিন্তু তাই বলে একটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেটি রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি রয়েছে সে-ও শিক্ষিত বেকারদের অসহায়তার সুযোগ নেবে? সাম্প্রতিক কালে এমনটাই দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী।

পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালটি সম্প্রতি এক নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তার মাধ্যমে তারা গেস্ট টিচার বা অতিথি শিক্ষক চায়। উইভিং বা বুনন বিষয়ে শিক্ষা দেবেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট ট্রেডে প্রার্থীদের অন্তত পাঁচ বছরের ডিপ্লোমা থাকতে হবে অথবা ফাইন আর্টস বিষয়ে স্নাতক হতে হবে তাঁদের। আগ্রহীরা, মার্কশিট ও সার্টিফিকেট-সহ ২২ জুনের মধ্যে ‘শিক্ষাসত্রে’ আবেদন করবেন। কিন্তু এই বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের এজন্য কী দেওয়া হবে? বিশ্ববিদ্যালয় অফার করেছে ক্লাস-পিছু মাত্র ১৫০ টাকা! এই নামমাত্র টাকায় আদৌ কোনও যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শুরুতেই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একজন শ্রমিক দৈনিক ন্যূনতম কত টাকা মজুরি পাবেন তা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক। মন্ত্রকের প্রধান শ্রম কমিশনারের (সি) অফিস থেকে এই বিষয়ে সর্বশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয় ০৩.০৪.২০২৩ তারিখে। এই নির্দেশ সারা দেশে ১ এপ্রিল, ২০২৩ থেকে প্রযোজ্য। ভারতে কাজের ক্ষেত্রের মধ্যে কৃষিকেই সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তাই কৃষিক্ষেত্রের শ্রমিকদের মজুরিই সর্বনিম্ন। বেসিকের সঙ্গে ডিএ যোগ করে চার ধরনের কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি নিম্নরূপ— অদক্ষ : ৪২৪ টাকা থেকে ৪৭০ টাকা। অল্প দক্ষ : ৪৩৪ টাকা থেকে ৫১৩ টাকা। দক্ষ : ৪৭১ টাকা থেকে ৫৫৮ টাকা। অত্যন্ত দক্ষ : ৫১৩ টাকা থেকে ৬১৭ টাকা। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে শুধু গতরে খাটলেই চলে না, কমবেশি ঝুঁকিও নিতে হয়, সেক্ষেত্রে ঝুঁকির প্রকার অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি অনেক বেশি। যেমন স্টোন মাইনিং বা পাথর খাদানে দৈনিক মোট মজুরি ১,২৫৫ থেকে ৩,০৪১ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে উঠে আসছে এক নয়া কিস্যা। শুধু রেলের জন্যই একজন পূর্ণসময়ের মন্ত্রী যে ভারত রাখতে পারে না বা খুঁজে পায় না, সেটাই ভারতীয় রেলের এক করুণ কাহিনি। ভারতীয় (India- Modi Government) রেলওয়ে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ২০ লক্ষ যাত্রী বহন করে। তাঁদের বেশিরভাগই গরিব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাদের স্বার্থে রেল ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণ এবং পুনর্নবীকরণ দরকার। অথচ সে-সবের চেয়ে অগ্রাধিকার পায় নতুন ট্রেন চালু করা; ট্রেন সিগন্যালিং এবং টেলি-যোগাযোগের জন্য এককালীন মোটা অঙ্কের অর্থব্যয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় বন্দে ভারত এবং তেজস ছুটিয়ে দেওয়া; রেলে বিপুল সংখ্যক অনুমোদিত শূন্যপদ পূরণের জরুরি জায়গাটা দেওয়া হয় ভ্যানিটি প্রজেক্টগুলোকে (যেমন বুলেট ট্রেন); এবং গতির নেশা স্থান পায় সার্বিক নিরাপত্তার উপর!
এই মোদি সরকার ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এদের বিদায় নিশ্চিত করা দরকার।

Latest article