প্রতিবেদন : নীতি নৈতিকতা উপেক্ষা করে রাজভবনের ঐতিহ্য পূর্বসূরির মতোই ভূলুণ্ঠিত করলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ না করেই আজ, মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যপাল। দ্রুত আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অগণতান্ত্রিক ইশারায় রাজভবন এই অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনায় বিস্মিত এবং স্মম্ভিত মুখ্যমন্ত্রী। কড়া ভাষায় রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী (CV Ananda Bose- Mamata Banerjee) বলেছেন, আমি অবাক এই সিদ্ধান্তে। সোমবার আপনার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। আলোচনায় উভয়ই আমরা মেনে নিই যে, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমাদের সকলের সহমত হওয়া উচিত। আশা করি আপনি এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে আর এগোবেন না। দীর্ঘ চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী স্বাধীনতার সময়ে বাংলা ভাগ কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে হয়েছিল তা প্রাক্তন আমলা রাজ্যপালকে মনে করিয়ে দেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, বাংলার ইতিহাস এবং সংস্কৃতিতে বহু দিনের কথা উল্লেখ থাকলেও ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এর কোনও স্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিজেপি আসলে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভূলুণ্ঠিত করতে চাইছে। রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্রের এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত আসলে রাজ্যের অধিকারেই হস্তক্ষেপ। মুখ্যমন্ত্রী যেমন ঘটনায় বিস্মিত এবং স্তম্ভিত একইভাবে ইতিহাসবিদ এবং বিদ্বজ্জনেরাও হতবাক। প্রাক্তন সাংসদ ইতিহাসবিদ সুগত বসু বলছেন, বাংলা ভাগের ভোটাভুটির আগেই দেশভাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ব্রিটিশরা। দিল্লির ক্ষমতা হস্তগত করতে চেয়েছিলেন যেসব নেতারা, তাঁরা পাঞ্জাবের মতো বাংলা ভাগেরও প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন। তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা মেনে নিয়েছিলেন ব্রিটিশদের সিদ্ধান্ত। ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ভাগ হয়। এই দিনের কোনও গৌরব নেই। কোনও ঐতিহাসিত সত্যতাও নেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, দেশভাগ জাতির পক্ষে একটা বিপর্যয়। একমাত্র দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসীরাই এতে আনন্দ পাবেন। দেশভাগে যারা কিছুই হারাননি তারাই এই চক্রান্তকারী রাজনৈতিক মতলবকে উৎসাহ দেবেন। দুই বাংলার সংস্কৃতির ঐক্য আজও বাঙালি মেনে নেন। পশ্চিমবঙ্গ দিবস উদযাপন বাংলার এই ভাবনার উপর কুঠারাঘাত করছে।
আরও পড়ুন- বাতিল ৩১৬৪ মনোনয়নপত্র
প্রত্যেকটি রাজ্যের জন্মদিবস পালন করার সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। মুখ্যমন্ত্রী (CV Ananda Bose- Mamata Banerjee) এই সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানিয়ে বলেছেন, রাজ্যের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করে ভারত সরকারের এই একক সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, দেশভাগের ষড়যন্ত্রকে সার্থক করে তুলতে সেদিন যারা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল তারাই আজ ক্লেদাক্ত ও মর্মন্তুত রাজনৈতিক বিপর্যয়ের দিনটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস বলতে চাইছে। এটা লক্ষ কোটি নিপীড়িত ও বাস্তুচ্যুত বাঙালির অপমান। এই দিনটি সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে দুঃখ, যন্ত্রণা ও শোকের। রাজভবন যদি এই দিনটিকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করে তাহলে ধরে নিতে হবে মাউন্ট ব্যাটনের অশরীরী আত্মা এখনকার ছোটলাটের উপর ভর করেছে। মুখ্যমন্ত্রী পরিস্কার বলেছেন, এই দিন আশাকরি রাজভবনে পালন করা হবে না। যদি হয় তাহলে অবাঞ্ছিত শক্তিগুলিকে উৎসাহিত করবে রাজ্যপাল তথা বিজেপি সরকার।