জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন— “The greater the power of the panchayet, the better for the people”
পঞ্চায়েতে (Panchayat- West Bengal) অধিকতর ক্ষমতা হল জনগণের জন্য আরও ভাল ফল।
২০১১ সাল থেকে শুরু করে অদ্যবধি পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পূর্বাপেক্ষা প্রকল্পের প্রসার ঘটিয়ে এবং পঞ্চায়েতে আরও বেশি ক্ষমতা দিয়ে রাজ্যের জনগণের জন্য শ্রেষ্ঠতর উন্নয়ন ঘটিয়ে চলেছে। উদ্দেশ্য শ্রেষ্ঠতম স্তরে পৌঁছনো। হাতেনাতে প্রমাণও মিলেছে বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তৃক।
২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পরপর পাঁচটি স্কচ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত পশ্চিমবঙ্গের “গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ কর্মসূচি”-র পুরস্কার প্রাপ্তির অন্তরালে রয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক নির্ধারিত গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়নের নিরিখে প্রতিটি পদক্ষেপের সাফল্যের নজির। কুমারগ্রাম থেকে কেশপুর, নাগরাকাটা থেকে নানুর, বান্দোয়ান থেকে বনগাঁ— সর্বত্র এই কর্মসূচি প্রকৃত অর্থে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সুস্থায়ী উন্নয়নে শামিল করেছে।
এখানে অবশ্যই উল্লেখ্য যে বিশ্বব্যাঙ্কের এই সশক্তিকরণ কর্মসূচির যোগ্যতা নির্ধারণের মাপকাঠি হল মূলত ৬টি : (১) গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়া, (২) সিএজি অডিটে পাশ করতে হবে, (৩) এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা, (৪) আয়-ব্যয়ের হিসেব সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা (৫) যোগ্যতাভিত্তিক অনুদান খাতে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে, সেই টাকার অন্তত ৬০ শতাংশ খরচ করতে হবে, (৬) যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার অন্তত ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে। কোন গ্রাম পঞ্চায়েত কত টাকা পাবে তা অবশ্যই কাজের মূল্যায়নের নিরিখে ১০০-র মধ্যে কত নম্বর পেল তার ভিত্তিতে বিচার করা হয়।
আরও পড়ুন- নেত্রীকে বিশ্বাস ভোট দেবে জঙ্গলমহল
২০১১ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছিল বিশ্ব ব্যাঙ্কের আওতায় “গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ কর্মসূচির” কাজ। প্রথম পর্যায়ে ৯টি জেলায় এই কাজ শুরু হয়েছিল ১০০০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। লক্ষ্যমাত্রা সঠিকভাবে পুরণ হওয়ায় ২০১৭-’২২ অর্থবর্ষের মধ্যে চলছে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। সারা রাজ্যে ৩২২৯ গ্রাম পঞ্চায়েতে এই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে স্বচ্ছভাবে। ক্রমবর্ধমান সাফল্যের জন্য ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে যোগ্যতাভিত্তিক অনুদান হিসাবে বিশ্বব্যাঙ্কের থেকে বরাদ্দ হয়েছে ৪৬১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। আগের আর্থিক বছরের তুলনায় অনুদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫ শতাংশ। ভারতের অন্য কোনও রাজ্য বিশ্বব্যাঙ্কের যোগ্যতা নির্ণায়ক মাপকাঠিতে এত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
স্বনির্ভর দলের সংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের যে কোনও রাজ্যের শীর্ষে। ২০১১ সালের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গে স্বনির্ভর দলের সংখ্যা ছিল ২,৪০,৭৯১। মার্চ, ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে ১০,৬৮,৬৭৯টি স্বনির্ভর দলের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শামিল হয়েছেন ১ কোটি ৯ লক্ষের বেশি পরিবার। এখানে লক্ষণীয় যে ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে দলের গড় ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ ছিল ০.৯৯ লাখ টাকা। যা ২০২২-’২৩ অর্থবছরে প্রায় দু’গুণ বেড়ে হয় ২.০৪ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা বেশ কিছুকাল যাবৎ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ-যাবৎ যে রাস্তা তৈরি হয়েছে তার মোট দৈর্ঘ ৩৬,৪৫৩ কিলোমিটার। তৎসত্ত্বেও সাম্প্রতিককালেও (২০১৯ সাল) ভারত সরকারের কাছ থেকে সারা ভারতে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের (Panchayat- West Bengal) ক্ষেত্রে (দীর্ঘতম রাস্তা নির্মাণের জন্য)। একই বছরে (২০১৯ সালে) সারা ভারতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে পশ্চিমবঙ্গ (সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে)।
২০১১-’১২ সাল থেকে ২০২২-’২৩ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র কর্তৃক অনুমোদিত গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের গড়ে ৮০ শতাংশের বেশি অর্থ এই সরকার অনুমোদিত প্রকল্পেই খরচ করেছে। ২০২২-’২৩ অর্থবছরেও কেন্দ্র কর্তৃক ৯৬০ কোটি টাকা অনুমোদিত তহবিলের ৯২৫ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গ।
কেন্দ্র গ্রাম সড়ক যোজনার বরাদ্দ আটকে দেওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্তমান বছরেই ২২টি জেলায় পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পে ৩৬৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে ১২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি নতুন গ্রামীণ রাস্তা তৈরি এবং পুরনো রাস্তা সংস্কার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের (Panchayat- West Bengal) অগ্রগতিকে, কার্যত রুদ্ধ করার জন্য ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা এবং আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করা হয়েছে। এবং মুখ্য কারণ ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়কালে পশ্চিমবঙ্গই সারা ভারতে রাজ্যগুলির প্রায় শীর্ষে থেকেছে এবং যথারীতি এর জন্য জাতীয় পুরস্কারও নিয়মিত লাভ করে এসেছে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অভিনব ভাবে কর্মদিবস সৃষ্টির সাপেক্ষে ১০০ দিনের প্রকল্পে “Convergence and Livelihood Augmentation” কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর ৪ বছর পশ্চিমবঙ্গ সারা ভারতে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে।
জয় বাংলা ভাতা প্রকল্পে বর্তমান ব্যবস্থায় ২২টি জেলার গ্রামীণ এলাকায় ৯,৪৭,৫৩৫, ৪,৪২,০১৭ এবং ৪৫,৪১২ জন উপভোক্তা যথাক্রমে বার্ধক্যভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। ১ এপ্রিল ২০২০ থেকে প্রতি মাসে প্রত্যেক উপভোক্তা ১০০ টাকা করে বর্ধিত হারে ভাতা পাচ্ছেন।
সমব্যথী প্রকল্পে ২০১৬-’১৭ থেকে বর্তমান বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১২,১৮,৬৬৩ জন এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। এছাড়া স্বচ্ছ ভারত মিশন, জল মিশন, জনস্বাস্থ্য প্রকল্প, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি অনেক প্রকল্প কৃতিত্বের সঙ্গে রাজ্যে চলছে।
পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার প্রতি বছরে কত অর্থ রাজ্য নিজের বাজেট থেকে খরচ করছে তা একটি তালিকায় স্পষ্ট করা হয়েছে। বামফ্রন্টের শেষ বছরে যেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ২০৪৫ কোটি টাকা। বর্তমান বছরে এই বাজেট ১৩ গুণেরও বেশি (২৬,৬০৩ কোটি টাকা)। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ স্বচ্ছভাবে চলছে। বিশ্বব্যাঙ্কের স্বীকৃতি তার প্রমাণ।