প্রতিবেদন : জার্মানদের মতো লড়াই তাঁর রক্তে। ফুটবল জীবনে পিছিয়ে পড়েও বারবার বুক চিতিয়ে লড়ে ঘুরে দাঁড়াতেন। তাই ময়দান তাঁকে ছোট বেকেনবাওয়ার বলত। ঐতিহাসিক পেলে ম্যাচ খেলার ৪৬ বছর পর গৌতম সরকার মোহনবাগান রত্ন সম্মান পেলেন। মঞ্চে ক্লাবের সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ যখন তাঁকে সবুজ-মেরুন উত্তরীয় পরিয়ে দিচ্ছিলেন, সচিব দেবাশিস দত্ত যখন মোহনবাগান রত্নের পদক তাঁর গলায় ঝুলিয়ে দিচ্ছিলেন, গৌতমের শরীরী ভাষা বুঝিয়ে দিচ্ছিল, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। দর্শকাসনে তখন প্রবল উচ্ছ্বাস, নস্ট্যালজিয়ার বাতাবরণ। তার আগে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আলাদা করে গৌতমকে মঞ্চে ডেকে সম্মানিত করেন।
আরও পড়ুন-মণিপুর ইস্যুতে কেন্দ্রের নীরবতা নিয়ে ব্যথিত মুখ্যমন্ত্রী, টুইট বার্তায় ক্ষোভপ্রকাশ
টাইম মেশিনে গৌতমও ফিরে গেলেন খেলোয়াড় জীবনে। মঞ্চে মাইক হাতে বললেন, “৭ বছর মোহনবাগানে খেলেছি। ৬ বছর ইস্টবেঙ্গলে। আমি ছোটবেলা থেকে মোহনবাগান সমর্থক। ধীরেন দে’র মতো মানুষকে কাছে পেয়েছি। মানস, বিদেশরা মাঠে সাহায্য না করলে এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমি অভিভূত।” স্টেজ থেকে নামার পর বললেন, “আজ বড্ড মায়ের কথা মনে পড়ছে। মোহনবাগান রত্ন সম্মান মাকে উৎসর্গ করছি। সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে পেলের বিরুদ্ধে খেলাই আমার সেরা স্মৃতি। আমার খেলা দেখে সেদিন ম্যাচের পর এই ১৪ নম্বর জার্সিধারীকে খুঁজেছিলেন ফুটবল সম্রাট। কী সৌভাগ্য আমার! পেলে ম্যাচ আর মোহনবাগান আমার বাকি জীবনের অক্সিজেন।”
জীবনকৃতি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। আপ্লুত শঙ্কর বলছিলেন, “আমি মোহনবাগানের ফুটবলার ছিলাম, এটাই গর্বের। তবে ক্লাবকে কোচিংই বেশিদিন করিয়েছি। আমি মোহনবাগানকে আরও কিছু দিতে পারতাম। তাই এই সম্মান পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি কর্মসমিতির সমস্ত সদস্য ও ক্লাবের আপামর সমর্থকদের।”
আরও পড়ুন-‘মোদির কাছে কি ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট নেই?’ মণিপুরে নির্যাতিতাদের প্রশ্ন, দিল্লি ফিরে ক্ষুব্ধ সুস্মিতা
মোহনবাগান দিবস পালনের দ্বিতীয় দিন ছিল মূল অনুষ্ঠান। সবুজ-মেরুন আলোয় উদ্ভাসিত ক্লাব তাঁবু। রামপার্টের মঞ্চ আর ভিআইপি আসনে চাঁদের হাট। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তো ছিলেনই। মন্ত্রী অরূপ রায়, সুজিত বসু, তাপস রায়, কুণাল ঘোষ, সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, যুগ্মসচিব দেবব্রত দাস, মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বোস-সহ ক্লাবের কর্মসমিতির সদস্যরা। ছিলেন দুই আইএফএ কর্তা সৌরভ পাল, স্বরূপ বিশ্বাস।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে বেধড়ক মার পুলিশকর্মীর
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরুর আগে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রের গান আবিষ্ট করে রাখে দর্শকদের। ফ্যান ফোরামের ব্যান্ডের গানও মুগ্ধতা ছড়ায়। ব্যতিক্রমী মোহনবাগান দিবসে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিল ক্লাব। এই প্রথমবার সেরা সমর্থকের পুরস্কার উমাপতি পালোধি সম্মান দেওয়া হল দু’জনকে। তাঁরা হলেন ৮০ ছুঁই ছুঁই শান্তি চক্রবর্তী ও কমলেশ উপাধ্যায়। তাঁদের সম্মানিত করেন তাপস রায়। মতি নন্দীর নামাঙ্কিত সেরা ক্রীড়া সাংবাদিককের সম্মান পেলেন জয়ন্ত চক্রবর্তী। কেশব দত্ত নামাঙ্কিত সেরা হকি খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেলেন নীতীশ নিউপানে ওরফে কাঞ্চা। সেরা অ্যাথলিট মোহর মুখোপাধ্যায়, অরুণ লাল নামাঙ্কিত সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার অর্ণব নন্দীর হাতে তুলে দেন সিএবি সভাপতি। সেরা ফুটবলার বিশাল কাইথ এবং সেরা যুব ফুটবলার এঙ্গসন সিংয়ের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সুভাষ ভৌমিকের নামে বর্ষসেরা ফরোয়ার্ডের সম্মান পান দিমিত্রি পেত্রাতোস। সেরা কর্মকর্তার পুরস্কার পেলন নবাব ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন-মদের দোকানের লাইনে ঝামেলার জেরে ঢাকুরিয়ায় পিটিয়ে ‘খুন’ এক ক্রেতাকে
অমর একাদশ স্মরণে মোহনবাগান দিবস নিয়ে নস্ট্যালজিক ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “আমি চাই ১৯১১-র ঐতিহাসিক শিল্ড জয় নিয়ে হিন্দি ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ভাষায় সিনেমা তৈরি হোক। ভারতবর্ষের মানুষের কাছে বেশি করে পৌঁছে যাক মোহনবাগানের গৌরবগাথা। বাংলার ফুটবল এগিয়ে যাক। আমাদের পাশে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” ক্লাবের সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ বলেন, “মোহনবাগানের বর্তমান কর্মসমিতি নীরবে কাজ করে চলেছে। মোহনবাগানের আগে থেকে ‘এটিকে’ সরেছে এই কমিটির প্রচেষ্টায়। আইএসএল জিতেছে। ২২ বছর পর ক্লাব হকি দল গড়েই কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য ছাড়া ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ অনেক কাজই অসম্পূর্ণ থাকত।” মন্ত্রী সুজিত বসু খুশি, ময়দানে ফুটবল ফেরায়। অনুষ্ঠান শেষে বাবুল সুপ্রিয় গান গেয়ে মঞ্চ মাতান।