প্রতিবেদন : দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ হয়েছে। বুধবার তা নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও সারাদিনের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় সভার অধিবেশন। শাসকদল বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে লোকসভায় এই বিল সহজে পাশ করাতে পারবে কেন্দ্র। কিন্তু সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিলের বিরুদ্ধে সব বিরোধী একজোট হলে অন্যরকম হত পরিস্থিতি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী জেনেও কয়েকটি অবিজেপি দল এই বিল সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজ্যসভাতেও কিছুটা নিশ্চিন্ত কেন্দ্র। এনডিএ জোটে না থেকেও বিল সমর্থনের ঘোষণা করেছে ওড়িশা ও অন্ধ্রের শাসক দল। তা নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের কটাক্ষের মুখে পড়েছে তারা।
আরও পড়ুন-ঋণ ও জিডিপির মধ্যে পার্থক্য কমে ৩৩ শতাংশ, রাজ্যের ঋণ নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে
দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতেই দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল এনেছে মোদি সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উড়িয়ে আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী এই অগণতান্ত্রিক বিল পাশ করাতে চাইছে কেন্দ্র। বিল পাশের পর আইনে পরিণত হলে আগামিদিনে শুধু দিল্লি নয়, সব রাজ্য সরকারগুলির উপরেই কেন্দ্রের খবরদারি বাড়বে, যা রাজ্যগুলির সাংবিধানিক ক্ষমতায় বড় আঘাত বলে মনে করছে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে যখন সমস্ত প্রধান বিরোধী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ, তখন এনডিএতে না থেকেও বিজেপির হাতে তামাক খেতে চায় ওড়িশা ও অন্ধ্র। দুই রাজ্যের শাসকদল এই ইস্যুতে মোদি সরকারকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার তা নিয়ে পাল্টা বিজেডি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে বিঁধলেন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
আরও পড়ুন-মোটোকর্পের কর্তাদের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত ২৫ কোটির ‘গুপ্তধন’
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের বাইরে গিয়ে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস ও নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল বিজেপিকে সমর্থন দেওয়ায় রাজ্যসভাতেও অর্ডিন্যান্স বিল সহজে পাশ হয়ে যেতে চলেছে। এনিয়ে নবীন-জগনকে বিঁধে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম প্রশ্ন তুললেন, শাসকদলের আনা এই বিলে এমন কী যোগ্যতা তাঁরা দেখতে পেলেন যে সমর্থন করছেন?
বিজেপিকে সমর্থন দেওয়ায় বিজেডি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়ে ট্যুইট করেন চিদম্বরম। তিনি লেখেন, বিজেপি সাংসদরা এই বিলকে সমর্থন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি কোনওভাবেই বুঝতে পারছি না বিজেডি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেস এই বিলটিতে এমন কী যোগ্যতা খুঁজে পেল যার জন্য তারা এই বিলকে সমর্থন করছে!
আরও পড়ুন-একশো দিনের বকেয়া নিয়ে ফের সরব হল তৃণমূল, অবিজেপি রাজ্যকে বঞ্চনা
এরপরই সরকারপক্ষের আনা নয়া বিলের ব্যাখ্যা করে চিদম্বরম লেখেন, বিলটি আইনে পরিণত হলে রাজ্যের সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা চলে যাবে তিন সদস্যের প্রতিনিধির হাতে। যেখানে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রের নিযুক্ত দুই আধিকারিক। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে ছাড়াই কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন দুই আধিকারিক। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর যেকোনও মতামতকে খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে দুই আধিকারিকের হাতে। এমনকী কোনও বিষয়ে যদি তিনজন একমত হন, সেক্ষেত্রেও তাঁদের সিদ্ধান্তকে খারিজ করার ক্ষমতা থাকবে উপরাজ্যপালের হাতে। এছাড়া এই আইনের ফলে দিল্লি সরকারের আধিকারিকদের ক্ষমতা ও কর্তব্য নির্ধারণের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে দিল্লি সরকারের মন্ত্রীদের বাদ দিয়েই দফতর চালাতে পারবে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন-উত্তরে প্রথম, মালদহে হচ্ছে হস্তশিল্প হাব
বিপজ্জনক এই বিলকে সমর্থনের জন্য দুই মুখ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ট্যুইটারে লেখেন, বিলটি পাশ হয়ে গেলে কোনও মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের নিযুক্ত আধিকারিকদের অধঃস্তন কর্মীতে পরিণত হবেন। সেটা কি এই দুই শাসক দল আদৌ বুঝতে পারছে?
এদিকে বুধবার ওড়িশা ও অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে আপের রাজ্যসভা সাংসদ রাঘব চাড্ডা বলেন, ওদের নিশ্চয়ই কোনও বাধ্যবাধকতা আছে! তাই অগণতান্ত্রিক জেনেও বিজেপিকে সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রসঙ্গত, অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তদন্ত চালাচ্ছে। অন্যদিকে অন্ধ্রের বিরোধী দল চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলুগু দেশম পার্টিও (টিডিপি) এই বিল সমর্থনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।