প্রতিবেদন : বিরোধীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই লোকসভায় ধ্বনিভোটের মাধ্যমে পাশ হয়েছে ডিজিটাল ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল। মূলত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে ওই বিল আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। যদিও প্রকৃতপক্ষে তথ্য সুরক্ষার পরিবর্তে সাধারণ মানুষের উপর অবাধ নজরদারির অধিকার পেতেই এই আইন আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, তথ্যের গোপনীয়তার নামে তথ্যের অধিকার আইন লঘু করা হয়েছে ওই বিলে।
আরও পড়ুন-দক্ষিণের নানা জেলায় সাড়ম্বরে পালিত বিশ্ব আদিবাসী দিবস, পুরুলিয়া মুখরিত মুখ্যমন্ত্রীর জয়ধ্বনিতে
পাশাপাশি এই বিল আইনে পরিণত হলে ভার্চুয়াল সেন্সরশিপের ক্ষমতা পাবে কেন্দ্র। সংসদের নিম্ন কক্ষে পাশ হওয়া এই বিলে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার অন্যান্য বিষয়ের মতো জাতীয় নিরাপত্তা, বিদেশি সরকারগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাজ্যকে যেকোনও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারবে। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, যদি কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে সেক্ষেত্রে সেই সংস্থাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে যথেচ্ছ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সরকারকে। পাল্টা কেন্দ্রের বক্তব্য, শাস্তির পদ্ধতি সরল করা হয়েছে। ফৌজদারি অপরাধের ফলে এখন কোনও সংস্থা অন্যায় কাজ করলে আর্থিক জরিমানা হবে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে এক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপের পরিবর্তে শুধু জরিমানা করেই ছাড় দেবে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন-বার্ধক্যভাতা বন্ধ করল কেন্দ্র
পাশাপাশি, এই বিল আইনে পরিণত হলে দেশবাসীর উপরে নজরদারি করার কাঠামো গড়ে তুলবে সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, যথেষ্ট কারণ ছাড়াই আমজনতার তথ্যে নজরদারি করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে সরকারকে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের যুক্তি, বিলে একটি তথ্য সুরক্ষা পর্ষদ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। ওই পর্ষদের কাজ হবে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন হলে তার বিচার করা। যদিও এই পর্ষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধীদের স্পষ্ট অভিযোগ, পর্ষদের সদস্যদের দু’বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে। মেয়াদ শেষে তাঁদের পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতেই থাকবে। ফলে পর্ষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন-জুয়ান গাম্পা ট্রফি জিতল বার্সেলোনা
তথ্যপ্রযুক্তি বিল নিয়ে বিরোধীদের আশঙ্কার জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, কেন্দ্রের হাতে বিভিন্ন বিষয় ছেড়ে দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, যদি ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, সরকারের কি তাদের ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য সম্মতি নেওয়ার সময় থাকবে নাকি তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে? যদি পুলিশ অপরাধীকে ধরার জন্য তদন্ত চালায়, তাহলে কি তাদের সম্মতি নেওয়া উচিত? কেন্দ্রের যুক্তি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর)-এর ক্ষেত্রে ১৬টি ছাড় রয়েছে। ভারতে সেই তুলনায় অনেক কম মাত্র চারটি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রের যুক্তিতে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিরোধীরা। কারণ, এই বিল আইনে পরিণত হলে গোপনীয়তার অধিকারকে শিকেয় তুলে কেন্দ্রীয় সরকার পেয়ে যাবে অবাধ নজরদারির ছাড়পত্র।