নিখোঁজ

পার্টি থেকে উধাও দুঁদে পুলিশ অফিসারের মেয়ে। বাড়ি ফেরেনি। ঘনীভূত হয়েছে রহস্য। সন্দেহের তালিকায় প্রভাবশালী। টানটান উত্তেজনা। রোমাঞ্চকর কাহিনি দানা বেঁধেছে অয়ন চক্রবর্তীর ওয়েব সিরিজ ‘নিখোঁজ’-এ। প্রধান দুটি চরিত্রে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও টোটা রায়চৌধুরী। শুরু হয়েছে স্ট্রিমিং। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

মেয়েকে খোঁজার পালা
ডিসিপি বৃন্দা বসু। দুঁদে পুলিশ অফিসার। অসাধারণ দক্ষতায় সলভ করেছেন বহু কেস। ঘায়েল করেছেন তাবড় তাবড় অপরাধীকে। কিন্তু এবারের কেস পার্সোনাল। কী ঘটেছে? নিখোঁজ তাঁর মেয়ে দিতি, দিতি বসু। আগের রাতে একটি পার্টিতে গিয়েছিল। তারপর থেকেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চাপা টেনশন। উত্তেজনা। শুরু হয়েছে শহরের উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার— এক মায়ের নিজের মেয়েকে খোঁজার পালা। তদন্ত।

আরও পড়ুন-কলকাতায় কাগজের গোডাউনে আগুন

সন্দেহের তালিকায়
জনপ্রিয় চ্যানেলের সাংবাদিক রোমিত সেন। দিতির বস। প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর প্রতি দিতির গভীর দুর্বলতা। তিনিই দিতিকে আলো-ঝলমলে পার্টি থেকে নিজের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছিলেন। তারপর থেকেই দিতির কোনও খোঁজ নেই। উধাও। তাই সন্দেহের তালিকায় রোমিত সেন। কিন্তু সত্যিই কি রোমিত অপরাধী? কোথায় গেল দিতি? পাওয়া যাবে তার সন্ধান? জানার জন্য দেখতে হবে অয়ন চক্রবর্তী পরিচালিত ‘নিখোঁজ’। ট্রেলার এবং পোস্টার মুক্তির পর থেকেই সিরিজটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। সাসপেন্স থ্রিলারটি দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলেন দর্শকেরা। জানতে চাইছিলেন, কীভাবে খোলা হবে রহস্যের জাল। সব উত্তর আপাতত হাতের মুঠোয়।

আরও পড়ুন-ভারতীয় দণ্ডবিধিতেও গেরুয়াকরণ

অনবদ্য স্বস্তিকা
ডিসিপি বৃন্দা বসুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। বেশ খানিকটা সময় পরে ওয়েব সিরিজে ফিরলেন। তিনি যে কত বড় অভিনেত্রী প্রমাণ করলেন আরও একবার। এই সিরিজে তাঁর দুটি সত্তা। পুলিশ অফিসার এবং মা। সিঙ্গল মাদার তিনি। খুঁজতে বের হন নিজের হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে। ভাঙাচোরা মন। কিন্তু মুখে তার বিন্দুমাত্র প্রকাশ ঘটে না। সমস্ত পদক্ষেপ নেন মাথা ঠাণ্ডা রেখে। আবেগ দিয়ে নয়, তীব্র মেধা দিয়ে। প্রয়োগ ঘটান উপস্থিত বুদ্ধির। সিরিজে তাঁর চোখের ব্যবহার দর্শকদের নজর কেড়েছে। কখনও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। কখনও উদাসীন চাহনি। বড় মাত্রায় শান্ত। তাঁর চোখের ভাষা পড়ে নিতে অসুবিধা হয় না। চরিত্রটি নিয়ে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করেছেন, বোঝাই যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে ‘শিবপুর’ ছবিটি। সেখানেও দেখা গেছে স্বস্তিকার দুর্দান্ত অভিনয়। তাঁর অভিনীত চরিত্রটি হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে নিয়েছিল স্বামীর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। এবার ‘নিখোঁজ’-এও তিনি অনবদ্য। আগামী দিনে তাঁকে সামনে রেখে আরও অনেক চিত্রনাট্য লেখা হবে, এইকথা জোর দিয়ে বলাই যায়।

আরও পড়ুন-ফ্লোরিডায় আজ সমতা ফেরানোর লড়াই

মার্জিত টোটা
সাংবাদিক রোমিত সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন টোটা রায়চৌধুরী। তাঁর মার্জিত অভিনয় মন ছুঁয়ে গেছে। খুব সাদামাঠা ভাবেই শুরু হয়েছিল কেরিয়ার। ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে আলাদা উচ্চতায় তুলে ধরতে পেরেছেন। সারা দেশের দর্শকদের কাছে তৈরি হয়েছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা। এই মুহূর্তে সর্বত্র হইহই করে চলছে করণ জোহর পরিচালিত ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’। বলিউডের এই মশালা ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন টোটা। তাঁর কাজ হয়েছে উচ্চপ্রশংসিত। ‘নিখোঁজ’ সিরিজেও তিনি জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর লুক নিয়ে চলছে তুমুল চর্চা।

আরও পড়ুন-যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যু গ্রেফতার প্রাক্তন পড়ুয়া

সাধারণ হয়েও অসাধারণ
এক প্রাক্তন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় দেখা গেল পরান বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন দুর্দান্ত এই অভিনেতা। দশজনের মধ্যেও তাঁর দিকে আলাদা ভাবে চোখ চলে যায়। হাঁটাচলা, কথাবার্তায় বজায় রেখেছেন নিজস্বতা। এককথায় তিনি সাধারণ হয়েও অসাধারণ। রোমিতের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করছেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মিটিয়েছেন চিত্রনাট্যের দাবি।

আরও পড়ুন-বাম আমলে উপেক্ষিত রিষড়ার প্রেক্ষাগৃহের আজ উদ্বোধন

টানটান থ্রিলার
রহস্যময় পরিবেশ পছন্দ করেন অয়ন চক্রবর্তী। তিনি রহস্যের জাল বোনেন। আবার সেই জাল টেনে ছিঁড়েও ফেলেন। ইতিমধ্যেই বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কাজ তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। পরিচালক হিসেবে তাঁর সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে শেষ কয়েকটি কাজ দেখে বোঝা যাচ্ছে, থ্রিলারের প্রতি তাঁর দারুণ ঝোঁক। ‘নিখোঁজ’-এ সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। অত্যন্ত সুচারুভাবে তিনি বুনেছেন সিরিজটি। যেটুকু বলেছেন মেপে বলেছেন। যেটুকু দেখিয়েছেন, মেপে দেখিয়েছেন। কোনও অংশ অতিরিক্ত মনে হয় না। যে কোনও থ্রিলারকেই টানটান হতে হয়। পরিচালক সেই টানটা বজায় রাখতে পেরেছেন দক্ষতার সঙ্গে।

আরও পড়ুন-ফের ট্রেন বাতিল, যাত্রী দুর্ভোগ

পেয়ে যাবেন উত্তর
দিন ফুরিয়েছে তারকা-প্রথার। গুরুত্ব বাড়ছে বিষয়ভিত্তিক ছবি এবং সিরিজের। তেমনই একটি সিরিজ ‘নিখোঁজ’। থ্রিলারের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থাকলে অবশ্যই দেখবেন। থ্রিলার পছন্দ না করলেও দেখবেন। কারণ ‘নিখোঁজ’ নিখাদ সম্পর্কের গল্প। এই সম্পর্ক বহুমাত্রিক। অনুভূতিপ্রবণ দর্শক খুব সহজেই চরিত্রগুলোর সঙ্গে নিজেদের রিলেট করতে পারবেন। ১১ অগাস্ট হইচই প্লাটফর্মে শুরু হয়েছে স্ট্রিমিং। দেরি না করে চটপট দেখে নিন। দিতি কোথায়? পেয়ে যাবেন উত্তর।

Latest article