যাদবপুরের ঘটনায় এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) আচার্য-তথা রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চাইল রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। শনিবার কমিশনের তরফে আচার্যকে লেখা এক চিঠিতে ঘটনার তদন্ত ও অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানান হয়েছে। সেই সঙ্গে গোটা ঘটনার ওপর একটি রিপোর্ট দিতেও তাঁরা আচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে। কলকাতার নগরপালের কাছেও তাঁরা অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট দিতে বলেছে। কমিশন হস্টেলের সিসিটিভি ফুটেজ কোথায় সে প্রশ্ন তুলেছে। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর তদন্ত যত এগোচ্ছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসছে। শুক্রবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ। রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ২২ অগাস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠান। অভিযোগ, ঘটনার দিন রাতে সৌরভ ও সাঙ্গপাঙ্গোরা মিলেই স্বপ্নদীপের ওপর চরম শারীরিক ও মানসিক হেনস্থা করে। যার চাপ নিতে পারেনি প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ। হস্টেলের প্রথম বর্ষের একাধিক পড়ুয়ার ফোনালাপের অডিও ক্লিপ ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট আপাতত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এ-সব চ্যাট ও অডিওর সত্যতা যাচাই না হলেও এর থেকে যাদবপুরের (Jadavpur University) হস্টেলের যে ঘটনা উঠে আসছে তা শিউরে ওঠার মতো। রাত গভীর হলেই জেগে উঠে যাদবপুরের হস্টেল। সিনিয়রদের মিলিত উদ্যোগে শুরু হয় নতুন ছাত্রদের ওপর নানা অত্যাচার। রাতের খাওয়াদাওয়ার পর ডাক পড়ে সিনিয়রদের ঘরে। সেখানে ‘ইন্ট্রো’ দেওয়ার নামে চলে অত্যাচার ও হেনস্থা। শুধু সিনিয়ররাই নয়, এতে যুক্ত অনেক বহিরাগতরাও। হস্টেলে তাদের অবাধ যাতায়াত। সেই সঙ্গে কয়েকজন পাস-আউটও বেআইনি ভাবে ঘাঁটি গেড়ে রয়ে গিয়েছেন হস্টেলে। এরাই হস্টেলের স্বঘোষিত ‘বাবা’। নিরাপত্তারক্ষীরা সব জেনেও চুপ। কে থাকবে, কে থাকবে না, কীভাবে থাকতে হবে তা সবই ঠিক করে এই ‘বাবা’ ব্রিগেড। সেদিন রাত আটটা পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু খাওয়ার পর অনেকের মতোই স্বপ্নদীপের ডাক পড়ে সিনিয়রদের ঘরে। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ‘কাউন্সেলিং’। তারপরই ঘটে সেই মর্মান্তিক ঘটনা। ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও। হস্টেলে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল কিনা, না থাকলে কেন ছিল না তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। ধৃত সৌরভকে জেরা করে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় সৌরভ-সহ কয়েকজন পড়ুয়া তথ্য গোপন করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। শনিবারও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সৌরভ ছাড়াও স্বপ্নদীপের তিনজন রুমমেট এবং ভিন রাজ্যের এক পড়ুয়ার কথাতেও অসঙ্গতি মিলেছে।