অভিজিৎ ঘোষ: যাদবপুরে স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মর্মান্তিক মৃত্যু। তদন্ত যত এগোচ্ছে তত পরিষ্কার হচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের আড়ালে আর এক যাদবপুর লুকিয়েছিল, যাকে সযত্নে আড়ালে রেখেছিলেন অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী থেকে পড়ুয়ারা। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর অদ্ভুতভাবে পড়ুয়াদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ হঠাৎ ভ্যানিশ। প্রশ্ন কেন? যেকোনও ঘটনা ঘটলেই বিশ্ববিদ্যালয় কাঁপিয়ে, রাস্তা অবরোধ করে, পুলিশকে মারধর করে যাদবপুরের পড়ুয়ারা বুঝিয়ে দিতেন তাঁরা ঠিক কতখানি প্রতিবাদী, ঠিক কতখানি ন্যায়নিষ্ঠ, ঠিক কতখানি সত্যের অনুগামী। সেইসব ধোয়া তুলসীপাতা পড়ুয়ারা আজ কোথায়? প্রশ্ন সর্বত্র।
আরও পড়ুন-প্রতারণা করেছেন মোদি তোপ দাগলেন ডেরেক
প্রশ্ন-১. স্বপ্নদীপের হত্যাকারীদের শাস্তি চাই। একটা পোস্টারও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ল না? যতদিন না শাস্তি দেওয়া হবে ততদিন আন্দোলন চলবে, একটা সংগঠনও কেন বলল না? অধ্যক্ষের কাছে একটি দাবিও গেল না। ঢিল ছুঁড়লে যে যাদবপুর থানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে, সেখানে কেউ সাহস করে একটি অভিযোগও জানালেন না? একজনও স্বপ্নদীপের বাবা-মায়ের কাছে গেলেন না? হোক কলরব কোথায়? স্লোগান কি হারিয়ে গেল? নাকি রং দেখে কলরব শুরু হয়?
প্রশ্ন-২. রাজ্যের গর্ব যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ঘটনা ঘটলেই মাঝে মধ্যে দেখা যায় প্রাক্তনীরা নেমে পড়েছেন। কিছু বিশিষ্ট মুখ তাঁরাও প্রতিবাদে উত্তাল হন। স্বপ্নদীপ নিয়ে তাঁরা কেন নিশ্চুপ? স্বপ্নদীপে ‘মাইলেজ’ কম, তাই প্রতিবাদ আসছে না। নাকি বৃষ্টিতে মোমবাতি নিভে যাবে, তাই নেমে লাভ নেই?
আরও পড়ুন-দাদাগিরি ১০ ঘোষণা করলেন সৌরভ গাঙ্গুলী, ভাইরাল পোস্ট
প্রশ্ন-৩. রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যদি কিছুমাত্র খুঁত পাওয়া যায় তাহলে অনেকেই রে-রে শব্দে নেমে পড়েন। এই মুহূর্তে রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তিনি দায়িত্বে। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। কেন রাজ্যপালকে প্রশ্ন করছেন না তাঁরা, যাঁরা কোনও কিছু হলেই রাজ্যের দিকে আঙুল তোলেন? নাকি তলে তলে ওই সব রাজনৈতিক দলের নুন খেয়ে নিয়েছেন সেইসব বিশিষ্টরা?
প্রশ্ন-৪. যাঁরা আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে বিশ্ববিপ্লব করে ফেলেছিলেন, তাঁদের সেই বিপ্লব কি উগান্ডায় উড়ে গিয়েছে? তাঁরা এখন কোথায়? স্বপ্নদীপ তাঁদের ভাই নন? কমরেড নন? সহযোদ্ধা নন? মহম্মদ সেলিম আপনার ট্যুইট কোথায়? মীনাক্ষী আপনার ধর্মতলার বুকে প্রতিবাদী সভা কোথায়?
আরও পড়ুন-যাদবপুর কাণ্ডে গ্রেফতার আরও দুই পড়ুয়া
প্রশ্ন-৫. শিশু কমিশন যথার্থভাবেই বলেছে, যেভাবে মৃত্যু হয়েছে তাতে পরিষ্কার, স্বপ্নদীপের মৃত্যু আত্মহত্যা হতে পারে না। প্রশ্ন হল, হস্টেলের যিনি ডিন ছিলেন তিনি এখনও জিজ্ঞাসাবাদের বাইরে কী করে? তিনি তো জানবেন কোন প্রাক্তনীরা সেখানে ঘাঁটি গেড়ে ছিল? কাদের না ধরলে হস্টেলে জায়গা পাওয়া যেত না? অধ্যক্ষ কী করছিলেন? তাঁকে তো জবাব দিতে হবে। হস্টেলে এই ঘটনা ঘটে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা জানবে না, এটা একেবারেই অবাস্তব। ফলে জবাব অনেককেই দিতে হবে।
পাঁচ প্রশ্ন। সৎসাহস থাকলে উত্তর আসুক। প্রতিবাদ আসুক। নইলে বোঝা যাবে রং বুঝে আন্দোলন হয়। রং বুঝে কলরব হয়। রং বুঝে মোমবাতি মিছিল হয়।