যাদবপুরে (Jadavpur University) ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই তৎপরতার সঙ্গে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত ওই ঘটনায় আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। আরও প্রায় ২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পুলিশি তদন্তের মধ্যেই সামনে এল হস্টেলের এক নিরাপত্তারক্ষীর বয়ান। যা এই মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। এদিন লালবাজারে তলব করা হয়েছিল ডিন অফ স্টুডেন্ট ও রেজিস্টারকে। রেজিস্টার হাজিরা দিলেও ডিন অবশ্য যাননি। এই আবহে আচার্যের তলব পেয়ে রাজভবনে গিয়ে বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কর্তারা। হস্টেলে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন সিসিটিভি নেই তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হল এদিন।
ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আগেই এক প্রাক্তনী-সহ দুই পড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এবার পুলিশের জালে আরও ৬ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন বর্তমান ও তিনজন যাদবপুরের (Jadavpur University) প্রাক্তন পড়ুয়া। এই নিয়ে যাদবপুর-কাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৯। তিন প্রাক্তনী হলেন অসিত সর্দার, সপ্তক কামিল্যা ও সুমন নস্কর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বাসিন্দা অসিত সংস্কৃত বিভাগের চলতি বছরের পাস আউট। আরেক প্রাক্তনী সুমন মন্দিরবাজার ও পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের প্রাক্তনী। অভিযোগ, এরা ঘটনার পরই হস্টেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৩ পড়ুয়া। এদের মধ্যে রাজারহাটের বাসিন্দা অঙ্কন সর্দার ও জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষ এবং আসানসোলের বাসিন্দা আসিফ আজমল ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া। সৌরভ-সহ ধৃত তিনজনকে জেরা এদের নাম পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগ, এরা প্রত্যেকেই মৃত্যুর ঘটনায় এঁরা কোনও না কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সাইবার অপরাধ রুখতে রাজ্য পুলিশে তৈরি হচ্ছে উইং
এদিন একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তনীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তদন্তে জানা গিয়েছে, সেদিন রাতে রীতিমতো পরিকল্পনা করেই গেটে তালা দিয়ে পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশকে কী বয়ান দিতে হবে সেটাই প্রত্যেককে শেখানো হচ্ছিল। ফলে প্রথম দিকে প্রায় সব পড়ুয়াই পুলিশকে একই বয়ান দিচ্ছিল। ঘটনার পর ৪ বার জিবি মিটিং হয় হস্টেলে। কয়েকজন আবাসিক তড়িঘড়ি হস্টেল ছাড়ায় সন্দেহ হয় পুলিশের। তারপরই গোপন অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
এরই মধ্যে সামনে এসেছে হস্টেলের নিরাপত্তা রক্ষীর বয়ান। তিনি সেই রাতে যখন খাচ্ছিলেন কিছু ছেলে এসে বলে, গেটটা খুলে দিন, একজন পড়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি তিনি গিয়ে গেট খুলে দেন। এরপরই পড়ুয়ারা একটি ট্যাক্সি করে পড়ে যাওয়া ছাত্রকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন সেখানে অনেক ছাত্র জড়ো হয়েছিল। তাঁরাই এসে বলে, বাইরে থেকে কেউ যেন এখানে ঢুকতে না পারে, দেখবেন। ট্যাক্সি চলে যাওয়ার পর হস্টেল সুপার দ্বৈপায়ন দত্তের নির্দেশে তিনি গেট বন্ধ করে দেন। নিরাপত্তারক্ষীর বয়ান এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।