প্রতিবেদন: লাগাতার ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের জেরে বেহাল উত্তর ভারতের দুই রাজ্য হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড (Himachal Pradesh- Uttarakhand)। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন।
রবিবার থেকে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ধসের জেরে বিপর্যস্ত হিমাচলপ্রদেশ। লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে বন্যা-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তর ভারতের এই রাজ্যে। গত ৪ দিনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হিমাচলে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭০ জনের। সিমলায় ধসের ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ভারী বৃষ্টির সতর্কতা থাকায় ধসপ্রবণ এলাকার ঘরবাড়ি খালি করার -নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু। ধসের ফলে কালকা থেকে সিমলা যাওয়ার রেলপথে ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে বুধবার সমস্ত সরকারি, বেসরকারি স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে বৃহস্পতিবারও। এর মধ্যেই গত গত সোমবার প্রবল বৃষ্টি ও হড়পা বানে ভেসে যায় সিমলার সামার হিলের শিব বাওয়ারি মন্দির। বহু ভক্ত মন্দিরের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। ধসের সময় প্রায় ৩০ জন পুণ্যার্থী মন্দিরের ভিতরে ছিলেন। এখনও পর্যন্ত ১২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা গিয়েছে।
হিমাচলের (Himachal Pradesh- Uttarakhand) পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টি, বন্যা ও ধসে বিধ্বস্ত উত্তর ভারতের আর এক রাজ্য উত্তরাখণ্ডও। প্রকৃতির তাণ্ডবে দেবভূমির জোশীমঠে একাধিক বাড়িতে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই পাহাড়ি এলাকায় ধসের ফলে একটি দোতলা বাড়ি গুঁড়িয়ে গিয়েছে। ৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ির ধ্বংসস্তূপের তলায় এখনও চাপা পড়ে রয়েছেন অনেকে। মঙ্গলবার রাতে চামোলি জেলার বদ্রীনাথ হাইওয়ের পাশে বাড়িটি ধসে গুঁড়িয়ে যায়। উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। অলকানন্দা নদীর পাড়ে রাস্তা কাটার কাজে যুক্ত শ্রমিকরা ওই বাড়িটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। জোশীমঠে বিপর্যয় শুরু হয়েছিল বছরের গোড়াতেই। পরপর একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরে, বহু বাড়ি ভেঙে পড়ে। ভূমিধসপ্রবণ জোশীমঠের অস্তিত্ব নিয়েই আশঙ্কা দেখা দেয়। প্রাকৃতিক কারণেই জোশীমঠের মাটি আলগা। তার উপর অবাধে পাহাড় কেটে নগর সম্প্রসারণ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, জাতীয় সড়ক চওড়া করার কাজ চলায় শহরের ক্ষতি হচ্ছে। বারবার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করলেও তা অগ্রাহ্য করছে বিজেপি সরকার। এই পরিস্থিতিতে ভারী বৃষ্টি হলেই মাটি ধসে পুরনো বাড়িগুলি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
এদিকে উত্তরাখণ্ডে অবিরাম বৃষ্টির জেরে সেতু ভেঙে রুদ্রপ্রয়াগের বানতোলিতে অসংখ্য তীর্থযাত্রী এবং স্থানীয় মানুষ আটকে পড়েছেন। কর্তৃপক্ষের তরফে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। মধুগঙ্গা নদীর উপর নির্মিত সেতুটির একাংশ ভেঙে পড়ায় কেদারনাথগামী প্রায় ২০০ জন পুণ্যার্থী সেতুর কাছে আটকে পড়েছেন। অবিরাম বৃষ্টির কারণে ভূমিধসে বদ্রীনাথ, কেদারনাথ এবং গঙ্গোত্রী যাওয়ার বহু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। ধসের কারণে বেশ কয়েকটি বাড়িও তলিয়ে গিয়েছে। রুদ্রপ্রয়াগ জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আধিকারিক নন্দন সিংহ রাজওয়ার জানিয়েছেন, কেদারনাথ যাওয়ার রাস্তায় লিঞ্চোলিতে একটি ভূমিধসের কারণে চারটি দোকান চাপা পড়ে যায়। এই ঘটনায় নেপাল থেকে আগত এক যুবক নিহত হয়েছেন। এক জন ব্যবসায়ীর এখনও খোঁজ মেলেনি। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চারধাম যাত্রা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- আগামিকাল কলকাতায় আসছেন রাষ্ট্রপতি, থাকবেন মাত্র কয়েক ঘণ্টা