মানুষের সঙ্গে, মানুষের পাশে, মা-মাটি-মানুষের সরকার ছিল, আছে, থাকবে। কুৎসা উড়িয়ে, বিঘ্ন কাটিয়ে সঠিক দিশায় একটার পর একটা জনমুখী প্রকল্পের রূপায়ণ করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। লিখছেন মইনুল হাসান
বাংলায় দুর্গাপুজো শেষ, কিন্তু উৎসবের আবহাওয়া বিদায় নেয়নি। এরই মধ্যে নীরবে ৮০ লক্ষ মা-বোনের খাতায় ঢুকে গেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা। যা জননেত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। আমরা নারীর সশক্তিকরণের প্রসঙ্গে বড় বড় ভাষণ দিই। কিন্তু বাস্তবে কী করা উচিত সেটা আমরা জানি না। আমাদের মা-বোনদের হাতে ক’টা টাকা থাকলে যে তাঁরা একটু পায়ের তলায় মাটি পান সে তো আমরা সেই কবে থেকে জেনে আসছি। সেই জন্য তাঁরা হাঁস, মুরগি পোষেন, স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হন। এই টাকা ক্বচিৎ নিজের জন্য খরচ করেন তাঁরা। সন্তানের, পরিবারের সুখের জন্য খরচ করতে চান। তাতেই তাঁর আনন্দ। সে আনন্দকে আরও খানিকটা গতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করে।
সন্দেহ সমালোচনায় খামতি নেই। কোথা থেকে এত টাকা আসবে? কোন কোন উন্নয়নের কাজ বন্ধ হবে? কোন কোন দফতরের বাজেট ছাঁটাই হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। দু’মাসের টাকা এক সঙ্গেই পেয়ে গেছেন মা-বোনেরা। যাঁদের নাম সঠিকভাবে নথিভুক্ত হয়েছে তাঁরা সবাই পাবেন। এই প্রসঙ্গে কতকগুলো বিষয় সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন বোধ করি। কোন অর্থবলে সারা রাজ্যে মাসের পর মাস বিনাপয়সায় রেশন ব্যবস্থা চালু আছে? যদি তা না হত তাহলে কী হত? তখন কোভিড পরিস্থিতি খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছেন। ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে অসংখ্য বেকার। দেশের অর্থনীতিবিদরা বললেন যে, দেশ ক্রমেই মন্বন্তরের দিকে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ বেঁচে গেল বিনা পয়সায় খাদ্য বিতরণের জন্য। দেশের সরকার তারই অক্ষম অনুকরণ করল।
আরও পড়ুন-যৌনতায় অভ্যস্তকেও ধর্ষণ গুরুতর অপরাধ: কেরল হাইকোর্টের দৃষ্টান্তমূলক মন্তব্য
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটার পর একটা কাজকর্ম শুধুমাত্র এদেশের প্রথিতযশা সংস্থাগুলির প্রতিবেদনে প্রশংসিত হয়েছে তাই না, বিদেশি সংস্থাগুলি দ্বারাও প্রশংসিত। একটা রাজ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে তার অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হার বাড়িয়ে চলেছে। কর আদায়ের ক্ষেত্রে সারা দেশে নজির সৃষ্টি করেছে। স্বনির্ভরতার ক্ষেত্র সারা দেশের নজর কেড়েছে। সেই সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কথা হতে পারে— কিন্তু সন্দেহ প্রকাশ মহামূর্খের কাজ ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রত্যেকটা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছে হৃদয়। মানবিকতা। স্নেহের স্পর্শ। যার প্রধান কারিগর জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। স্কুলের ছেলেমেয়েদের পোশাক দেওয়া হয়। পিঠে স্কুল ব্যাগও দেওয়া হয়। কিন্তু সবই যেন বেমানান ঠেকছে। কারণ বহু বাচ্চার পায়ে জুতো নেই। অনেকের জুতো কেনার ক্ষমতা নেই। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করলেন সবাইকে জুতো দেওয়া হবে। এই চিন্তার পিছনে আছে একটা বৃহৎ হৃদয়। সরকার পরিচালনা কেবল কতকগুলো শুকনো সিদ্ধান্ত অথবা জটিল অঙ্ক নয়। একটা আবেগ, একটা স্নেহের পরশ না থাকলে তাতে চক্ষুদান হয় না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সেই শিল্পী, যিনি মহৎ হৃদয় দিয়ে বাংলার মানুষের ছবি এঁকেছেন।
কৃষিপ্রধান পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার শস্যশ্যামলা ভূমি, আন্দোলিত ফসল, নতুন ফসলের আগমনি বার্তা আমাদের যেমন মন ছুঁয়ে যায়। তেমনি এরাজ্যের প্রধান কারিগররা সোনার ফসল ফলায়। খাদ্যশস্য উৎপাদনে এ রাজ্য দেশে প্রথম স্থান নিয়েছে। এরাজ্যে খাদ্যে ঘাটতি নেই। বরং ধান উৎপাদনে প্রথম হয়েছে। ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প আমাদের অন্নদাতাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। এর তো কোনও বিকল্প নেই। কেন্দ্রীয় সরকার যা চালু করেছে তা অপর্যাপ্ত এবং বাংলায় প্রকল্পের নকল।
কেন্দ্রীয় সরকারের ইদানীং যে কোনও প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টাবার কুৎসিত ঝোঁক দেখা দিয়েছে। এতদিন বাচ্চাদের স্কুলে খাবার দেওয়া হত — মিড ডে মিল। এখন তা প্রধানমন্ত্রী পোষণ হয়েছে। এই ঘটনাগুলোর শেষ হওয়া প্রয়োজন। আর একটি ঘটনা দেখা যায় যে কোনও কোনও প্রকল্পে বেশিরভাগ অর্থ দিতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে, কিন্তু প্রকল্পের নাম হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নামে অথবা আরএসএস–এর কোনও নেতার নামে।
কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। জিএসটি যখন চালু হয় তখন বলা হয় কর আদায়ের ঘাটতি কেন্দ্র সরকার পূরণ করে দেবে ৫ বছর। তারমধ্যে রাজ্যগুলো স্বয়ম্ভর হয়ে উঠবে। তা হয়নি। বরং রাজ্যগুলির এক্ষেত্রে পাওনা টাকা সময়মতো দেওয়া হচ্ছে না। এখন ৫ বছরের সময়সীমাকে বাড়িয়ে ১০ বছর না করলে উপায় নেই। বাংলা থেকেই এ দাবি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অর্থ পাওয়া রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কেন্দ্রের সহযোগিতা স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী ঢাকঢোল পিটিয়ে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন। কিন্তু অর্থ আসে না। যতটুকু আসে তা ধার বা অগ্রিম হিসাবে। আমফান-সহ অন্যান্য দুর্যোগে তাই হয়েছে।
এতকিছু বাধা-বিপত্তি ঠেলে বাংলাকে চলতে হয়। আর্থিক সংকট আছে। কিন্তু মানুষ আছে এটাই বড় সত্য। মানুষের ভাল করো। মানুষের সঙ্গে থাকো। এটাই মা-মাটি- মানুষের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। যে বাংলার মা-বোনেরা ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকারকে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যাঁরা ক্লান্তিহীন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন— তাঁদের ভাল করাটা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর মানুষই যদি না থাকল, আর মানুষের জন্যই যদি কিছু না করা হল, তাহলে সরকার কেন? মানুষই আসল সম্পদ। তাদের জন্য মমতার হাত বাড়িয়ে রেখেছে এই সরকার।