প্রতিবেদন : ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়ে ইতিমধ্যেই আকসাই চিন, অরুণাচলকে (Arunachal Pradesh) নিজেদের অংশ বলে দাবি করে মানচিত্র প্রকাশ করেছে শি জিনপিং সরকার। এর কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারতও। তারমধ্যেই সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। উপগ্রহ চিত্র থেকে জানা গেল, আকসাই চিন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড এবং ব্যাঙ্কার তৈরি করেছে চিন। সেনাবাহিনীকে বিমান থেকে সাহায্য করা অথবা মিসাইল হানার সুবিধা করে দেওয়া যায়, এমন নানা প্রতিরক্ষামূলক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। আকসাই চিনের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে উপগ্রহ চিত্রে।
চিনের এই কর্মকাণ্ড সামনে আসতেই ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ সামনে এল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, সুড়ঙ্গ ও খাদ তৈরি করেছে লাল ফৌজ। নতুন সেনা ছাউনি ও সীমান্তে অস্ত্র ভাণ্ডার বানানোর উদ্দেশ্যেই এই সুড়ঙ্গ তৈরি করছে চিন, এমনটাই দাবি। প্রসঙ্গত, জম্মু-কাশ্মীরের পূর্বে লাদাখ সংলগ্ন অংশ, যা ১৯৬২ সালের যুদ্ধে দখল করে নিয়েছিল চিন, সেই অংশই আকসাই চিন নামে পরিচিত।
আকসাই চিনের যেখানে পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে বেজিং, সেখান থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, নতুন রাস্তা, আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার জন্য একাধিক প্রবেশ পথ তৈরি করেছে চিন। ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। এর আগে গত এপ্রিলে অরুণাচল প্রদেশের ১১টি জায়গার নাম বদলে দেয় চিন। জি-২০-এর একটি বৈঠক হয় অরুণাচল প্রদেশের (Arunachal Pradesh) রাজধানী শহর ইটানগরে। সেই বৈঠকে যোগ দেয়নি চিন। ভারত ভূখণ্ড ঘিরে বেআইনি দাবি ও আগ্রাসন চালালেও চিনের কার্যকলাপ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতায় প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক মহল।
আন্তর্জতিক জিও-ইন্টেলিজেন্স বিশেষজ্ঞেরা গত এক সপ্তাহ ধরে এই সমস্ত স্যাটেলাইট ইমেজগুলিকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ গত কয়েকমাসে এই এলাকায় কংক্রিটের নির্মাণও বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। আকসাই চিনে ভারী অস্ত্রশস্ত্র বয়ে নিয়ে আসা এবং এখানে রেখে ব্যবহারের মতো পরিকাঠামো তৈরি করছে চিন। আকসাই চিনে তাদের সামরিক পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে, মিসাইল সিস্টেম বসছে, হেলিপ্যাড তৈরি হচ্ছে। আকসাই চিন লাগোয়া দৌলতবেগ ওল্ডির কাছেও সেনা বাড়িয়েছে চিন। দৌলতবেগের ৭০ কিলোমিটার পূর্বে কুইজিল জিলগার কাছে নতুন বাঙ্কার তৈরি হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, সেখানে অস্ত্রশস্ত্র সমেত থাকারই পরিকল্পনা করেছে লাল ফৌজ। প্রায় ১৩০ মিটার এলাকাজুড়ে এমন নির্মাণকাজ দেখা গিয়েছে। এদিকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমে এক প্রশ্নের জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘আমি বছরের পর বছর ধরে বলে আসছি, লাদাখের এক ইঞ্চি জমিও হাতছাড়া হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রী যে দাবি করছেন তা সম্পূর্ণ ভূল। পুরো লাদাখ জানে, সেখানে চিনের আগ্রাসন হয়েছে। মানচিত্রের বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওরা আমাদের ভূখণ্ড দখল করে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এনিয়ে বিবৃতি দেওয়া দরকার।’’ তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখেল বলেছেন, জি-২০ সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দিল্লিতে আসার আগে এই মানচিত্র প্রকাশ করেছে বেজিং। এরপরও প্রধানমন্ত্রী কি ২০২৪ নির্বাচনের প্রচারের জন্য নাচ-গানে ব্যস্ত থাকবেন? কেন্দ্রের নীরবতাকে খোঁচা দিয়ে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী চিন নিয়ে ফের মোদির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ২০২০ সালে মোদি বলেছিলেন চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার করেনি এবং চিন ভারতমাতার অংশ দখল করেনি। তিনি একথা বলে সেইসময় ভারতবাসীকে ভুল বুঝিয়েছিলেন। মোদির এই মিথ্যা বড় পাপ।
আরও পড়ুন: ইন্ডিয়া জোটে প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য একাধিক, এনডিএতে একজনই, মোক্ষম খোঁচা উদ্ধব ঠাকরের