সুমন তালুকদার, বসিরহাট: অদ্ভুত নাম! কলারছড়া দুর্গাপূজা। কিন্তু এই নামের নেপথ্যে রয়েছে এক কথকতা। ১৭৯৩ এর ঘটনা। মহামায়ার মূর্তি তৈরির সময় ১০টি হাতের মধ্যে ৮টি হাতই ভেঙে যাচ্ছিল বারবার। পরপর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। পরিবারে অমঙ্গলের আশঙ্কা। শেষে স্বপ্নাদেশ পেয়ে বসু পরিবারের কর্তা ঠিক করলেন ৮টি হাতের মাপ ছোট করে দেওয়া হবে। সেগুলি থাকবে পেছনের দিকে। সামনের হাতদু’টি অবশ্য স্বাভাবিক থাকবে। প্রতিমা নির্মাণের পর ৮টি ছোট হাত একসঙ্গে দেখে মনে হত যেন কলার ছড়া।
আরও পড়ুন-ট্রুডো এবার সরব রাশিয়ার বিরুদ্ধেও
সেই থেকেই বসিরহাটের বসুবাড়ির পুজোর নাম হল ‘কলারছড়া দুর্গাপুজো’। আর মাত্র কয়েকটি দিনের অপেক্ষা। বসিরহাটের বসুবাড়িতে শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে প্রস্তুতি। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ঠাকুরদালান মেরামতি, রং করা, প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে এই পুজোর ইতিহাস, নামকরণ ও বেশকিছু প্রাচীন প্রথা আজও সময়ের হাত ধরে বহন করে আসছেন বসিরহাটের মানুষ। পুজোর নামেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া। মহালয়ার দিন থেকেই উৎসবের পরশ উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দণ্ডিরহাট নলকোড়ায় অবস্থিত প্রাচীন বসুবাড়িতে। এই পুজো শুরুর নির্দিষ্ট সময়কাল জানা না থাকলেও বসু পরিবারের সদস্যদের দাবি, ১৪৬০ থেকে ১৪৭০ খ্রিস্টাব্দে এই দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-মুখঢাকা সমস্ত পোশাক নিষিদ্ধ সুইজারল্যান্ডে, পার্লামেন্টে বিল পাশ
যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা ঈশ্বরীগুপ্ত বসু এই পুজো শুরু করেন। সেখান থেকেই চলে আসছে এই পুজো। কথিত আছে, প্রতাপাদিত্যও এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে প্রথমে থেকেই এই পুজোর নাম ‘কলার ছড়া দুর্গাপূজা’ ছিল না। ১৭৯৩ সালে প্রতিমা তৈরির সময় মহামায়ার পেছনের ৮টি হাত বারবার ভেঙে যেতে থাকে। হাতগুলি বারবার মেরামতি করে তবেই পুজো করতে হত। আসলে প্রতিমা তৈরির সময়ে বারবার পায়রা হাতগুলির উপর বসার ফলে সেগুলি ভেঙে যাচ্ছিল। কিন্তু পায়রার উৎপাত কোনও ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছিল না। বহু চেষ্টা করেও না। ১৭৯৩ থেকে ১৭৯৭ পর্যন্ত এই পাঁচ বছর এভাবেই পায়রার উৎপাতে প্রতিমার হাত ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকায় পরিবারের সদস্যদের ধারণা হয়, অমঙ্গলের এটা অমঙ্গলের সংকেত।
আরও পড়ুন-মধ্যপ্রদেশে আদিবাসীকে মার বিজেপি নেতার
১৭৯৭ সালের পর তৎকালীন বসু পরিবারের প্রধান গোপাল বসু স্বপ্নাদেশ পান প্রতিমার ১০টি হাতের মধ্যে পেছনের ৮টি হাত ছোট করে দিতে। তবে সামনের দুটি হাত প্রমাণ সাইজের থাকলেও পেছনের ৮টি হাত ছোট করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই প্রতিমার হাত ভাঙা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিমার ওই ছোট হাতগুলিকে অনেকটা কলার ছড়ার মতো দেখায়। তাই তখন থেকেই বসুবাড়ির পুজোর প্রতিমার নাম হয়ে যায় ‘কলারছড়া দুর্গাপূজা’।