পানাজি : ত্রিপুরার মতো গোয়াতেও ভয় পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে আটকাতে পুলিশ-প্রশাসনকে মাঠে নামাল বিজেপি। সোমবার দুপুরে গোয়ায় দলের ‘ক্যাম্পেন লঞ্চ’ অনুষ্ঠান ছিল। চারদিন আগেই এই অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়েছিল গোয়ার পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে। অনুষ্ঠান চলাকালীন আচমকা আইন-শৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় গোয়া পুলিশ। পরে মাইক-সাউন্ড বক্স ছাড়াই বাকি অনুষ্ঠান করেন আজাদ ময়দানের বাইরে। দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় জানান, বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসকে ভয় পাচ্ছে। তাই এই ধরনের কুৎসিত আচরণ করছে। এর তীব্র নিন্দা করছি। আজাদ ময়দানে আটকালেও এই চার্জশিট গোয়াবাসীর বাড়ি বাড়ি তৃণমূল কংগ্রেস পৌঁছে দেবে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল গোয়ার রাজ্যপালের কাছে গিয়ে এনিয়ে স্মারকলিপি জমা দেবে।
আরও পড়ুন : গোয়ার চায়ের দোকানে মিটিং করব, চ্যালেঞ্জ মমতার
এই পরিস্থিতিতে গোয়ার পানাজির আজাদ ময়দানে সোমবার দুপুরে পিপলস চার্জশিট প্রকাশ করল তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে উপস্থিত ছিলেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহসভাপতি লুইজিনহো ফালেরিও, সাংসদ সৌগত রায়, সাংসদ মহুয়া মৈত্র, বাবুল সুপ্রিয়রা। মাঝপথেই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে আজাদ ময়দানে বসে পড়েন তৃণমূল নেতারা। পিপলস চার্জশিট প্রকাশ করেন। যে বিষয়গুলি পিপলস চার্জশিটে তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল, গোয়ার প্রায় ২০ শতাংশ যুবক বেকার। গোয়ার সাধারণ মানুষ এখানে নিজেরা বাড়ি কিনতে পারেন না।
ন্যাশনালাইজেশন অফ রিভার্স-এর মাধ্যমে গোয়ার বর্তমান সরকার রাজ্যের নদীগুলির উপর থেকে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে তা দিল্লির হাতে তুলে দিয়েছে। মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদা, সামাজিক অন্যায় এবং ক্রাইমের নতুন হটস্পট হিসেবে গোয়ার উঠে আসা এবং মৎস্যজীবীদের সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়েছে এই চার্জশিটে।
এই চার্জশিট প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলার সঙ্গে গোয়ার আত্মিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন তৃণমূল নেতা বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বলেন, মাছ-ভাত ফুটবল-সহ একাধিক বিষয়ে গোয়ার সঙ্গে বাংলার মিল রয়েছে। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গোয়ার মানুষের উন্নতির স্বার্থে কাজ করবে তৃণমূল কংগ্রেস।
অনুষ্ঠান বাতিল প্রসঙ্গে বিজেপি সরকারকে তোপ দেগে বাবুল বলেন, গোয়ার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে গিয়েছে বিজেপির আমলে। তৃণমূলের এই অনুষ্ঠানে জনসমাগম হবে বুঝতে পেরে অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করে দিয়েছে বিজেপি প্রশাসন। পাশাপাশি গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফালেরিও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্ট্রিট ফাইটার এবং গোয়াতে বিজেপির অপশাসনের বিরুদ্ধে গোয়ার রাস্তায় নেমে লড়াই করবেন তাঁরা।
আরও পড়ুন : ৫০ কোটির প্রকল্প উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী
আগামী বছরের শুরুতেই গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই এগোচ্ছে দল। প্রতিদিনই অন্য দল থেকে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা যোগ দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষও যুক্ত হচ্ছেন। সেখানে যেমন প্রাক্তন ফুটবলাররা রয়েছেন, আবার লাকি আলির মতো পরিচিত বলিউডের সঙ্গীতশিল্পীরাও রয়েছেন। বলিউড অভিনেত্রী বর্ষা উসগাঁওকারের মতো অভিনেত্রীরাও মুখিয়ে আছেন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেবেন বলে।
সোমবার সাতকালেই গোয়ার তৃণমূল নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়াত সিদ্ধিনায়েকের বাড়িতে যান সাংসদ সৌগত রায়, বাবুল সুপ্রিয়, মহুয়া মৈত্ররা। সেখানে গিয়ে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান তাঁরা। সিদ্ধিনায়েকের রহস্যমৃত্যু নিয়ে এখনও তাঁর পরিবার ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। গোয়ার প্রশাসন কথা দিয়েও এই রহস্যের কিনারা করতে পারেনি। এ বিষয়ে বাবুল সুপ্রিয় জানান, মৃতের পোস্টমর্টেমের সময় নিয়মকানুনও ঠিক মতো মানা হয়নি। এ ছাড়া এই মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। গোয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার আসাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। তারপর এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে নতুন সরকার।