শিল্পী সিংহরায়, ফিলাডেলফিয়া: বিদেশবিভুঁইয়ে প্রতিবছর দুর্গোৎসব পালিত হলেও পুজোর (Philadelphia- Durga Puja) দিন ঠিক হয় উইকএন্ডেই। না হলে প্রবাসে সকলের পক্ষে তো আর কাজে ছুটি নিয়ে উৎসবে শামিল হওয়া সম্ভব নয়! এবারও যেমন বাংলায় পঞ্জিকা মেনে দুর্গোৎসব শুরু হতে কয়েকদিন বাকি থাকলেও আমাদের এখানে উমার বোধন ও বিদায় সারা। দেশে যখন সবাই পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তখন আমি যোগ দিয়েছি উমার বিসর্জনের শোভাযাত্রায়। প্রবাসের পুজোয় সময়ের এই হেরফের বাদ দিলে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠায় কোনও খামতি নেই।
এবছর মহালয়ার দিন শনিবার শুরু হয়েছিল আমাদের দুর্গাপুজো। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী একইদিনে হয়েছে। রবিবার ছিল নবমী ও দশমি। তারপর বিসর্জন। তবে প্রবাসেও পুজো হয় একেবারে দেশের মতোই। কলাবউ স্নান, অঞ্জলি, খাওয়াদাওয়া আড্ডা সবই। খিচুরি-লাবড়া, নারকেল নাড়ু তৈরি হয়। ফিলাডেলফিয়ায় ট্রাকে করে আনা হয় প্রতিমা। পুজোর শেষে আমাদের প্রতিমা বিসর্জন হয় না। সংরক্ষণ করে রাখা হয় একটি স্টোররুমে। প্রতিবার পুজোর আগে একটি ট্রাকে করে সেই স্টোররুম থেকেই আনা হয় মা দুর্গাকে। কোনও বন্ধু বা দাদা সেই ট্রাক চালিয়ে মা-কে নিয়ে আসেন মণ্ডপে। এবার একটি বিরাট স্কুলে আমাদের পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। জুলাই মাস থেকেই পজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলাম আমরা। আট থেকে আশি সকলেই পুজোর কাজে হাতে লাগান এখানে। মণ্ডপসজ্জা, ভোগরান্না, অতিথি আপ্যায়ন প্রতিটি বিষয় আমরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিই। এখানে বাচ্চাদের অংশগ্রহণও দেখার মতো। সারাবছর ওদের লেখাপড়ার ব্যস্ততা থাকলেও পুজোয় মণ্ডপসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ওরা। গ্রেটার ফিলাডেলফিয়ার (Philadelphia- Durga Puja) এই পুজোয় এবার আমরা ৮০০ জন প্রবাসী একত্রিত হয়েছিলাম। পুজোর দু’টো দিন হইহই করে মহানন্দে কেটেছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ-গান তো ছিলই। ঠিক যেমনটা ছেলেবেলায় পাড়ার পুজোর অনুষ্ঠানের জন্য যেমন রিহার্সাল করতাম, এখানেও তাই। অফিস, সংসার সব সামলে আমরা পুজোর আগের সন্ধেগুলোয় প্রস্তুতি নিয়েছি। সবকিছু সুন্দরভাবে মিটেছে। পুরোহিত থেকে এক্সিকিউটিভ কমিটির সব সদস্যের অন্যদিন কাজ থাকে। তাই আমাদের পুজো প্রতিবার উইকএন্ডেই হয়। বিদেশে সকলেই মোটামুটি তাই করেন।
এখানে কাশফুল নেই , ম্যাপেল পাতায় লাল রং ধরেছে। কিন্তু শরতের আকাশ সেই একইরকম। মায়ের আগমন এখানেও আকাশে-বাতাসে ধরা দেয়। সুদূর প্রবাসেও তাই এই পুজোর জন্য আমরা দিন গুনতে থাকি। দেশ থেকে আত্মীয় পরিজনদের পাঠানো জামা-কাপড়ের জন্য অপেক্ষা করি। পুজো শেষে এখন সেই মনখারাপ! আবার আমাদের অপেক্ষার দিন গোনা শুরু।
আরও পড়ুন- ভারতের প্রথম সরকারি অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা ‘যাত্রী সাথী’র সূচনা