অন্যরকম অ্যাডভেঞ্চার
অদ্ভুত একটা আকর্ষণ রয়েছে সুন্দরবনের (Sundarbans)। সারা বছর বহু মানুষ ছুটে যান। ঘুরে বেড়ান জলপথে। রহস্যময় জঙ্গলের সঙ্গে পাতান সাময়িক বন্ধুতা। পান ভয়-মিশ্রিত আনন্দ। এই জলসফর মূলত হয়ে থাকে নৌকায়, লঞ্চে। তবে দুর্গাপুজো উপলক্ষে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তর। সেটা কী? জাহাজে সুন্দরবন ভ্রমণ। পাওয়া যাচ্ছে একটু অন্যরকম স্বাদ। মুখোমুখি হওয়া যাচ্ছে অন্যরকম অ্যাডভেঞ্চারের।
আশ্চর্য জলসফর
সুদৃশ্য জাহাজ এমভি সর্বজয়া পর্যটকদের নিয়ে যায় সুন্দরবনের (Sundarbans) গভীরে। যেখানে পরতে পরতে রহস্য, রোমাঞ্চ। তার আগে বিবাদী বাগে পর্যটন দফতরের অফিসে রিপোর্টিং করতে হয়। সেখান থেকে পর্যটকদের জন্য পর্যটন দফতর সব ব্যবস্থা করেন। সমস্ত দায়দায়িত্ব থাকে তাঁদের কাঁধে। কী করেন তাঁরা? বিবাদী বাগ থেকে ভলভো বাসে তোলা হয় পর্যটকদের। বাসে চাপার পরেই ব্রেকফাস্ট দিয়ে দেওয়া হয় পর্যটকদের। বাস ছোটে বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে। মোটামুটিভাবে আড়াই ঘণ্টার লাগে সোনাখালি পৌঁছতে। সেখানেই অপেক্ষায় থাকে এমভি সর্বজয়া।
মাতলা-হোগল নদীর উপরে। নৌকার মাধ্যমে জাহাজে নিয়ে যাওয়া হয় পর্যটকদের। দুপুর ১২টায় ছাড়ে এমভি সর্বজয়া। সুন্দরবনের পথে রওনা দেয় জাহাজটি। শুরু হয় আশ্চর্য জলসফর।
জাহাজটি কেমন?
সাধারণ ডেকের পাশাপাশি জাহাজের মধ্যে এসি ডেক রয়েছে। ব্যবস্থা অনেকটা টু টিয়ার এসি কামরার মতো। টু টিয়ার এসি কামরার মতোই এখানে বালিশ, চাদর, কম্বল, টাওয়েল দেওয়া হয়। আবার নন এসি ডেকও রয়েছে। সেখানে এসির মতোই ব্যবস্থা। কেবল এসি থাকে না।
চাইলে কেবিনেও থাকা যায়। সব ব্যবস্থাই আছে জাহাজে। লোয়ার ডেকে রয়েছে সেই সব থাকার জায়গা। আবার আপার ডেকে আছে ডাইনিং। খোলামেলা পরিবেশে আড্ডা মারার জায়গা। দুপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জঙ্গল। এখানে বসে চারিদিকের চিরসবুজ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। জাহাজের মধ্যেই হয় রান্না এবং খাওয়াদাওয়া। এই ডেকে বসে খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা।
জাহাজ টানা ভাসে না। স্বাদ বদলের জন্য বিভিন্ন অফবিট লোকেশনে মাঝে মাঝে হল্ট দেয়। নৌকা ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন ঘাটে। সেখান থেকে জঙ্গলের ভেতরে ঘুরিয়ে আনা হয় পর্যটকদের।
কোথায় কোথায় যাওয়া হয়?
যাওয়া হয় সুতানুখালি ঘাট। যেখানে রয়েছে বনদেবী আর দক্ষিণ রায়ের মন্দির। সুযোগ থাকে দেবীদর্শনের। আশেপাশের গ্রামে হয় মা দুর্গার আরাধনা। শহুরে পর্যটকরা এইসব জায়গায় দেদার ছবি তোলেন। ওঠে প্রচুর নিজস্বী। তবে হৈহুল্লোড়ের জায়গা নয় সুন্দরবন। নিজেকে, নিজেদের সমর্পণ করতে হয় নির্জনতার মধ্যে। তবেই মুখোমুখি হওয়া যায় প্রকৃত আনন্দের।
আরও পড়ুন- বন্দুকের দু’বার গর্জনে মা দুর্গার বিসর্জন হয়
ওয়াচ টাওয়ার থেকে
আছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। তার উপরে উঠে বসে তাকিয়ে থাকা যায় জঙ্গলের দিকে। কপাল ভাল থাকলে যে-কোনও সময় বাঘের দর্শন পেয়ে যেতেও পারেন। যদিও সচরাচর তিনি দেখা দেন না।
এখান থেকে দেখানো হয় সজনেখালি, সুধন্যখালি, ডোবানকি। সুন্দরবনের একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য সজনেখালি। একটি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য। আয়তন ৩৬২ বর্গকিলোমিটার। ১৯৬০ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটিকে অভয়ারণ্য ঘোষিত করে। এখানে চিত্রা হরিণ, মেছো বিড়াল, লাল বানর, বাংলা বাঘ, দেশি বন শূকর, ভোঁদড়, গুই সাপ, লোনা জলের কুমির, জলপাইরঙা সাগর কাছিম, কেটো কচ্ছপ, এবং নানা প্রজাতির পাখি দেখা যায়। সুধন্যখালিতে আছে বাঘ সংরক্ষণ উদ্যান। এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী ও পাখি। অনেকেই এখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে নদীর ধারে বনে বিশ্রাম নিতে দেখেছেন। আবার কখনও নদীতে সাঁতার কাটতেও দেখা গিয়েছে। জলে রয়েছে কুমির। অর্থাৎ ডাঙায় যেমন বিপদ, তেমন জলেও বিপদ।
অক্টোবর থেকে এপ্রিল
নদী ও ম্যানগ্রোভের জঙ্গলের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগের পাশাপাশি দেদার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। যদিও খাবারদাবার একেবারে বাড়ির মতো। মনেই হবে না বাইরে খাচ্ছেন। সেদিন রাত্রিবাস করার পর পরের দিন নির্ধারিত সময়ে জাহাজ সোনাখালি পৌঁছয়। সারাদিন বেড়ানো চলে জল-জঙ্গলের মধ্যে। চারদিকে সবুজরহস্য। অপলক তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এমনিতে নির্জন নিরিবিলি। তবে মাঝেমধ্যে শোনা যায় বন্যপ্রাণী এবং নানারকম পাখির ডাক।
বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে আবার সোনাখালি থেকে বাস বিবাদীবাগে পৌঁছে যায় পর্যটকদের নিয়ে। জাহাজে সুন্দরবন (Sundarbans) বেড়ানো এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। অক্টোবর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলে এই জাহাজ-সফর। পুজোয় বা পুজোর পরে নাগরিক কোলাহল থেকে কিছু সময় দূরে থাকতে চাইলে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে। এক রাত দুদিনের ট্যুরে খরচ ৫৬৯০ টাকা। দুই রাত তিন দিনের ট্যুর হলে খরচ ৭১৪০ টাকা। বিস্তারিত জানতে দেখুন পর্যটন বিভাগের ওয়েবসাইট।