মহিষাসুর বধে দেবতাদের আশীর্বাদে দেবী দুর্গা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ছিলেন। এযুগের দুর্গা ডলি রানা (Dolly Rana)। তার কাছে দৈবাস্ত্র না থাকলেও তার কাছে ছিল মানসিক জোর আর ঋণে কেনা একটি বাস। টানা পোড়েনার সংসারের ‘অভাব অসুরে’র সঙ্গে যুদ্ধে আজ তিনি বিজয়ী। তিনি যেন এযুগের দুর্গা। মা এসেছেন তাঁর বাপের বাড়িতে। সন্তানদের নিয়ে। এই ভরা উৎসবে সবাই যখন নতুন পোষাক পরে মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জা দেখতে ও খাওয়াদাওয়া করতে ব্যস্ত, তখন ডলিদেবী বাসের গায়ে চাপড় মেরে বাসযাত্রীদের থেকে টিকিট কাটার আবেদন জানাচ্ছেন। তার যেন আবসর নেই। ঋণের টাকা শোধ হয়ে গেলেও টানাপোড়েন পরিবারের জন্য তিনি কন্ডাক্টরি করে চলেছেন। তবে দশমীতে তাঁর ছুটি। দিনটা একেবারে ব্যক্তিগত। মায়ের এই কৈলাস যাত্রার দিনেই তিনি তার কারখানার শ্রমিক স্বামীর সঙ্গে কাটান।
ডলিদেবী বাসের রুট বেলগাছিয়া থেকে হাওড়া। প্রথম প্রথম মেয়েলি কণ্ঠে ‘দাদা ভাড়াটা দেবেন’ শুনে যাত্রীরা চমকে উঠতেন। তবে আজ জীবনযুদ্ধে সবটাই স্বাভাবিক। এখন সবাই চেনেন কন্ডাক্টর দিদিকে। কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে, সাইড ব্যাগ বগলদাবা করে, একের পর এক স্টপেজের নাম হাঁকতে থাকেন তিনি। সংসারে সব কাজ সারতে সারতে মনটাও সাজিয়ে নিয়েছেন। সংসারের ভিতটা মজবুত করতেই তার আজ এই যুদ্ধ। স্বামীর ওই ক’টা টাকায় চলছিল না সংসার। সংসারের সদস্য ভাই, বোন, আর বোনপো। ভেবেছিলেন, বাসটা ঠিকঠাক চলে গেলেই দিন বদলাবে। দু’বছর কোনমতে গড়িয়ে গড়িয়ে চলছিলো। অপেক্ষা বাড়ছিল। সঙ্গে ঋণের বোঝা। কিছুতেই লাভ হচ্ছে না। অগত্যা কাঁধে ব্যাগ তুলে নিলেন ডলিদেবী (Dolly Rana)। শুরু করলেন কন্ডাকটারি। রাজেশ জয়সওয়াল প্রথম দিন থেকেই বাসটি চালান। তার দাবি ওনাকে আমি মালিক হিসেবে দেখি না। নিজের দিদি মনে করি। উনি কন্ডাক্টর হিসেবে কতটা সফল, আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। পুরো রুটে কোনও যাত্রীর সঙ্গে কখনও রাগারাগি বা তর্ক করতে দেখিনি।
আরও পড়ুন: মহানগরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা, নজরদারি বাড়াল কলকাতা পুলিশ
ডলি দেবী নিজের কথা বলতে গিয়ে আনেকটা নির্বিকার তিনি। তার দাবি প্রথমে অনেক কিছুই জানতাম না। মনের জোরে আর সংসারের তাগিদে নেমে পড়েছিলাম। আজ সবটাই সড়গড়। বাসের ইএমআই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন পরিবারের সঞ্চয়ের জন্যই লেগে আছি। কেমন একটা নিয়মের মধ্যে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। শারদোৎসবে মেতেছে বাঙালি। মাতৃবন্দনায় ব্যাস্ত সকলেই। আজ মৃন্ময়ী মায়ের সঙ্গে বাস্তবের ডলিদেবী কোথায় যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। তবে মা কৈলাসে ফিরে গেলেও, বেলগাছিয়া থেকে হাওড়ার রোজনামচায় থেকে যাবেন কন্ডাক্টর ডলি রানা।