অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : পেগাসাস আড়িকাণ্ডে মুখ পুড়ল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্ত কমিটি তৈরি করে দিল। একইসঙ্গে কেন্দ্রের কমিটি তৈরির প্রস্তাবও খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশ, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রবীন্দ্রনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি এই আড়িকাণ্ডের তদন্ত করবে। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের পর তদন্তে বিজেপির সরকারের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনেও আড়িপাতা হয়েছিল। গত বাদল অধিবেশনে সংসদের ভিতরে ও বাইরে পেগাসাস নিয়ে তদন্তের দাবিতে সর্বপ্রথম ও ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসই। সংসদের ভিতরে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে টানা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদরাই। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রথম তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি তোলেন, মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ করতে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে যেরকম বেআইনিভাবে সমাজের সর্বস্তরে আড়ি পাতছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক শীর্ষ আদালত। অবশেষে তাই হতে চলেছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্না, বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ রায় দিয়েছে, দু’মাস বাদে এই কমিটি সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির দিন তাদের রিপোর্ট পেশ করবে। আদালতের বক্তব্য, পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারির অভিযোগ মৌলিক অধিকারের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। একইসঙ্গে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। কেন্দ্রীয় সরকারকে পেগাসাস অভিযোগ সম্পর্কে যথাযথ বক্তব্য জানানোর যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও তারা এই বিষয়ে গড়িমসি করেছে। এদিনের রায়ে কেন্দ্রকে তাদের মনোভাবের জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করেছে শীর্ষ আদালত। পেগাসাস নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। থাকছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরাও। মামলার পর্যবেক্ষণে ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট জানায়, জবাব দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার পরও যেহেতু সদুত্তর আসেনি তাই তদন্ত কমিটি গঠন করে দিল কোর্ট। ব্যক্তি গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার প্রশ্নে আপস করা যায় না।
আরও পড়ুন : ভোটের আগে বিএসএফ ক্যাম্পে বিজেপি, প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ তৃণমূলের
একনজরে তদন্ত কমিটি
* পেগাসাস দিয়ে বেআইনি নজরদারির সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বা সিট। তাকে সহায়তার জন্য থাকবে তিন সদস্যের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কমিটি।
* সিটের নেতৃত্বে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আরভি রবীন্দ্রন। অন্য সদস্যরা হলেন অলক গোস্বামী ও সন্দীপ ওবেরয়।
* টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা হলেন সাইবার সিকিউরিটি ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ নবীনকুমার চৌধুরী, প্রভাকরণ পি এবং অশ্বিন অনিল গোমস্তি।
আরও পড়ুন : বিজেপি ছাড়লেন বাবু মাস্টার
স্বাগত জানাল তৃণমূল
ডেরেক ও’ব্রায়েন : কোর্টের রায়ে স্পষ্ট হয়ে গেল বিজেপি নিজেদের স্বার্থে পেগাসাসকে ব্যবহার করেছে। সংসদে আমরা যে আওয়াজ তুলেছিলাম তা সত্যি বলে প্রমাণিত হল। মোদি-শাহ পেগাসাস নিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইলেও সফল হলেন না।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় : সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই। আমরা আগেই এর তদন্ত চেয়েছিলাম। আশা করি তদন্তে প্রকৃত সত্য সামনে আসবে।
সৌগত রায় : বাদল অধিবেশনে যে দাবি তুলেছিলাম তারপর এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। সংসদে পেগাসাস ইস্যুতে তৃণমূলই প্রথম সোচ্চার হয়। পরে আমাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিল বাকি বিরোধীরা। কীভাবে পেগাসাস দিয়ে বিরোধীদের ওপর নজরদারি চলেছিল তা স্পষ্ট হবে।
কুণাল ঘোষ : প্রমাণিত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদক্ষেপ সঠিক ছিল। তদন্তের স্বার্থে শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার ও জেরা করা হোক। ও বলেছিল সব কল লিস্ট ও রেকর্ডিং ওর কাছে আসে।