প্রতিবেদন : ১২ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত। একযুগ পর বদলা নিলেন রোহিতরা। পরাজিত নিউজিল্যান্ড। নায়ক হওয়ার মঞ্চ তৈরি হয়েছিল ওয়াংখেড়েতে। মাঠ জুড়ে বিরাট। রোহিত ঝড় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেলেও শ্রেয়স আর গিলকে সঙ্গে করে সেঞ্চুরি করলেন, টপকালেন আইডল শচীনকে। একদিনের ক্রিকেটে ৫০টি শতরানের বিশ্বরেকর্ড এখন ভারতীয় দলের চিকুর পকেটে। এরপর শ্রেয়সের সেঞ্চুরি এবং কে এল রাহুলের ঝোড়ো ইনিংস। যখন তাঁরা থামলেন, তখন ভারত ৪ উইকেটে ৩৯৭। নিশ্চিত বিরাট স্কোর। দ্বিতীয় ইনিংসে শিশির ভেজা মাঠে ব্যাট করা সহজ ছিল না। কিন্তু ওয়াংখেড়ের সেমিফাইনালে বিরাটকে সরিয়ে নায়ক হলেন বাংলার মহম্মদ শামি (Virat Kohli- Mohammed Shami)। উইকেটের জন্য রোহিতরা যখন মাথা খুঁড়ছেন, তখন ত্রাতা শামির পেস। যতবার ইন্টারভ্যালে এসেছেন ততবার উইকেট নিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডকে শুধু ভাঙলেন তাই নয়, ৭টি উইকেট তুলে নিলেন। নিউজিল্যান্ড শেষ ৩২৭ রানে। ৭০ রানে জিতে ফাইনালে রোহিতরা। তবে নিউজিল্যান্ডও বুঝিয়ে দিল ৩৯৮ রানও তাড়া করা যায় এবং বিপক্ষের শিরদাঁড়ায় হারের শিহরণ জাগানো সম্ভব। ফাইনালের আগেই একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড (৭১১) দখলে রাখলেন বিরাট। শামি ৬টি ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে হলেন সর্বোচ্চ উইকেট দখলকারী। ভারত জিতল। সোজা আমেদাবাদের ফাইনালে উঠে গেল। এসব পিছনে থাকছে। সামনে বিরাট আর শামি (Virat Kohli- Mohammed Shami)। এই এক সেঞ্চুরির জন্য ১০ দিনের অপেক্ষা ছিল। ৫ তারিখে কলকাতার ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে আইডলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ভিকে। ওয়াংখেড়েতে পেরিয়ে গিয়ে শীর্ষে।
এই বিশ্বকাপে বিধ্বংসী মেজাজে রয়েছেন বিরাট। সেটা বোঝা গেল যখন রোহিত আউট হয়ে ফিরলেন। টসে জেতার পর যেমন শুরুর দরকার ছিল, ঠিক সেটাই করেছেন রোহিত-শুভমন। রোহিত অবশ্য ২৯ বলে ৪৭ করে ফিরে গেলেন। তবে গাভাসকরই ঠিক। হিটম্যান কখনও নিজের কথা ভেবে খেলেন না। দরকার ছিল দলকে শক্ত জমির উপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া। সেটাই করে আউট হলেন দলের ৭১ রানে। শুভমন পায়ে টান ধরায় ৭৯ করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে ৮০ নটআউট।
বাকিটা অবশ্য বিরাট আর শ্রেয়সের। বুধসন্ধ্যায় ওয়াংখেড়ে পেল জোড়া সেঞ্চুরি। বিরাট সেঞ্চুরির পর লাফিয়ে উঠেছিলেন। বোঝাই গেল ভেতরে দমচাপা আবেগ আর জেদ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। সেঞ্চুরির পর ব্যাট আকাশে তুলে যথারীতি বাবাকে খুঁজলেন। তারপর গুরু প্রণাম। শচীনও তখন হাসিমুখে হাততালি দিচ্ছেন। উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি স্ত্রী অনুষ্কাও। এমনকি এই ম্যাচে মহা অতিথি ডেভিড বেকহ্যাম শুধু হাততালি দিয়েই দায় সারেননি, এমনকি বিরাট যখন ব্রেকে টিভি ইন্টারভিউ দিতে এলেন, তখন জড়িয়েও ধরলেন।
কিন্তু কেউ ভাবেনি বিরাট, শ্রেয়স কিংবা গিলের মঞ্চেই নিউজিল্যান্ড এভাবে নিজেদের মেলে ধরবে। শুরুর দিকে রানের গড় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচের মধ্যে রেখে খেলছিলেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক উইলিয়মসন-মিচেল জুটি জমে যেতেই নিউজিল্যান্ড চালকের আসনে। ৩০ ওভারের শেষে ভারত আর নিউজিল্যান্ডের স্কোর পাশাপাশি চলছিল। সেই সময় দুটি উইকেট তুলে নিয়েছেন শামি। ড্রিঙ্কসের পর খেলতে নেমেই ছন্দ হারাল নিউজিল্যান্ড। ৬৯ রানে আউট হওয়ার পর গ্লেন ফিলিপকে নিয়ে মিচেল লড়ছিলেন। কিন্তু ফিলিপ আউট হতেই ম্যাচের ভাগ্য পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। বাকিটা ছিল নিয়ম রক্ষার।
আরও পড়ুন- আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা