চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: ছেঁড়া চপ্পল আর ছেঁড়া জিন্স পরে ময়দানে ডালহৌসি ক্লাবে ট্রায়াল দিতে আসা ছেলেটিই আজ বিশ্বজয়ের মঞ্চে। ময়দান জানে মহম্মদ শামির রূপকথার উত্থানের গল্প। রবিবার আমেদাবাদে চোখ থাকবে ময়দানে শামিকে (India vs Australia) চেনানো পর্দার আড়ালে থাকা কুশীলবদের।
বনগাঁর নির্মাল্য সেনগুপ্ত, যিনি ময়দানে অপু নামে পরিচিত, বছর ১৫ আগে শামিকে প্রথম বাংলায় এনেছিলেন। বনগাঁয় অ্যাকাডেমি চালান নির্মাল্য। বলছিলেন, ‘‘শামির জন্য আমরা কতটা গর্বিত সেটা বলে বোঝাতে পারব না। বনগাঁয় ওকে যখন এনেছিলাম এখানে খেপ পর্যন্ত খেলেছিল। কিন্তু আমি ওকে একটা ক্লাবে খেলার ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। ডালহৌসি ক্লাবের কাছে তাই আমি কৃতজ্ঞ। ফাইনালেও শামির কাছ থেকে দুর্দান্ত স্পেল আশা করছি। ও বিশ্বকাপ জিতলে আমারও যে স্বপ্নপূরণ হবে।’’
ময়দানে তারকা পেসারের শুরুর দিনগুলো এখনও চোখের সামনে ভাসছে তৎকালীন ডালহৌসি ক্লাবের কোচ শ্রীমন্ত হাজরার। বলছিলেন, ‘‘অপু আমার কাছে শামিকে যেদিন নিয়ে এল সেদিন ওর চেহারা, পোশাক দেখে একেবারেই প্রভাবিত হইনি। তার উপর ক্লাবের অনুশীলন শেষ হওয়ার পর আসে। আমি চলে যেতে বলি। কিন্তু চলে যাওয়ার সময় আমার কী মনে হল, ওকে কাছে ডেকে নিই। বলেছিলাম, কয়েকটা বল করতে। আশ্চর্য হয়ে যাই, ওর সিম পজিশন আর বোলিং রান-আপ দেখে। এরপর ওকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’ না থেমে বলে চললেন, ‘‘ডালহৌসিতে এক মরশুমে ১৬-১৭টা উইকেট নিয়েছিল। এরপর টাউন ক্লাবের দেবুদা (দেবব্রত দাস) আমার কাছ থেকে শামিকে নেয়। টাউন হয়ে মোহনবাগানে খেলে। দেবুদা নিজের বাড়িতে ওর থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাংলা হয়ে জাতীয় দল (India vs Australia)। স্বপ্নের দৌড়। সেই ছেলেকে এবার বিশ্বকাপে এমন ফর্মে দেখে আমার গায়ে যেন কাঁটা দিচ্ছে। শামির জন্যই বিশ্বকাপটা জেতা দরকার ভারতের। আমিও গর্ব করে বলতে পারব পুরনো ছাত্রের রূপকথার গল্প।’’
লক্ষ্মীরতন শুক্লার মুখে প্রথম তরুণ শামির কথা শুনেছিলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। লুকিয়ে একদিন টাউন-পোর্ট ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন তৎকালীন বাংলার নির্বাচক প্রধান। শামি তখন খেলছিলেন টাউনের হয়ে। সম্বরণের কথায়, ‘‘আমি দেরিতে মাঠে যাই। ততক্ষণে শামি ৪ উইকেট তুলে নিয়েছে। আমি টাউনের কোচকে বলি, ওকে হাওয়ার বিপরীতে বোলিং করাতে। তারপরও ২ উইকেট নেয়। বাংলার ৩০ জনের দলেই ছিল না। ওই বোলিং দেখে শামিকে আমরা প্রথম একাদশে জায়গা করে দিয়েছিলাম। এরপর ওর দৌড় আর থামেনি। ভারত বিশ্বকাপ না জিতলেও আমি চাইব, শামির হাতেই যেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে। বাঙালি না হয়েও যে ও আমাদের ঘরের ছেলে। বড় আপন।’’
আরও পড়ুন- কাপ জিততে চাই কোচের জন্য : রোহিত