“সপ্তম বিজিবিএস-এ অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ৩৭৮২৮৮ কোটি টাকার বেশি লগ্নির প্রস্তাব এসেছে।” নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের মেগা বৈঠক থেকে রাজ্যের শিল্পোন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন তৃণমূল সভানেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (BGBS- Mamata Banerjee)।
বুধবার শেষ হয়েছে দুদিনের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। বিজিবিএস নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার, মেগা বৈঠক থেকে তার কড়া জবাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (BGBS- Mamata Banerjee)। তিনি জানান, “গত ৬টা বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আমরা ১৫ লক্ষ কোটি টাকার প্রজেক্ট পেয়েছি। তার মধ্যে ১০লক্ষ কোটি খরচ হয়েছে”। এর পরেই মমতা জানান, এই বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য তিনি মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিরোধীদের তোপ দেগে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “যাঁরা বলেন শিল্প সম্মেলনে কিছুই হয় না…বলে রাখি, ৬টা শিল্প সম্মেলন থেকে ১৫ লক্ষ কোটির মতো প্রকল্প এসেছে। এর মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি খরচ হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বাকি প্রক্রিয়াগত ভাবে আটকে রয়েছে। একটু জেনে কথা বলুন। কাল সপ্তম শিল্প সম্মেলন হয়েছে। অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছি। ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৮৮ কোটির বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।” বাংলায় গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়েছে, তা দেশের অন্য কোথাও হয়নি।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্র টাকা না দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের জিএসডিপি চার গুণ বেড়েছে। চার গুণ বেড়েছে রাজস্বও। বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৩.৮ শতাংশ। বাজেট বাবদ খরচ ৯ গুণ বেড়েছে। বিনিয়োগ থেকে বাংলায় ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। বিরোধীদের অপপ্রচার উড়িয়ে তৃণমল সুপ্রিমো বলেন, শুধুমাত্র MSME থেকেই ১ কোটি ৩৬ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। ছোট-মাঝারি-ক্ষুদ্রশিল্পে বাংলায় ৯০০ ইউনিট রয়েছে। ৬০২টি নতুন ক্লাস্টার তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন- বিজেপি দুর্নীতিগ্রস্ত, নরকঙ্কালের মালা পরে বসে সিপিএম, বিরোধীদের তুলোধনা দলনেত্রীর
এর পরই বিগত বাম আমলকে তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূল সভানেত্রী বলেন, “সিপিএম-এর কথা বলা মানায়? ৩৪ বছরে ৪৮টি ক্লাস্টার করেছিল ওরা। ১১ বছরে আমরা ৬০২ করেছি। রাজনৈতিক ভাবে ওদের কান মুলে দেওয়া উচিত। মিথ্যে কথা বলার একটা সীমা থাকে।” তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও বাংলায় বিপুল কর্মসংস্থান হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখন তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ২৮০০টি সংস্থায় ২ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। টিসিএস, উইপ্রো, কগনিজ্যান্ট, এরিকসন, ক্যাপসেজিমিনির মতো সংস্থা এয়েছে বাংলায়। বানতলা লেদার কমপ্লেক্সে উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর একাধিক সংস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যেই সেখানে ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আগামী দিনে আরও ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসানসোল-দুর্গাপুরে শেল গ্যাসে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। দেউচা-পাঁচামি হলে বীরভূম, বর্ধমান,পুরুলিয়ার ১ লক্ষ মানুষের চাকরি হবে বলে জানান তৃণমূল সভানেত্রী। পাশাপাশি আগামী ১০০ বছর রাজ্যে কয়লার অভাব থাকবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
এরপরেই রঘুনাথপুরে শিল্পনগরীর কথা উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানান, রঘুনাথপুরে শিল্পনগরীতে বিনিয়োগ হচ্ছে ৭২০০০ কোটি টাকা। ডানকুনি-রঘুনাথপুর, জানকুনি-তাজপুর, ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-দুর্গাপুর, দুর্গাপুর-কোচবিহার- মোট পাঁচটা অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলা হচ্ছে। শিল্পপতিদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ল্যান্ডব্যাঙ্ক তৈরি। কর্মসংস্থানের ছড়াছড়ি হবে বাংলায়। বাড়ি তৈরি করতেও সময় লাগে। আমাদের সব রেডি আছে। যাঁরা বিনিয়োগ করতে চান, চলে আসুন।”