অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : জাতীয় সুরক্ষার ঢাল আর কাজে এল না। কেন্দ্রের চালাকি ধরে ফেলে খোদ দেশের শীর্ষ আদালত বুঝিয়ে দিল, নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতা বিপন্ন হলে চুপ করে থাকা হবে না।
রাষ্ট্রের নজরদারি নিয়ে পাঠকদের হুঁশিয়ার করে দিতে এক ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছিলেন জর্জ অরওয়েল। বলেছিলেন, আপনি যদি কোনও বিষয় গোপন রাখতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই সেটি নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন-ঘুষ-বিতর্কে সমীর
পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তি মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যখন তার রায়ে জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেয়, তখন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী যে কোনও সরকারের জন্য এটি লজ্জাজনক বলে মনে করা উচিত। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে জর্জ অরওয়েলের নাম সেই সমস্ত ভয়কে বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে আসে, যেগুলো সম্পর্কে সরকার অজ্ঞতার ভান করে। আদালত আরও বলেছে, সরকার প্রতিবার জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে বিতর্ক থেকে পালাতে পারে না। আদালত কেবল সরকারের ভাষ্য শুনে ‘নীরব দর্শক’ থাকতে পারে না। বেঞ্চ বলেছে যে আদালতের হস্তক্ষেপ হল সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষা এবং আইনের শাসনকে রাজনৈতিক অলংকারের মোড়কে থেকে বাঁচিয়ে সমুন্নত রাখা। এই মামলায় রায় দিতে গিয়ে আদালত সুপরিচিত আইনজীবী রাম জেঠমালানি এবং ভারত সরকারের একটি মামলার উল্লেখ করেছে। মোদি সরকার যে কায়দায় জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে পেগাসাস সম্পর্কিত সব প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করে তার সমালোচনায় কড়া মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত। এই প্রসঙ্গে ২০১১ সালের রাম জেঠমালানি বনাম ভারত সরকারের কালো টাকা সংক্রান্ত মামলায় যুগান্তকারী রায়ের উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, যখন নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি বিপন্ন হয় তখন সরকারের বিপরীত বা বিরূপ অবস্থান নেওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুন-জামিন আরিয়ানের
আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমের মিলিত তদন্ত পেগাসাস প্রোজেক্ট-এর অংশীদার ভারতের ওয়েব পোর্টাল ‘দি ওয়্যার’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদারাজন বলেছেন, এটা একটা ভাল শুরু। সুপ্রিম কোর্ট সঠিকভাবে সরকারের ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ তত্ত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করেছে।