ছুঁড়ে দেন চ্যালেঞ্জ
আটের দশক। চোখের সামনে ভেসে উঠবে আবার। সেই আটপৌরে দিনগুলো। পাড়া কালচার, নির্ভেজাল আড্ডা, মজা মশকরা, থিয়েটার। স্মৃতিমেদুর হবেন দর্শকেরা। সৌজন্যে পরিচালক ধ্রব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তৈরি করেছেন সাহিত্য-নির্ভর ছবি ‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’ (Bogla Mama Jug Jug Jiyo)। রাজকুমার মৈত্রের গল্প অবলম্বনে। সাহিত্যের পাতার বগলা মামা প্রথমবার বড়পর্দায়। ট্রেলার দারুণ সাড়া জাগিয়েছে। বগলাচরণ ভট্টাচার্য বা বগলা মামা থিয়েটার-অন্তপ্রাণ। অভিনয় ভালবাসেন। পাড়ার ছোটরা তাঁর ভক্ত। তাঁকে ঘিরে মেতে থাকে। তবে সবকিছু সহজে এগোয় না। আসে বাধা। পিছনে এক প্রভাবশালী। বগলা মামা দমে যান না। ছুঁড়ে দেন চ্যালেঞ্জ।
কাঁধে গুরুদায়িত্ব
নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। নিজের চরিত্র সম্পর্কে তিনি জানালেন, বগলা মামা একজন মজার মানুষ। তবে টেনিদা, ঘনাদা, হর্ষবর্ধন গোবর্ধন-এর মতো নন। ওপর চালাকি করতে গিয়ে বোকামি করে ফেলেন। আছে মানবিক দিকও। চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। চরিত্রের মধ্যে রয়েছে বহু স্তর। আপাদমস্তক ভাল মানুষ। শয়তানি নেই। ছোটবেলায় বগলা মামাকে নিয়ে লেখা গল্প পড়েছি। সবগুলো নয়, কয়েকটা। তখনই ভাল লেগে গিয়েছিল। পরিচালক ধ্রব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমি ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ ছবিতে কাজ করেছি। তখনই বলেছিলেন আমাকে নিয়ে আরও একটি ছবি করবেন। তবে আমাকে নামভূমিকায় রেখে ছবি করবেন, স্বপ্নেও ভাবিনি। কারণ আগে কেউ এতবড় সুযোগ দেননি। কাঁধে চেপেছে গুরুদায়িত্ব। প্রাণপণ চেষ্টা করেছি বগলা মামা হয়ে উঠতে। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। ট্রেলার রিলিজের পর থেকেই দারুণ প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। সম্পূর্ণ মজার ছবি। বলা যায়, রঙিন ছবির মোড়কে একটা কালো-সাদা ছবি। ছবি জুড়ে লেগে রয়েছে আটের দশকের গন্ধ। সাফল্য নিয়ে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী।
দর্শকেরা প্রেমে পড়ে যাবেন
একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রজতাভ দত্ত। তিনি জানালেন, আমার চরিত্রের নাম ফেলু আচার্য। ছোটবেলায় বগলা মামার গল্পগুলো পড়েছি। বগলা মামা বা আরও কয়েকটি চরিত্রের কথা মনে ছিল। তবে ফেলু আচার্যের কথা একেবারেই মনে ছিল না। পরে একটি গল্পে ফেলু আচার্যের উল্লেখ পাই। সাহিত্যের উপরে নয়, আমি পুরোপুরি নির্ভর করেছি চিত্রনাট্যের উপর, পরিচালকের উপর। ফেলু আচার্য একজন সমাজবিরোধী। নেই শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাধারণ জ্ঞান। তবে আছে সিংহ-হৃদয়, সারল্য। ভদ্রলোকের সমাজে নিজের জায়গা করে নিতে চান। বিহার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নাটকের প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিবছর সেই প্রতিযোগিতায় নাম দেন। কলকাতা থেকে পরিচালক, অভিনেতা নিয়ে আসেন। তাঁর দলের প্রতিপক্ষ স্থানীয় স্কুলের হেডমাস্টার। জোর টক্কর হয়। ফেলু আচার্য হেরে যান। এই ঘটনায় বোঝা যায় তাঁর মধ্যে শিল্পপ্রেম রয়েছে। যাঁরা শিক্ষিত, শিল্পচর্চা করেন, তাঁদের প্রতি রয়েছে সম্ভ্রম। তিনি বিশ্বাস করেন বগলা মামাকে। কিন্তু বিশ্বাস করে বারবার তাঁর ভরাডুবি হয়। চরিত্রটা নির্মাণ করা হয়েছে মজার মোড়কে। ফুটিয়ে তুলতে পেরে ভাল লেগেছে। আমার ধারণা দর্শকরা ফেলু আচার্যের প্রেমে পড়ে যাবেন। ছবিতে মজার পাশাপাশি আছে প্রেমও। ত্রিকোণ প্রেম। বহুদিন পর এইরকম একটি ছবি তৈরি হল।
আরও পড়ুন-গেরুয়াকরণ হল ভারত বিভাজনের হাতিয়ার
অলীক স্বপ্ন সিনেমায় রূপান্তরিত
কথা হল পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তিনি জানালেন, এর আগে আমি অ্যাডভেঞ্চার, পিরিয়ড স্পোর্টস ড্রামা, থ্রিলার এক্সপেরিমেন্টাল বানিয়েছি। এখনও পর্যন্ত নিজেকে রিপিট করিনি। এবার বানালাম বিশুদ্ধ হাসির ছবি। বগলা মামার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় স্কুলে পড়ার সময়। ‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’ (Bogla Mama Jug Jug Jiyo) গল্পটির মাধ্যমে। সেটা পড়ে খুব হেসেছিলাম। তখনই ভেবেছিলাম, যদি কখনও ফিল্ম মেকার হই, বগলা মামা নিয়ে ছবি তৈরি করব। আমি সেই ভাগ্যবান, যার ছোটবেলার অলীক স্বপ্ন সিনেমায় রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে এটা একেবারেই হঠাৎ ভাবা ঘটনা নয়। ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ শ্যুট করার সময় খরাজদাকে বলেছিলাম, আবার একসঙ্গে কাজ করার কথা ভাবছি। সেটা যে এই ছবিটা, তখন বলিনি। কঠিন চিত্রনাট্য। লিখতে সময় লেগেছে। মূল গল্প থেকে আদলটুকু নিয়েছি। যাঁরা গল্পটা পড়বেন এবং সিনেমাটা দেখবেন, তাঁরা বুঝবেন, খলনলচে বদলে এটা সিনেমার জন্য লেখা একটা গল্প হয়ে গেছে। তবে আমার মূল অনুপ্রেরণা রাজকুমার মৈত্রের আসল গল্পটাই। সেটা ছিল বলেই এটা তৈরি করা গেছে। বাংলা সিনেমায় কমেডির একটা ধারা ছিল। আমরা দেখেছি ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘মৌচাক’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘দাদার কীর্তি’। তারপর সেই রকম হাসির ছবি খুব বেশি হয়নি। আমি পুরনো ধারাটাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। সেই আটের দশক। অনেকের বড় হওয়ার সময়। আজ যারা ইয়ং, তারা সেই সময়টার কথা জানতে পারবে ছবিটা দেখে। তারা জানবে তখন মানুষের মধ্যে কতটা সারল্য ছিল, চাহিদা ছিল কম, গুরুত্ব ছিল সম্পর্কের। জানবে বাঙালি ছিল স্মৃতিমেদুর, ভালবাসা ছিল নাটক-থিয়েটারের প্রতি। জানবে পাড়া, পরিবার, মানুষ— সকলকে নিয়ে বাঙালির নিজস্ব পৃথিবীর আমেজ ছিল কত মধুর। সবমিলিয়ে একটা হারিয়ে যাওয়া সময়। আমার কেরিয়ারের সবথেকে শক্ত এবং আনন্দের ছবি। জড়িয়ে রয়েছে আবেগ। আশা করি দর্শকদের ভাল লাগবে।
অন্যান্য চরিত্রে
খরাজ মুখোপাধ্যায়, রজতাভ দত্তের পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৌশিক সেন, অপরাজিতা আঢ্য, পার্থসারথি দেব, দিতিপ্রিয়া রায়, উজান চট্টোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন প্রমুখ। সুরারোপ করেছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, চিত্রগ্রাহক সৌমিক হালদার, সম্পাদক সংলাপ ভৌমিক। শ্যুটিং হয়েছে বোলপুর এবং কলকাতায়। জিও স্টুডিয়ো এবং এসভিএফ প্রযোজিত ছবিটি বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে আজ।