১৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ আগামী শুক্রবার থেকে রাজ্যে শুরু হতে চলেছে চলতি বছরের শেষ ‘দুয়ারে সরকার’ (Duare Sarkar) কর্মসূচি। এই দুয়ারে সরকার কর্মসূচি থেকে মোট ৩৬ টি পরিষেবা পাওয়া যাবে। দুয়ারে সরকার কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী বুধবার সমস্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের সচিবরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দুয়ারে সরকার কর্মসূচি সফল ভাবে পরিচালনা করার জন্য মুখ্যসচিব বৈঠকে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন বলে নবান্নে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।
উত্তরবঙ্গের একাধিক প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। জাতিগত শংসাপত্র ভুয়ো সার্টিফিকেট হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তার প্রেক্ষিতে এদিন মুখ্যসচিব জাতিগত শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম মেনেই জাতিগত শংসাপত্র বিলি করতে হবে বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতিগত শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে বিশেষ নজরদারি রাখার তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। যে সব আদিবাসীদের জাতিগত শংসাপত্র নেই তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করতে হবে। যোগ্যরা যাতে কোনও ভাবেই শংসাপত্র থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। দুর্গম এলাকায় ভ্রাম্যমান শিবিরের সংখ্যা বাড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে যাতে কোনও রকম আবেদনপত্র জেরক্স করে বিলি না করা হয় তা নিয়েও জেলাশাসকদের সতর্ক করেন মুখ্যসচিব। দুয়ারে সরকার শিবিরে সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চোখের আলো প্রকল্পের শিবিরেরও আয়োজন করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মুখ্যসচিব নির্দেশ দিয়েছেন। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশকেও বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- সংসদের গ্যালারি থেকে চেম্বারে ঝাঁপ দিল ২ জন, স্প্রে করা হল গ্যাস
চলতি বছরের শেষ দুয়ারে সরকার (Duare Sarkar) কর্মসূচি আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই প্রকল্পে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের কাছে প্রান্তে ক্যাম্পে করে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে, রবিবার এবং ছুটির দিনে বন্ধ থাকবে এই শিবির। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড’-সহ একাধিক প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন রাজ্যবাসী। এইবার দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে বার্ধক্য ভাতা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম রেজিস্ট্রেশন করার সুবিধা যুক্ত করা হচ্ছে।
পাশাপাশি আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পরিষেবা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে রাজ্য স্তরে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে বলে নবান্ন থেকে জারি করা এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। গোটা বিষয়টি দেখভালের জন্য ৪০ জন বরিষ্ঠ আইএএস আধিকারিককে নিয়োগ করার পাশাপাশি রাজ্য, জেলা ও ব্লক স্তরে মোট ৪৭৩টি কন্ট্রোল রুম খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গ্রামীন এলাকাগুলিতে শিবিরের সময় সব দিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মোট এক লক্ষ শিবিরের মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় ৪০ শতাংশ ভ্রাম্যমান শিবির আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। প্রথম দফায় আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত চলা এইবারের শিবির থেকে ১৮টি দফতরের মোট ৩৬ টি পরিষেবার সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন করা যাবে। শিবিরে কোন প্রকল্পে আবেদনের জন্য জেরক্স করা আবেদন পত্র বিলি করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে একটি টোল ফ্রি হেল্প লাইন খোলা হয়েছে যার নম্বর ১৮০০ ৩৪৫ ০১১৭ । এর আগে সাতটি দুয়ারে সরকার শিবির কর্মসূচী থেকে আট কোটির বেশি মানুষকে পরিষেবা দেওয়া হয়েছে বলে সরকারিভাবে দাবি করা হয়েছে।