প্রতিবেদন : সংসদে (Parliament) হামলার জেরে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদে কোণঠাসা বিজেপি সরকার। বিরোধীদের ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্নের সামনে অসহায় অবস্থায় দেখা যাচ্ছে বিজেপি সাংসদদের। লোকসভার স্পিকার প্রশ্নবাণ ঠেকাতে না পেরে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ ১৫ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করেছেন। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বিরোধীদের লাগাতার প্রতিবাদ চাপের মুখে বিজেপি সরকারের যাবতীয় ডিফেন্স ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাবদিহিতে অনড় বিরোধীরা এই প্রেক্ষাপটে বিজেপিকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকে গোটা শীতকালীন অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করেছেন অধ্যক্ষ। যার জেরে সংসদ চত্বরেই পোস্টার হাতে নীরব প্রতিবাদে নেমেছিলেন ডেরেক। আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নীরব প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন তিনি। দলীয় সাংসদের সাসপেনশনের প্রতিবাদে দিল্লি থেকে কলকাতা উত্তাল করে দেন তৃণমূলের সাংসদ ও নেতা-নেত্রীরা। ব্যর্থ গোয়েন্দা দফতর ও এজেন্সি কর্তাদের বাঁচাতে সংসদের ৮ নিরাপত্তার আধিকারিককে সাসপেন্ড করে দায় সারা হয়েছে। গোটা ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে কলকাতা প্রতিবাদে উত্তাল থেকেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের দুই সাংসদ দোলা সেন ও কাকলি ঘোষদস্তিদার সংসদ (Parliament) চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, সংসদের নিরাপত্তা নেই। অথচ সাংসদরা আওয়াজ তুলতে গেলেই তাঁদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। সংসদের মতো জায়গায় সাংসদদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আবার সেই বিষয়ে সংসদের অধিবেশনে আলোচনা চাইলে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে বিরোধী দলের সাংসদদের উপর। কলকাতাতেও তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপির ঘৃণ্য রাজনীতি ও তুঘলকি আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মন্ত্রী শশী পাঁজা ও দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের সাফ বক্তব্য, যে বিজেপি সাংসদের পাস নিয়ে হামলাকারীরা সংসদে ঢুকল সেই সাংসদ দিব্বি ভিতরে বসে আছেন। আর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা মাত্রই বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করা হল। কতোটা নির্লজ্জ হলে একাজ করা যায়। আসলে নিজেদের পাপ ঢাকতে এছাড়া আর কোনও উপায় নেই বিজেপির। কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচে তৈরি নয়া সংসদ ভবনে নিরাপত্তার চূড়ান্ত গাফিলতির যে নজির গোটা দেশ দেখল তার থেকে নজর ঘোরাতে মরিয়া বিজেপি। তাই যতরকমের অস্ত্র আছে তা প্রয়োগ করছে তারা।
আরও পড়ুন- আজ সংসদে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ দেখাবে ‘ইন্ডিয়া’
দলের বক্তব্য, হাজার কোটির নয়া সংসদ ভবনেরও নিরাপত্তা শিকেয়। থাকার কথা ৩০১ নিরাপত্তাকর্মীর। বুধবার ছিলেন ১৭৬জন। দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রকাশ্যে এসে বিবৃতি দিন প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা নিয়ে দলবাজি, ব্যর্থ গোয়ান্দা বিভাগ। এর বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে তৃণমূলের সাংসদরা।
বুধবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানান তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। অন্যান্য বিরোধী সাংসদরা তাঁকে সমর্থন জানান। কিন্তু আলোচনার জন্য রাজি ছিল না শাসকদল বিজেপি বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়। ওয়েলে নেমে এ-বিষয়ে দাবি জানাতেই ডেরেককে বাধা দেন অধ্যক্ষ। নিজের দাবিতে অনড় থাকায় এরপরেই শীতকালীন অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য তৃণমূল সাংসদ ডেরেককে রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়। এই ঘটনায় প্রতিবাদে ফেটে পড়ে তৃণমূল সাংসদরা। তাঁদের সঙ্গ দেন বিরোধী সাংসদরাও।
জানা গিয়েছে, সংসদে হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা করা হয়েছে। সবদিক খোলা রেখেই তদন্ত চালানো হচ্ছে। এই ঘটনার মূল পাণ্ডা কে বা কারা তাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সাফ বক্তব্য, নিরাপত্তার ব্যর্থতা ঢাকতে কোনও অবস্থাতেই যেন নজর ঘোরানোর চেষ্টা না করে বিজেপি সরকার। যেখানে মহুয়া মৈত্র লগইন পাসওয়ার্ড শেয়ার করেছিলেন বলে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেখানে বিজেপি সাংসদের দেওয়া পাশ নিয়ে হামলা চালানোর পরেও এখনও পর্যন্ত তাকে বহিষ্কার বা ন্যূনতম জিজ্ঞাসাবাদ কেন করা হল না?