প্রতিবেদন : তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামা লিখিত আকারে আপলোড হতেই স্পষ্ট হয়ে গেল আসলে শীর্ষ আদালত এই মামলায় ঠিক কী বলতে চেয়েছে। এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে কালিমালিপ্ত করতেই শীর্ষ আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-পরিবর্তনের পরামর্শ দিতে হবে ডিসেম্বরের মধ্যে, দ্রুত চালু করতে চায় সংসদ
কুৎসাকারীরা শীর্ষ আদালতের স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া আইনি ব্যাখ্যাকে নিজেদের রাজনৈতিক ব্যাখ্যায় পরিণত করে অভিষেক ও তৃণমূল কংগ্রেসকে হেয় করতে মাঠে নেমেছে। এর সূত্র ধরে এক শ্রেণির মিডিয়াও কুৎসাকারীদের সঙ্গে তুর্কিনাচন নেচে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছেন অভিষেক। হেডলাইন তো হল কিন্তু আসল আইনি ব্যাখ্যা কোথায়? এখন যে অর্ডার আপলোড হয়েছে তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট বলছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে যে আবেদন করা হয়েছিল সেই সংক্রান্ত বিষয় আগেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ হয়েছিল। ২০২৩-এর ৫ অক্টোবর ডিভিশন বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিল, ২০২৩-এর ৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাতেই সিলমোহর দেয়। ৫ অক্টোবরের রায়ে ডিভিশন বেঞ্চ ঠিক কী বলেছিল? সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, কোনও একটি তদন্ত যখন একজন সিঙ্গল বিচারপতি মনিটর করছেন তখন তিনি এমন কোনও অবাঞ্ছিত মন্তব্য করবেন না যা ওই তদন্তকে প্রভাবিত করে। এবং যার বিরুদ্ধে এই তদন্ত চলছে বা যাকে সামন করা হয়েছে তার সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হয়। সঙ্গে এও বলা হয়, আদালতের প্রচেষ্টা থাকবে তদন্ত হবে নিরপেক্ষ এবং দ্রুত। সর্বপরি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে তদন্তকারী সংস্থাকে আদালতে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তদন্তকারী সংস্থা ঠিকমতো তথ্য জোগাড় করবে, তা বিশ্লেষণ করবে তারপর ফাইনাল রিপোর্ট আদালতকে দেবে।
আরও পড়ুন-ঠিক যেন কেকে’র স্মৃতি! মঞ্চে গান গাইতে গাইতেই মৃত ব্রাজিলের গায়ক
এখানেই শেষ নয়, দেখা যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট বলছে গত ১৫ ডিসেম্বরের একটি অর্ডারে সুপ্রিম কোর্ট আদালতের ভুমিকা ও হস্তক্ষেপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ৬টি মামলার জাজমেন্টের কথা উল্লেখ করছেন। সেগুলি কী?
১. পি চিদম্বরণ বনাম ডাইরেক্টরেট অফ এনফোর্সমেন্ট (২০১৯) ৯ এসসিসি ২৪
২. স্টেট অফ ওড়িশা বনাম উজ্জ্বলকুমার বর্ধন (২০১২) ৪ এসসিসি ৫৪৭
৩. ডাইরেক্টর, সিবিআই বমান নিয়ামা ভেদি (১৯৯৫) ৩ এসসিসি ৬০১
৪. ভেঙ্কট সুব্রমণ্যম বমান এমকে মোহন কৃষ্ণমাচারি (২০০৯) ১০ এসসিসি ৪৮৮
৫. ভারত সরকার বনাম প্রকাশ পি হিন্দুজা (২০০৩) ৬ এসসিসি ১৯৫
৬. নীহারিকা ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রা.লি. বনাম মহারাষ্ট্র সরকার এবং অন্যান্য, এআইআর ২০২১ এসসি ১৯১৮, ২০২১ এসসিসি অনলাইন এসসি ৩১৫
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এরপরে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে বলছে, আমরা জানাতে চাই আদালত যখন কোনও নির্দেশনামা দেবে তখন তা ভাসা ভাসা হবে না। তা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ হতে হবে। সেই নির্দেশ অবশ্যভাবে তদন্তকারী সংস্থা-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে মানতে হবে। এই অর্ডার যদি কারও পছন্দ না হয় বা কেউ যদি মনে করেন তার প্রতি বা সংস্থার প্রতি যথাযথ বিচার হয়নি তবে সেই ব্যক্তি বা সংস্থা ওই অর্ডার চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। এখানেই আসল বিষয়টি লুকিয়ে আছে। সেটি কী? সুপ্রিম কোর্ট বলছে, বর্তমান আবেদনের ভিত্তিতে অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে আবেদন করেছেন তার ভিত্তিতে নতুন কোনও নির্দেশ আমরা দিচ্ছি না। অভিষেকের কোনও বক্তব্য থাকলে বা তিনি এবিষয়ে আরও কিছু বলতে চাইলে, পছন্দ না হলে তিনি সরাসরি কলকাতা হাইকোর্টের বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন পুনরায় আমাদের কাছে আসার আগে। বিশিষ্ট আইনজীবী ও দলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেব সুপ্রিম কোর্টের আপলোড করা অর্ডারের আইনি ব্যাখ্যা করে বলেন, তদন্ত নিয়ে নাড়াচাড়া করার আগে আদালতের কী ভূমিকা (রুল) হওয়া উচিত তা ৫-১০-২০২৩-এর ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। এই অর্ডারের ভুল ব্যাখ্যা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের নামে কুৎসা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এই অর্ডারকে ভাল করে বুঝতে হলে ৫-১০-২০২৩-এর অর্ডারকে ভাল করে পড়তে হবে। একইসঙ্গে ৮-১২-২০২৩-এর অর্ডারও পড়তে হবে। এই দুটি অর্ডার পড়ে বা না পড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে কালিমালিপ্ত করতে মিডিয়ার সামনে যা খুশি তাই বলা হচ্ছে। আসলে আপলোড করা এই অর্ডার প্রমাণ করে দিল বিরোধী কুৎসাকারীরা কতখানি ঘৃণ্য রাজনীতি করছে। এবার কী বলবে তারা?