প্রতিবেদন : দিনরাত এক করে সকাল-সন্ধ্যা তাঁরা মুখ বুজে সংসারের ঝড়-ঝাপটা সামলান। পরিবারের বাকি সদস্যদের তাঁরা বুঝতেই দেন না তাঁদের কত ত্যাগে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের গতিতে কিছুটা খামতি এলেও তাঁরা সংসারের সবাইকে ভাল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান। হয়তো কেউ কখনও জানতেও চায় না, হাড়ভাঙা ওই পরিশ্রমের পারিশ্রমিক কী? অন্যদের ভাল রাখতে যিনি নিরলস শ্রম দিচ্ছেন, তাঁর পরিশ্রমের মূল্য কতটা?
এবার কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ, গৃহবধূদের বেকার বলা যাবে না। তাঁরাও স্বোপার্জনকারী। সংসারে তাঁরা দিনরাত কাজ করেন, আর সেই কাজের মূল্যও রয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৫ বছরের পুরনো একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের বেঞ্চ রায় দেওয়ার সময় এমনই মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্পে রূপায়ণে বিশেষ সাফল্য, রাজ্যকে ইনসেনটিভ কেন্দ্রের
এদিন গৃহবধূদের উপার্জন প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, কেন বলা হচ্ছে, গৃহবধূরা বেকার? সংসারে গৃহবধূদের অবদান অনেক বড়। তাঁরা কোনও ছুটি না নিয়ে সারা বছর সংসারের যাবতীয় কাজ করেন। একই কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করালে যে খরচ হত, তা ব্যয় করতে হয় না ওঁদের দৌলতেই। তাই সংসারে ওঁদের কাজের আর্থিক মূল্যও রয়েছে। আর সেই জন্যই গৃহবধূদের বেকার বলা যাবে না। তাঁদেরকেও উপার্জনকারী হিসাবেই দেখতে হবে। এই মামলায় এক গৃহবধূর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
২০০৮ সালের এপ্রিল মাস। বর্ধমানের ক্ষীরগ্রামে পথ দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছিল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস ধরার সময় বাস স্ট্যান্ডের সামনেই তাঁকে পিষে দিয়ে চলে যায় একটি বাস। এই ঘটনায় বর্ধমানের মোটর অ্যাকসিডেন্ট ক্লেম ট্রাইব্যুনালে মামলা করে তাঁর পরিবার। ক্ষতিপূরণ হিসাবে দাবি করা হয় ৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু ওই সংস্থা এই দাবি মানতে চায়নি। বর্ধমানের ওই পরিবারটিকে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেয় সংস্থাটি। এরপরই পাল্টা ওই গৃহবধূর পরিবার হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলাকারীর আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ২০০৮ সাল থেকে ওই গৃহবধূর সম্ভাব্য উপার্জনের হিসাব দিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে, সংস্থার যুক্তি ছিল, যিনি মৃত তিনি কোনও উপার্জন করতেন না। তিনি একজন গৃহবধূ। তবে তাঁর সম্ভাব্য উপার্জন হিসাবে এত টাকা চাওয়া হয় কী করে! এরপরই হাইকোর্ট (Calcutta High Court) নির্দেশ দেয়, মৃত গৃহবধূর পরিবারকে ৬ লক্ষ ৪১ হাজার ২০০ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে হবে। ওই গৃহবধূর প্রতি মাসের সম্ভাব্য বেতন ৩০০০ টাকা হিসাবে ধরে তার উপর সুদের হার হিসাব করেই এই টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আদালত।