প্রতিবেদন : নজরদারি ইস্যুতে মোদি সরকারের পর্দাফাঁস করল আন্তর্জাতিক রিপোর্ট। পেগাসাস নিয়ে কেন্দ্র যে মিথ্যাচার করেছিল তা এই রিপোর্টেই প্রকাশিত হয়েছে। এমনকী গ্রাহকদের আগাম সতর্ক করায় রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুর মুখে পড়তে হয়েছে সংশ্লিষ্ট মোবাইল সংস্থাকেও।
আরও পড়ুন-মাথায় ব.ন্দুক ঠেকিয়ে প্রতি.বাদী গায়ককে অপ.হরণ, ফের শিরোনামে বিজেপির মণিপুর
ইজরায়েলি পেগাসাস স্পাইওয়্যারকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করে সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিরোধী নেতানেত্রীদের ফোন হ্যাকিং করেছিল মোদি সরকার। সেই কারণেই তখন অ্যাপেলের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। পরে আক্রান্ত ফোনগুলি পরীক্ষা করে দেখা যায় পেগাসাস নামের ইজরায়েলি সফ্টওয়্যার ব্যবহার হয়েছিল এই হ্যাকিংয়ের উদ্দেশ্যে, যা শুধুমাত্র কোনও সরকারকেই বিক্রি করতে পারে ইজরায়েলি সংস্থা। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত হ্যাকিং যে হয়েছিল সেই বিষয়টি এবার নিশ্চিত করল মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়াশিংটন পোস্টের যৌথ তদন্ত। তবে বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি। এই নজরদারির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর মোদি সরকারের রোষানলে যে পড়তে হয়েছে অ্যাপেল সংস্থাকে, তাও উঠে এসেছে। অ্যাপেলের ‘অপরাধ’, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হ্যাকিংয়ের সতর্কবার্তা কেন পাঠানো হয়েছিল গ্রাহকদের ফোনে? অর্থাৎ গোপন নজরদারির বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতন করাতেই কেন্দ্রের কোপে পড়তে হয় অ্যাপেলকে।
আরও পড়ুন-ভারতের সংসদীয় রাজনীতিতে কি তবে হিটলারের প্রত্যাবর্তন?
পেগাসাস প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাংবাদিক ও বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের উপর মোদি সরকারের নজরদারির চেষ্টা ফাঁস হয়ে গিয়েছিল অ্যাপেলের সতর্কবার্তায়। যেখানে গ্রাহকদের কাছে অ্যাপেলের তরফে বার্তা আসে ‘আপনার ফোনটি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত হ্যাকিংয়ের নিশানা হয়েছে’। অভিযোগ, এরপর প্রথমে অ্যাপেলের ভারতীয় কর্তাকে তলব করে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন ওই সতর্কবার্তা আইফোনের গ্রাহকদের পাঠানো হয়েছে, তার জবাবদিহি চাওয়া হয়। ওই কর্তা জানান, বিষয়টি আইফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অঙ্গ। গ্রাহককে এই পরিষেবা দেওয়া আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির কোম্পানিটির ব্যবসায়িক নীতি, যা বদলানো তাঁর মতো আঞ্চলিক কর্তার পক্ষে অসম্ভব। এরপর অ্যাপেলের সদর দফতরে তলব করে শীর্ষকর্তাকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁর উপর চাপ দেওয়া হয় এমন কোনও সতর্কবার্তা ভারতীয় গ্রাহকদের না দেওয়ার জন্য। ওই কর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ভারত সরকারের প্রতিনিধিরা বৈঠকে তাঁর উপর অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচণ্ড রাগ দেখান, উচ্চকণ্ঠে নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকিও দেওয়া হতে থাকে। হুমকির মুখে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের ওই শীর্ষকর্তা সাফ জানান, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত হ্যাকিংয়ের কোনও সকর্কবার্তা গ্রাহকদের দেওয়া যাবে না। অ্যাপলের কর্তা জানিয়েছেন, তিনি ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে কোম্পানির নীতি, গ্রাহকদের সাইবার নিরাপত্তার অধিকার এবং আইনি অধিকার সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান সরকারের প্রতিনিধিদের জানান। বিশ্বের ১৫০টি দেশে অ্যাপলের আইফোন ব্যবহার হয়, কোনও দেশের সরকার ওই বিষয়টি নিয়ে যে আপত্তি প্রকাশ করেনি, সে কথাও ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের বলা হয়। তার পরেও ভারতের অ্যাপেলকর্তাকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন-তফসিলিদের জন্য আইআইটির বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির রাজ্যের
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিক, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মীদের উপর নজরদারি চালাতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ফাঁস হওয়া নথিগুলিতে দেখা গিয়েছে, প্রায় ১৩০০টির বেশি ভারতীয় ফোন নম্বরে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার অবৈধ নজরদারি পরিচালনার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকে। এমনকী জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি সামনে রেখে অভিযোগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের তদন্তে সহযোগিতা করতেও অস্বীকার করে। জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। তবে মোদি সরকার যে নজরদারি চালিয়েছিল তার স্পষ্ট প্রমাণ মিলল এবার।